• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০৯:৩৩ এএম

শোধন ছাড়াই সুপেয় পানি রাজশাহী ওয়াসার!

শোধন ছাড়াই সুপেয় পানি রাজশাহী ওয়াসার!

 

কোনো ধরণের শোধন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে রাজশাহী ওয়াসা। এই পানির ৯৬ শতাংশ যোগান আসে ভূগর্ভ থেকে। এতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অচিরেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরীতে ৫টি পানি শোধনাগার রয়েছে তাদের। পদ্মার পানি নির্ভর শ্যামপুরে একমাত্র ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারটি সচল থাকে বছরে মাত্র ৪ মাস। বাকি চারটি ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর থেকেই বিকল। এ অবস্থায় ৯৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।

ওয়াসা জানিয়েছে, ৫ লাখ  ৫১ হাজার ৬৩০ জন অধিবাসীর এই শহরে ওয়াসার গ্রাহক ৪ লাখ ৪ হাজার ২১০ জন। শতকরা হিসাবে পানির কাভারেজ ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। এটি শতভাগে উন্নীত করতে কাজ করছে তারা।

নগরজুড়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন রয়েছে ৭১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। দৈনিক ৫ দশমিক ১০ কোটি লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। দিনে ১২ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

তবে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উন্নত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ ভেঙে ওয়াসা আলাদা যাত্রা করে। গত আট বছরেও লক্ষ্য পুরণে ব্যর্থ সংস্থাটি।

নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন কর্মকার জানান, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পানযোগ্য নয়। ময়লা ছাড়াও পানিতে প্রচুর আয়রন। পাত্রে সংরক্ষণ করলে লাল স্তর পড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করতে গেলে নিচে সাদা স্তর পড়ে।

নগরীর রাণীনগর এলাকার গৃহবধূ সাঈদা রায়হানা জানান, এই পানি কেবল রান্নাবান্না ও ধোয়া মোছার কাজে লাগে। ওয়াসার পানিতে গোসল করাও যায়না। একটানা দশদিন গোসল করলে চুল নষ্ট হয়ে যায়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আব্দুল হামিদ।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনায় রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ। তাছাড়া অনেকেই না ফুটিয়েই এই পানি পান করেন। নিজস্ব পরীক্ষায় ওয়াসার পানিতে পানিবাহিত রোগবালাইয়ের জীবাণু মেলেনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আঞ্চলিক গবেষণাগারের সিনিয়র কেমিস্ট শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে তারা যে পরীক্ষা চালিয়েছেন তাতে পানিতে তেমন রোগবালাইয়ের জীবাণু মেলেনি। পানির গুনগত মানেরও তেমন পরিবর্তন হয়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মূলত ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহ, শোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে ওয়াসার পানি সুপেয় হচ্ছেনা। এটি সাধারণ বিষয়। তবে সরবরাহ লাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এবং রাসায়নিকভাবে শোধন না করলে বিপদ দ্বিগুন হবে।

এদিকে, ওয়াসার সূত্র জানিয়েছে, নগরবাসীর সুপেয় পানীয় সরবরাহে ২২২ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পদ্মার পানি শোধন করে রাজশাহী নগরী ও এর আশেপাশের পৌর এলাকায় সরবরাহ হবে।

এই শোধনাগারে প্রতিদিন ২০ কোটি লিটার পানি শোধন হবে। পরিশোধিত পানি সরবরাহে গড়ে তোলা হবে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে প্রধান সরবরাহ লাইন থাকবে ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এছাড়া ৪৮ কিলোমিটার প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী সরবরাহ লাইনও থাকবে।

ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ হবে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। এরইমধ্যে ৫৩ দশমিক ৩১ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বছরের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে।     


সাইসে