• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২১, ১২:১৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৩, ২০২১, ১২:৩১ এএম

সেদিন পলাশীর প্রান্তরে ভূলুণ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সূর্য

সেদিন পলাশীর প্রান্তরে  ভূলুণ্ঠিত হয় স্বাধীনতার  সূর্য
ছবিঃ (সংগৃহীত) শিল্পীর তুলিতে পলাশীর প্রান্তর।


সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি নবাব আলীবর্দী খাঁর দৌহিত্র ছিলেন। নবাব আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৭৫৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হন সিরাজউদ্দৌলা। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নানা কারণে নবাবের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। তরুণ নবাবকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও বিরোধী শক্তির মুখোমুখি হতে হয়। তার সামনে একদিকে ছিল ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান শক্তি, অন্যদিকে বড় খালা ঘসেটি বেগম ও সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের মতো ঘনিষ্ঠজনদের চক্রান্ত। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রায় দুর্লভ এবং জগৎ শেঠের মতো প্রভাবশালী বণিকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র।

এ সময় বাংলায় ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্য সংস্থার নাম ছিল 'ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'। ইংরেজদের সঙ্গে নবাববিরোধী শক্তিগুলো একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়। তারা সবাই নবাবকে উৎখাতের চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজ শক্তির সঙ্গে নবাবের সৈন্যদের পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। পরবর্তীতে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলায় ইংরেজ শাসন ও শোষণের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এভাবে বাংলা তাঁর স্বাধীনতা হারায় এবং পরবর্তী প্রায় ২০০ বছর ইংরেজরা ভারতবর্ষে তাদের শাসন, শোষণ ও লুণ্ঠন চালায়।

১৭৫৭ সালের ১২ জুন কলকাতার ইংরেজ সৈন্যরা চন্দননগরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখানে দুর্গ রক্ষার জন্য অল্প কিছু সৈন্য রেখে তারা ১৩ জন অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের পথে হুগলী, কাটোয়ার দুর্গ, অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ ইংরেজদের পথ রোধ করেনি। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পারেন, তার সেনাপতিরাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল। বিদ্রোহের আভাস পেয়েও নবাব সিরাজ মীর জাফরকে বন্দি করার চিন্তা পরিত্যাগ করেন। তিনি মীর জাফরকে ক্ষমা করে তাকে শপথ নিতে বলেন। মীর জাফর পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে অঙ্গীকার করেন যে, তিনি শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতেও বাংলার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন হতে দেবেন না।গৃহবিবাদের মীমাংসা করে নবাব রায় দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ খান, মীর জাফর, মীর মদন, মোহন লাল ও ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রেঁকে সৈন্য চালানোর দায়িত্ব দিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধযাত্রা করেন।

২৩ জুন সকাল থেকেই পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজরা মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। ১৭৫৭ সালের ২২ জুন মধ্যরাতে রবার্ট ক্লাইভ কলকাতা থেকে তার বাহিনী নিয়ে পলাশী মৌজার লক্ষবাগ নামে আম্রকাননে এসে তাঁবু গাড়েন। বাগানটির উত্তর-পশ্চিম দিকে গঙ্গা নদী। এর উত্তর-পূর্ব দিকে দুই বর্গমাইলব্যাপী আম্রকানন। বেলা আটটার সময় হঠাৎ করেই মীর মদন ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তার প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ তার সেনাবাহিনী নিয়ে পিছু হটেন এবং আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। মীর মদন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু মীর জাফর, ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ যেখানে সৈন্য সমাবেশ করেছিলেন সেখানেই নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাদের সামান্য সহায়তা পেলেও হয়ত মীর মদন ইংরেজদেরকে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করতে পারতেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সিরাজউদ্দৌলার গোলাবারুদ ভিজে যায়। তবুও সাহসী মীর মদন এবং অপর সেনাপতি মোহন লাল ইংরেজদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গোলার আঘাতে মীর মদন মারাত্মকভাবে আহত হন ও মারা যান। নবে সিং হাজারী ও বাহাদুর খান প্রমুখ গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধানও একইসাথে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে 


বাংলার শেষ এবং স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার নির্মম হত্যার মধ্য দিয়ে ভারতে ইংরেজদের একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।  

জাগরণ/এসকেএইচ