• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২১, ০৬:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৭, ২০২১, ০৬:২১ পিএম

আইনি পদক্ষেপ নেবেন জেনারেল আজিজ

আইনি পদক্ষেপ নেবেন জেনারেল আজিজ
ফাইল ফটো।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রচারিত তথ্যচিত্রের কারণে বিব্রত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, আগামী ২৫ জুন সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে তাঁর পূর্ণাঙ্গ অবসর শুরু হলে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

গত শুক্রবার রাতে জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে বাংলায় ‘খালেদ মুহিউদ্দিন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা জানান সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এক ঘণ্টার ওই আলোচনায় আজিজ আহমেদ কথা বলেছেন তাঁকে নিয়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে। এর মধ্যে উঠে এসেছে আলজাজিরার তথ্যচিত্র, তাঁর ভাইদের বিষয়ে নানা অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল, নির্বাচনের সেনাবাহিনীর ভূমিকাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ।

আলজাজিরার তথ্যচিত্রে জেনারেল আজিজ এবং তাঁর একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়৷ এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘ইট ওয়াজ এ কাট অ্যান্ড পেস্ট৷ ইট ওয়াজ ট্যাম্পার্ড... অনেক কিছু করা হয়েছে। এত দিন আমি ইউনিফর্মে ছিলাম, এটার ব্যাপারে যদি আমি কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন বা ব্যবস্থা নিতাম, অনেকে প্রশ্ন তুলত যে, আই এম এক্সারসাইজিং মাই অথরিটি৷ আই এম মিসইউজিং মাই পাওয়ার৷ আমি কিন্তু এখন ইউনিফর্মের বাইরে আসছি৷ আগামী জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারমেন্ট শুরু হবে৷ তখন আমি চিন্তা করব হোয়াট কাইন্ড অব লিগ্যাল অ্যাকশন আই শুড টেক এগেইন্সট দিস কাইন্ড অব প্রপাগান্ডা অ্যান্ড আদার থিংস৷’

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিলের খবর
সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, সাবেক এই সেনাপ্রধানের ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে৷ জেনারেল আজিজ সরাসরি তা অস্বীকার করেন৷ জানান, তিনিও গণমাধ্যমেই এ সংবাদ শুনেছেন৷

জেনারেল আজিজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কারও ভিসা বাতিল করলে তাকে তা জানানোর বিধান আছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দায়িত্বশীল দপ্তরের কাছ থেকে পাইনি৷ গণমাধ্যমগুলো যথাযথ সূত্র ও তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ না করেই এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।’ এ মুহূর্তে তাঁর বৈধ ভিসা আছে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আছে৷’

‘এক-দুই কোটি টাকা দেখান’
তিনি শতশত কোটি টাকার মালিক কি না, এমন প্রশ্ন করেন সঞ্চালক৷ জবাবে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘কয়েকশ কোটি নয়, আমাকে সামান্য কিছুর সূত্র দিন যাতে বাকি জীবন স্বচ্ছন্দে কাটাতে পারি৷ শত শত কোটি নয়, যদি বলতে পারেন লাখ লাখ বা এক-দুই কোটি টাকা আছে, তাহলে ওটা দিয়ে আমি পরিকল্পনা করব আমার ভবিষ্যতটা স্বচ্ছন্দ হতে পারে কি-না৷’

তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মনগড়া হিসেবে অভিহিত করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ৷ অবসর জীবন নিয়ে তিনি বলেন, রিটায়ারম্যান্টের পরে তিনি এখন দায়িত্বের চাপ থেকে মুক্ত৷ এ মুহূর্তে পোস্ট ডক্টরাল করছেন তিনি, সে বিষয়ে গবেষণা করেই সময় কাটাচ্ছেন৷

ব্যক্তিগত সহকারীর ‘পদচ্যুতি’
সেনাপ্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে খবর বের হয়৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের ১৬তম সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আমি যখন রিটায়ারমেন্টে আসি, তখন শুনেছি সে অবসরে গেছে৷ ডিসিপ্লিন বলে একটা কথা আছে৷ দুর্নীতির বিষয়টি আরও গভীর৷ অত সিরিয়াস যদি কোনো কিছু হতো—‘হি শুড হ্যাভ বিন ডিসক্লোজড ফ্রম দ্য সার্ভিস।’ সে ক্ষেত্রে আমরা অনেককে জেল দিয়ে থাকি, অনেককে বরখাস্ত করে থাকি৷ হি ওয়াজ গিভেন নরম্যাল রিটায়ারমেন্ট৷ আমি এ ব্যাপারে ‘ফারদার’ কিছু বলতে চাচ্ছি না৷”

আলজাজিরার তথ্যচিত্রে বিব্রত আজিজ
আলজাজিরার তথ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়েছিল ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার আনা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় জেনারেল আজিজ প্রভাব খাটিয়েছেন৷ এর উত্তরে তিনি দাবি করেন, কেনাকাটাগুলো যখন হয়, তখন সেনাপ্রধান হিসেবে এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যদিও তিনি দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন পর নজরদারি প্রযুক্তি ক্রয়ের স্বাক্ষর হয়, জেনারেল আজিজ দাবি করেন, প্রক্রিয়াগুলো আগেই সম্পন্ন হয়েছিল৷

জেনারেল আজিজ বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি, কেউ যদি কোনো একটা ‘এভিডেন্স’ দিতে পারে যে, আমি বিজিবিতে থাকাকালে, আমি সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোনো ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো ‘আর্মস, ইকুয়েপমেন্ট, অ্যামুনেশন প্রক্রিউরম্যান্ট, কন্ট্রাক্ট’ দিয়েছি, এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে—‘আই উইল অ্যাকসেপ্ট অ্যানিথিং৷ আই অ্যাম রেডি৷ আই এম গিভিং এ চ্যালেঞ্জ৷’’

ভাইদের জাতীয় পরিচয়পত্র
বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জেনারেল আজিজের দুই ভাই হারিছ আহমেদ এবং তোফায়েল আহমেদ নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন৷ এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘কত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি লোকজন বিদেশে আছে, তাদের কি নিজস্ব নাম-পিতৃপরিচয় বা ঠিকানা কি অ্যাকচুয়েলটা ইউস করছে?’

নাম-পরিচয় পরিবর্তনে তিনি প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল আজিজ বলেন, ‘একটা উদাহরণ দিন, কোন জায়গায় আমি কাউকে টেলিফোন করেছি কি না, যে আপনি একে নির্দেশ দিয়েছেন যে, এটা করে দেও৷ এ রকম কোনো এভিডেন্স কি আপনাদের কাছে আছে? প্রমাণ দিন৷’

আবেদনপত্রের কোনো পর্যায়ে তাঁর অধীন কোনো বিজিবি কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কিছু হয়েছে কি না, আমার কিছু জানা নেই৷ আর, এ ধরনের স্বাক্ষর করার প্রসঙ্গ এসেছিল কি না, আমার ঠিক মনে পড়ছে না৷’

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় জেনারেল আজিজকে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী কী দায়িত্ব পালন করবে, তার পরিষ্কার নির্দেশনা ছিল৷ চাইলেই সেনাবাহিনী যা তা করার এখতিয়ার নাই।’

নির্বাচন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভালো নির্বাচন হয়েছে৷’

 

এসকেএইচ//