• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১, ০৯:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৯, ২০২১, ০৯:৫৩ পিএম

প্রশাসনের তৎপরতা সত্ত্বেও বাড়তি ভাড়া, ২৪ কোম্পানির বাসকে জরিমানা

প্রশাসনের তৎপরতা সত্ত্বেও বাড়তি ভাড়া, ২৪ কোম্পানির বাসকে জরিমানা
ছবি-সংগৃহীত ।

বারবার শাস্তি পেলেও ২৪টি পরিবহন কোম্পানির বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই। বারবার জরিমানা করার পরও সরকার নির্ধারিত ভাড়া না মানা এসব কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটির পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সারওয়াল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, বসুমতি পরিবহনের বাস যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়কালে সর্বোচ্চ ১৬ বার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে জরিমানা গুনেছে। বাকি ২৩ কোম্পানির বাস তিন থেকে ১৩ বার বাড়তি ভাড়া নিয়ে ধরা পড়েছে।

ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় মালিকদের ধর্মঘট ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায় সরকার। গত ৮ নভেম্বর নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। সেদিন থেকেই অভিযোগ উঠেছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে বাসে।

১০ নভেম্বর থেকে বাড়তি ভাড়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। গত এক মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের এক হাজার ৪০৮টি বাসকে ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিএনজিচালিত বাস ৮০টি। বাকি এক হাজার ৩২৮টি ডিজেলচালিত বাস।

বিআরটিএ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত এক মাসে ৫৬টি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অপরাধে পাঁচ জন চালককে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২৪টি কোম্পানির বাস তিন বা ততোধিকবার বাড়তি ভাড়া নিয়ে ধরা পড়েছে।

১২০টি কোম্পানি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য। এ হিসেবে প্রায় ২০ শতাংশ কোম্পানি বারবার শাস্তি পেয়েও বাড়তি ভাড়া আদায় করেই যাচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায়কালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে রাইদা পরিবহনের বাস ১৩ বার, পরিস্থানের বাস ১১ বার, লাভলী ও অনাবিল পরিবহনের বাস ১০ বার করে, আলিফ পরিবহনের বাস ৯ বার, লাব্বাইক পরিবহনের বাস আটবার, তুরাগ, বলাক ও স্বাধীন পরিবহনের বাস সাতবার করে, প্রজাপতি, রজনীগন্ধা ও শিকড় পরিবহনের বাস ছয়বার করে, আকাশ, আজমেরি, মনজিল, প্রভাতি ও বনশ্রী পরিবহনের বাসে পাঁচবার করে, আসমানি, প্রচেষ্টা, ভিক্টর, মিডলাইন, ডি লিংক, রাজধানী, গাজীপুর ও ভিআইপি পরিবহনের বাস তিনবার করে জরিমানা দিয়েছে। 

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে তারা অত্যন্ত কঠোর।

সড়ক পরিবহন আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী, বাড়তি ভাড়া নিলে রুট পারমিট বাতিল করতে পারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি)। আইনের ৮০ ধারা অনুযায়ী, বাড়তি ভাড়া আদায়ের শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের কারাদাণ্ড। রুট পারমিট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আরটিসিকে চিঠি দিয়েছে বিআরটিএ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় করা বাসের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে। রুট পারমিট বাতিল সমস্যার সমাধান নয়। অন্য কোম্পানির নামে চলবে বাসগুলো। বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে শুধু চালক-শ্রমিককের জরিমানা করে লাভ নেই। কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জবাবদিহিতার আওয়তায় হবে। তারা বিশিষ্ট ব্যক্তি- এমডি,চেয়ারম্যানদের জরিমানা করা হলে মানসম্মানের ভয়ে হলেও বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করবেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারকে সহযোগিতা করছে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রাস্তায় নেমে কাজ করছে। বাড়তি ভাড়া অনেকটাই কমেছে, নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। 

২৫ কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলে আরটিসিকে বিআরটিএর দেয়ার চিঠির বিষয়ে মন্তব্য করেননি খন্দকার এনায়েত। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমিতি পরে অবস্থান জানাবে।

তবে সূত্র জানিয়েছে, যে সব কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে, সেগুলো ইতিমধ্যে মালিক সমিতির দ্বারস্থ হয়েছে আইনি পদক্ষেপ থেকে বাঁচতে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বৈঠকও হয়। সমিতি বাড়তি ভাড়াবিরোধী জনমতের কারণে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তারা রুট পারমিট বাতিলের বিরুদ্ধে।
 

 

এসকেএইচ//