• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২১, ০৮:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৭, ২০২১, ০৯:৩৯ এএম

নৌকা তৈরির ধুম

নৌকা তৈরির ধুম

শুরু হয়েছে বর্ষার মৌসুম। হালকা-মাঝারি-ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে আরও আগ থেকেই। বর্ষার প্রবল বর্ষণে প্রায় প্রতি বছরই নিম্নাঞ্চলে বন্যা শুরু হয়। এর আগেই নেওয়া হয় প্রস্তুতি। ঘরবাড়িতে বাঁধ দেওয়া, নৌকা বানানোসহ এগিয়ে চলে প্রস্তুতিগুলো। এই বছরও বন্যার আগমনী বার্তা পেয়ে আরও আগ থেকেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি।

বর্ষার আগেই ভারি বর্ষণে বন্যার শঙ্কা রয়েছে এবারও। তাই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নৌকার কারিগররা। নতুন নৌকা তৈরির কাজ চলছে বেশ জোরশরে। কেউ বা পুরাতন নৌকাকেই আরও ভালো করে মেরামত করে নিচ্ছে।

জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই এই অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে নৌকা নির্মাণ শুরু হয়। কারণ বর্ষায় নিচু অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় তখন নৌকা ছাড়া কোনোভাবেই পারাপার হওয়া যায় না। কেউ কেউ কলা গাছের ভেলা তৈরি করে নেয়। তবে কয়েকদিন ব্যবহারের পর তা নষ্ট হয়ে যায়।

নবাবগঞ্জ এলাকার কারিগররা নৌকা তৈরিতে মহাব্যস্ত। বিভিন্ন হাট-বাজারেও বর্ষার আগেই নৌকা বিক্রি শুরু হয়। মাঝিরা নৌকা কিনে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। কারিগররাও ব্যস্ততা সময় কাটাচ্ছেন নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে।

গ্রামগঞ্জে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি আর ভারি বৃষ্টিই জানান দিচ্ছে আসছে বর্ষা। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে নিচু অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। মৌসুমি ডিঙি নৌকা তৈরি করছেন ব্যস্ত মাঝি ও কারিগরা।

করোনা কালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী ও শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নৌকার অস্থায়ী দোকানও গড়ে উঠেছে। সেখানে কারিগররা মহাব্যস্ত। দিনে প্রতিটি কারিগর ১টা করে নৌকা তৈরি করছেন। দোকানে ৮-১০ জন কারিগর প্রতিদিন কাজ করছেন। নৌকা তৈরি শেষে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বারুয়াখালী, জয়কৃষ্ণপুর ও শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পারছে। 

নৌকার কারিগর হোসাইন মিয়া বলেন, "যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আর আগের মতো বর্ষা না হয় না। দিন দিন নৌকার চাহিদা কমে যাচ্ছে। শুধু বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা থাকে। নিচু অঞ্চলের মানুষ বর্ষায় যাতায়াতের জন্য় নৌকা ব্যবহার করে। তাই আগে থেকেই খনেকে নৌকা কিনে রাখছেন।"

নৌকার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বর্ষায় চাহিদা বাড়ে। তাই দামও বাড়ে। কাচামালে দাম বাড়লে নৌকার দামও বেড়ে যায়। সর্বনিম্ন ৬ হাজার থেকে শুরু করে ১৫-২০ হাজারের মধ্যেও নৌকা পাওয়া যায়। নৌকার গঠন অনুযায়ী দাম ঠিক করা হয়।"

ওই এলাকার মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছরই বর্ষার আগে পুরনো নৌকা মেরামত করা হয়। অন্যথায় বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পুরো বর্ষা মৌসুমে সবজি ও মালামাল পারাপার করতে হয়।

উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বারুয়াখালী, নবগ্রাম, মাদলা ব্রাহ্মণখালী, বাহেরচর, হাগ্রাদি, দাউদপুর, গজারিয়া, শংকরদিয়া, সোনাবাজু, রাজাপুর, বালেঙ্গা, তিতপালদিয়া, ভাঙ্গাপাড়া ও জৈনতপুর এলাকায় পুরনো নৌকা মেরামত ও নতুন নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। সবাই বর্ষার আগেই নৌকা তৈরি ও মেরামত করে প্রস্তুত করে রাখছে।

নৌকার কারিগর বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালী এলাকার নয়ন মন্ডল জানান, নৌকা তৈরি মেরামত তার পূর্ব পুরুষের পেশা। তিনি গত ১০ বছর ধরে এ পেশা ধরে রেখেছেন। প্রতি মৌসুমে ছোট বড় প্রকারভেদে নৌকা তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে তার মজুরি ১ হাজার টাকা। আর এই নৌকা বিক্রি করা হয় ৩০০০-৫০০০ টাকায়। কখনো চাহিদা বেশি থাকলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকাও বিক্রি করা হয়ে থাকে। বেশি চাহিদা ছোট আকারের কোসা নৌকার।

কারিগর গৌর হালদার বলেন, “এ কাজের দুই যুগ ধরে আছি। সারাবছর ঘর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্ষার আগেই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিটি নৌকা ৯০০-১০০০ টাকা মজুরিতে তৈরি করে থাকেন। চাহিদা বেশি থাকলে কখনো ১২০০- ১৫০০ টাকায় তৈরি করা হয়। প্রতিটি নৌকা ৩০০০-৫০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।”

বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া এলাকার মোতালেব খাঁ বলেন, “আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করা হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তেল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে, যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।”