• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২১, ০৪:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৭, ২০২১, ০৬:১২ পিএম

আগুনে পুড়ল ঋণের টাকায় করা ঘর

আগুনে পুড়ল ঋণের টাকায় করা ঘর

একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে টিন-কাঠের বাড়ি করেছিলেন মোর্শেদা বেগম। সোমবার (৭ জুন) ভোরে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেই ঘর। এরপর থেকে পোড়া বসতবাড়ির ছাইয়ের ওপর বসে থেমে থেমে আহাজারি করেছেন স্বামী পরিত্যাক্তা এই নারী।

কাছে যেতেই মোর্শেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। শুধু নিজের আর ছেলে-মেয়ের জীবন নিয়ে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসছি। ভাত খাওয়ার হাড়ি-পাতিল, প্লেট-গ্লাস কিছুই বাইর করার সুযোগ পায়নি। অনেক আশা করে ঘর তুলছিলাম, থাকতে পারলাম না। আল্লায় সব নিয়ে গেছে।”

মোর্শেদা বেগমের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনায়। তবে তার জন্ম ঢাকাতেই। বিয়েও করেছেন। কিন্তু স্বামী আরেকটি বিয়ে করার পর তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চলে তার। দুই ছেলে, দুই মেয়ে, ছেলের বৌ আর বৃদ্ধ বাবা-মা নিয়ে তার সংসার। দুই ছেলে ভাড়ায় অটোরিকশা চালায়। মেয়ে একটি বিয়ে দিয়েছেন, আরেকটি এখনো ছোট। বাবা-মা দুইজনই এখন অক্ষম।

বছর তিনেক আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাততলা বস্তিতে একটি ভাঙা ঘর কিনেন মোর্শেদা। আট মাস আগে ব্র্যাক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সেখানে একটি টিন ও কাঠের ঘর তোলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সোমবার ভোরে লাগা আগুনে কয়েকশ ঘরের সঙ্গে পুড়ে যায় তার ঘরটিও।

মোর্শেদা বেগম বলেন, “আমার দেশে বাড়ি ঘর কিছুই নেই। আমি সর্বহারা। আগে ভাড়া ছিলাম। কয়েক বছর আগে এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ভাঙা ঘর কিনি। পরে লোন নিয়ে এখানে ঘর তুলি। এই ঘর তুলতে পাঁচ লাখ টাকা লাগছে। ঘরের মধ্যে আরও তিন লাখ টাকার মালামাল ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ।”

এখনো ঋণের টাকা শোধ করতে পারেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “কিস্তির মাধ্যমে ঋণের মাত্র দেড় লাখ টাকা শোধ করছি। বাকি টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার, ব্র্যাক এনজিও সবাই মিলে যদি আমাদের সাহায্য করে তাহলে আমরা ডাল ভাত খেলে বাঁচতে পারমু। এছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই।”

আগুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোর্শেদা বলেন, “রাত তিনটার সময় হঠাৎ ঘুমের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাইরে এসে দেখি বস্তির একদিকে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়ার পর তারা এসে পানি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু পশ্চিমা বাতাসে আগুন পূর্বদিকে চলে আসে। তারপর তেলের মতো পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরা বস্তি।”

এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না মোর্শেদা বেগম। তিনি বলেন, “আবার যে নতুন করে বাড়িঘর করবো, সেই টাকা পয়সা নেই। একেবারে অসহায় হয়ে গেলাম। এখন কি করবো? কোথায় যাবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।”

সোমবার ভোর ৪টায় রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮ ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে পুড়ে গেছে বস্তির তিন শতাধিক ঘর। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।