• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৩:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম

১টি খাল খননে ৩ ফসলের স্বপ্ন দেখছেন ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো কৃষক

১টি খাল খননে ৩ ফসলের স্বপ্ন দেখছেন ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো কৃষক
লোলতই খাল। ছবি- জাগরণ।

কৃষিতে স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। কৃষি নির্ভর হওয়ায় আরো উন্নত কৃষির জন্য এখানকার কৃষকরা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। এবারে একটি খাল খননে বাম্পার ফলনের আশা করছেন হাজারও কৃষক। অতীতে ধান রোপণের পর বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যেত। বছরের বেশির ভাগ সময় লেগে থাকত জলাবদ্ধতা। এত দিন এক ফসলের বেশি করতে না পারলেও এখন তিন ফসল চাষ করে তিনগুন লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ঠাকুরগাঁওয়ের গোরকই বিলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার খাল খনন হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

জেলার রানীসংকৈল উপজেলার ধর্মগড়, নেকমরদ ও নন্দুয়ার ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক ১৫ হাজার  একর জমি চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আমন ধানের পর চাষিরা এই জমি সারা বছর ফেলে রাখতে বাধ্য হতেন। সময় মতো বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সেসব জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে থাকত। এতে চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিত হতো। কোনও কোনও বছর পানি বেশি থাকলে আমন ধানও তারা ঠিক মতো ঘরে আনতে পারত না। এই অবস্থা নিরসনের জন্য কৃষক সহিদুল যোগাযোগ করেন উপজেলা কৃষি অফিসে।  

চাষিরা প্রস্তাব দেন পুরাতন লোলতই খালটি পুনঃখননের। তাদের এই প্রস্থাবে সারা দিয়ে এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ।এরপরে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) তে যোগাযোগ করেন। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করেন।

সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ে পানি জমে থাকা জমিগুলোতে এখন হাল চাষ চলছে। খালটি খনন করায় জমির পানি চলে যাচ্ছে খালে এবং শুকিয়ে থাকছে জমিগুলো। তাই চাইলেই ধান বা সরিষা ও ভুট্টার ফসল করা সম্ভব এখন। অপরদিকে মাটি শুকনো হওয়ায় যে কোনও বাহন দিয়ে বিল থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষকরা বাড়িতে কিংবা গোলায় নিতে থাকছে কোনও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই।

এই খালটির স্বপ্নদ্রষ্টা চাষী রসিদুল জানান, এই খালটি খনন করায় বিলের মাটি সোনায় রুপান্তর হয়েছে। আগে যেখানে আমরা বছরে একবার ধান চাষ করতে পারতাম সেখানে এখন তিনবার চাষাবাদ করতে পারছি। এক ফসল চাষ করে একর প্রতি দাম পেতাম পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা। এখন তিনটি ফসল চাষ করে প্রায় দের লাখ টাকা পাচ্ছি। আগে ধান কেটে মাথায় করে প্রায় আধা মাইল হাটতে হতো। এখন ট্রলি ব্যবহার করতে পারায় চাষিদের মুজুরি কম লাগছে। এছাড়া আগে ঠেলা হাল দিয়ে চাষ করতে হতো, এখন চাইলেই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে পারছে কৃষকরা।

খালের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাষী রহিম বলেন, এ সব জমিতে সরিষা আবাদ করা যাবে কোন দিনও ভাবিনি। এবার চাষ করেছি। আশা করছি ভাল ফলন পাব।

বিএডিসি সূত্রে জান যায়, বৃহত্তর বগুরা দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন  প্রকল্প এর আওতায় খালটি খনন করা হয়। প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার খালটি খনন করা হয়। খালটি খনন করার সময় নানা মুখি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে খালটির বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তি মালিকানার উপর হওয়ায় কিছু চাষি তাদের জমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

এই বিষয়টি সমাধান করার জন্য এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেব নাথ। তিনি চাষিদের এই খালের উপকারীতার কথা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে সব চাষী জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, প্রথমে কয়েকজন চাষি আমার কাছে এই খাল খননে প্রস্তাব দেন। সরেজমিনে গিয়ে বুঝতে পারি খালটির গুরুত্ব। এর পরেই আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। এক পর্যায়ে এই প্রকল্প দিয়ে খালটি খনন করা হয়।  

কয়েকজন জমি দাতার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা আগে ভেবেছিলাম আমাদের জমি নষ্ট হবে। কিন্তু এখন আমরা সহ সকল কৃষক লাভবান হচ্ছে। এতে একটু ক্ষতি হলেও আমরা সবাই খুশি। 

তবে, কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন চাষিরা। তারা জানিয়েছেন, খালটি যেভাবে খনন করা হয়েছে এটি বেশি দিন টিকবে না। বর্ষায় দুই পারের মাটি খালে পরে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থকলে কয়েক বছরের মধ্যে খলটি বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, এই সমস্যা সবাধানে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সমবায় ভিত্তিতে নিজেদেরই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।  
 

এসকেএইচ//