• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০১৯, ০৮:২০ পিএম

স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে চাই সবাইকে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে চাই সবাইকে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন

 

অনেক স্বপ্ন তাঁর। আছে দীর্ঘ কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতাও। এবার মন্ত্রী হওয়ায় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার দুয়ারও খুলেছে। এখন শুধু দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার পালা। এই অগ্রযাত্রায় সবাইকে পাশে চান তিনি। কাজ করতে চান একযোগে।

মন্ত্রী হয়ে সিলেটে প্রথম এসে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার (১৫ জানুযারি) বিকেলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে দেয়া সংবর্ধনার জবাবে এমন প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন সিলেট-১ আসনের এ সাংসদ। নগরীর জেল রোডস্থ চেম্বার মিলনায়তনে জনাকীর্ণ এ সংবর্ধনা সভায় সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে সিলেট নিয়ে অনেক উদ্যেগের কথা তুলে ধরেন মোমেন। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেছে। বড় জয় উপহার দিয়েছে আমাকে। এই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আগামী পাঁচ বছর কাজ দিয়েই এই ঋণ আমি শোধ করতে চাই।  একটি উন্নত জনপদ হিসেবেই আগামীর  সিলেটকে দেখতে চাই। সবাই পাশে থাকলে প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব।

ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি অর্থনৈতিক কুটনীতি গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিপুল ভোটে নির্বাচিত করায় সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি জনগনের যে প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষ আবারও শেখ হাসিনা ও তার দলকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে।  

বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, তাদের উত্তরসুরী হিসেবে আমি যেন সফল হতে পারি, দেশ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি সেজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। 

তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে সব সূচকে উন্নত ও ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চাই। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ২০২০ সালে জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতবার্ষিকী সহ বিভিন্ন কর্মসূচি আমাদের সামনে রয়েছে। তাই সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সফলতার সাথে আমার দায়িত্ব যাতে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ড. মোমেন আরো বলেন, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ৫ জন সংসদ সদস্য মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন। এবার সবচেয়ে বড় সুযোগ আমাদের সামনে। আশা করি বড় প্রত্যাশা অর্জনে আমরা সক্ষম হবো।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের সব প্রত্যাশার কথা মন্ত্রীর জানা আছে। আমরা সম্মিলিতভাবে সিলেটকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো এবং সিলেটকে একটি মডেল ও শান্তির নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো।

সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। তার অগ্রযাত্রায় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বর্তমান সরকার বিগত দিনের মতো ব্যবসায়ীদের কল্যাণ, ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতিতে কাজ করে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন সিপার।

তিনি বলেন, জাতিসংঘে ড. মোমেনের দায়িত্ব পালনকালে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। আশাকরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণে আপনার কর্মতৎপরতায় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। আপনার পরিকল্পিত, আলোকিত ও উন্নত সিলেট গড়তে সিলেট চেম্বার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে।  

তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ ও নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, বিদেশিদের অনএরাইভ্যাল ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধিকরণ, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু, রেলসেবার মান উন্নয়ন ও সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-ঢাকা রুটে আধুনিক এসি কোচ সংযোজন, শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সিলেট শ্রম আদালত দ্রুত স্থাপন সহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন।      

সংবর্ধনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির, কাস্টম্স, এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট এর কমিশনার গোলাম মো. মুনীর, কর কমিশনার আবুল হান্নান দেলোয়ার হোসেন, সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বিজিত চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ, পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. আসলাম উদ্দিন, কাস্টমস এর যুগ্ম কমিশনার মো. মিনহাজ উদ্দিন পাহলোয়ান, যুগ্ম কর কমিশনার শাহেদ আহমদ চৌধুরী, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ এফতার হোসেন পিয়ার, বিডা’র সহকারী পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শরফুদ্দিন, সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী, সহ সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন, পরিচালক মো. হিজকিল গুলজার, জিয়াউল হক, মো. সাহিদুর রহমান, পিন্টু চক্রবর্তী, নুরুল ইসলাম, মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ভূট্টো), মুশফিক জায়গীরদার, পরিচালক আমিরুজ্জামান চৌধুরী, এহতেশামুল হক চৌধুরী, মুকির হোসেন চৌধুরী, আব্দুর রহমান, চন্দন সাহা, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মো. আব্দুর রহমান (জামিল), পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ, মুজিবুর রহমান মিন্টু, সিলেট কাস্টম্স এর সহকারী কমিশনার মো. জাকারিয়া ও মো. আহসান উল্লাহ, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমেদ সেলিম এবং প্রেস ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ ও সিলেট চেম্বারের সদস্যবৃন্দ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে সংবর্ধনা প্রদান করেন দলীয় নেতাকর্মীরা

সিলেট-১ আসনের এ সংসদ সদস্য আজ বেলা দেড়টার দিকে নিয়মিত একটি ফ্লাইটে সিলেট এসে পৌঁছান। মন্ত্রী হিসেবে এটি তাঁর প্রথম সিলেট সফর। মোমেন আসছেন এই খবরে সকাল থেকেই সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে অবস্থান নেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সেখানে ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। পরে একটি মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা হয় এয়ারপোর্ট থেকে। কয়েক শতাধিক মটর সাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন নেতাকর্মীরা। এয়ারপোর্ট থেকে মোমেন প্রথমেই  আসেন হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে। সেখানে জিয়ারত শেষে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখান থেকে যান হজরত শাহ পরান (র.) মাজার জিয়ারতে। মজার জিয়ারত শেষে মোমেন তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে যাবেন জিয়ারত করতে। সেখান থেকে ফেরেন নিজ বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে। বিকেলে যোগ দেন চেম্বারের সংবর্ধনায়।

এবার প্রথমবারের মতো সরকারের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ড. এ কে  আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া চতুর্থ সিলেটি মন্ত্রী হলেন তিনি। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সিলেট বিভাগরে কৃতিসন্তান প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ,  হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী। আর ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন সিলেটের আরেক কৃতিসন্তান ইফতেখার আহমদ চৌধুরী।  

ড. মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত সিলেটের মানুষ। তার এই অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংবর্ধনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

টিএফ