• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২১, ০৭:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৪, ২০২১, ০৭:২৯ পিএম

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে দূরপাল্লার বাস

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে দূরপাল্লার বাস

কয়েক দফা বিধিনিষেধ শেষে অবশেষে দূরপাল্লার বাস চালু হয়েছে। সোমবার সকালে রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম দিনে বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রী সংখ্যা অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটা কম। তবে স্বাস্থ্যবিধির ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে চালক, কাউন্টারে দায়িত্ব থাকা ব্যক্তি ও পরিবহন কর্মীরা।

স্বাস্থ্যবিধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। চালক, শ্রমিক ও পরিবহন কর্মীরা দাবি করেন, সরকার যেন আর দূরপাল্লার বাস বন্ধ না করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দূরপাল্লার বাস চালাতে চান।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি গাড়িতে চলছে কঠোর তদারকি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে চলছে ভ্রাম্যমান আদালত।

গাবতলী থেকে ফরিদপুরে যাচ্ছেন শাপলা পরিবহন। ওই পরিবহনের এক টিকেট বিক্রেতা বলেন, “প্রথম দিনে যাত্রী একটু কম। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ফ্রিতে গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক দিচ্ছি। নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি ১০০% মানার চেষ্টা করছি। দুই সিটে একজন করে নিচ্ছি। ভাড়া সরকার নির্ধারিত ৬০% রাখা হচ্ছে।”

সূর্যমূখী পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, “প্রথম দিনে যাত্রী একেবারেই কম। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের নিচ্ছি। ফ্রি মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি।”

এছাড়া যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো হয়রানি বা বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ শোনা যায়নি। মো. সুমন বিশ্বাস নামে এক যাত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা পাইনি। সরকারি লোকজন মাস্ক দিচ্ছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছে, কোনো সমস্য নেই। ভালোভাবে যাচ্ছি।”

গাবতলী থেকে কুষ্টিয়া যাচ্ছেন ‘উত্তরা ইউনিক’ নামে একটি পরিবহন। ওই পরিবহনের চালক বলেন, “আমরা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানছি। কিন্তু আমাদের যাত্রী নেই। ৬ জন যাত্রী নিয়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছি।”

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চললেই হবে। না হয় আমাদের প্রত্যেক ড্রাইভার ও স্টাফের অবস্থা যে খারাপ হয়েছে, বন্ধ হয়ে গেলে আরো খারাপের দিকে যাবে।”

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “গাড়ি বন্ধ থাকায় গত দুই মাস ধরে কষ্টের কোনো সীমা ছিল না। আমাদের ড্রাইভার, স্টাফ সবার কাছে আজকে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ায় বুকভরা আনন্দ ভেসে উঠেছে। যেন ঈদে লেগে গেছে। গাড়ি চালু হওয়ায় সারাদেশে মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। শুধু আমাদের একা না, সবারই কষ্ট দূর হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ১০ টাকাও অনুদান পাইনি। আমাদের কোম্পানি থেকে কিছুটা সহযোগিতা করছে সেটা দিয়ে কোনোরকম ঈদ করেছি।”

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কোম্পানি বলেছে, স্বাস্থ্যবধি না মানলে আমাদের গাড়ি বন্ধ করে দিতে বলেছে।”

দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মো. জাবেদ বলেন, “আমরা প্রত্যেক গাড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। ড্রাইভার, হেলপার, যাত্রী সবাইকে চেক করছি স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না? হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক দিচ্ছে কি না? সিটে একজন করে লোক বসছে কিনা?—এগুলো আমরা তদারকি করছি এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টও আছে।

বাংলাদেশে বাস-ট্রাক মালিক সমিতির অফিস কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আমাদের প্রচারকেন্দ্র আছে। ওখান থেকে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। প্রতি কাউন্টারে মাস্কের বক্স রাখতে নির্দেশ দেওয়া আছে। মাস্ক না থাকলে মাস্ক ফ্রি দেওয়া হচ্ছে, গাড়িতে উঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি তদারকি করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ১৫-২০ জন লোক তদারিক করছেন। ৬০%-এর বেশি ভাড়া নিলে আমরা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।”

ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, “বিভিন্নভাবে এ কথাগুলো চলে এসেছে যে, দূরপাল্লার গাড়িগুলো যদি চলে তাহলে করোনা বেড়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেছে, কয়েকগুণ বেশি টাকায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল দিয়ে যাত্রী টানছে ও স্বাস্থ্যবিধিও লঙ্ঘন করছে। এটার কারণে যাত্রীদের দারুন ভোগান্তি হয়েছে।”

সরকারে কাছে প্রণোদনার আবেদন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাতে চাই। গাড়ি বন্ধ থাকায় মালিকরা বেতন দিতে পারেননি। সরকারি-আধা-সরকারি কর্মকর্তারা বাড়িতে বসেও টাকা পেয়েছে। কিন্তু গাড়ি না চললে বাসের স্টাফরা বেতন পায় না।