• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ০৮:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ০৩:০৮ এএম

ডিএমই-ঠিকাদার যোগসাজশ

সিন্ডিকেটে বন্দি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

সিন্ডিকেটে বন্দি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল
ফাইল ছবি

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার/লোকো (ডিএমই) মো. ওয়াহিদুর রহমান নিজ কার্যালয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের নিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গঠন করে এলটিএম পদ্ধতিতে রেলের মালামাল সরবরাহে কমিশনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারের সবচেয়ে উচ্চমূল্য দিয়ে কেনা হয় নিম্নমানের মালামাল, যা ধরা পড়ার ভয়ে ল্যাবে পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। তার এই সিন্ডিকেটের ফলে প্রতি বছরই মোটা অংকের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন অভিযোগ তুলছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরই একাধিক ব্যক্তি। তবে ওয়াহিদুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেট এবং কমিশন বাণিজ্যটা একটা সিস্টেম। আমি চাইলেও এটা বন্ধ করতে পারব না। কোন দপ্তরে অনিয়ম নেই জানতে পাল্টা প্রশ্ন করেন ডিএমই।

ডিএমই অফিসের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, এখানে যারা মালামাল সরবরাহ করে থাকেন তাদের মধ্যে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের বাইরে এখানে কেউ ব্যবসা করতে পারেন না। ঠিকাদারদের এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাঝে রয়েছে গণি, মোর্শেদ, বাচ্চু, সুভাষ, মাহফুজ, মোস্তফা, জাহাঙ্গীর ও হালিম।

সম্প্রতি ওই দপ্তরের এক বছরের একটি কাজের তালিকা এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। যেখানে দেখা গেছে, পুরো বছরের চাহিদার মালামালগুলো সরবরাহের জন্য উল্লেখিত ঠিকাদারদের একেজনকে ২০ থেকে ২৫টি আইটেম সরবরাহের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। তবে কোনো মালামালই ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়নি বলে অপর একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দপ্তরের একাধিক ঠিকাদার জানান, মালামাল সরবরাহ করতে হলে ১০ খেকে ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয় আবার বিল নেয়ার সময়ও আরেক দফা ঘুষ প্রদান করতে হয় তার ওপর ভ্যাট ট্যাক্স। অফিসারদের চাহিদা মোতাবেক কমিশনের টাকা না দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ নেই আবার কমিশন দেয়ার পর ভালো মানের মালামাল দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, গুনতে হবে লোকসান। তাই যারা মোটা অংকের কমিশন দিতে পারবেন তারাই ব্যবসা করতে পারবেন। ভালো মানের মাল কিনলে যেখানে ৫/১০ বছর টিকবে, সেখানে তারা নিম্নমানের মাল দিলে বছর না যেতেই তা আবার কিনতে হয়। এর ফলে কমিশন খেকোদের সাময়িক লাভ হলেও পথে বসছে সেবামূলক এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী/লোকো (ডিএমই) ওয়াহিদুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেট এবং কমিশন বাণিজ্যটা একটা সিস্টেম। আমি চাইলেও এটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে আমি চেষ্টা করছি, অনিয়ম আস্তে আস্তে কমিয়ে আনার জন্য। আপনি আমার সম্পর্কে খবর নিয়ে দেখতে পারেন, আমার অনিয়ম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সিন্ডিকেট আগে আরো স্ট্রং ছিল, আমি কিছু সংযোজন-বিয়োজন করেছি। আমার ওপর বিভিন্ন চাপ আছে, আমি চাইলেও সমস্ত অনিয়ম বন্ধ করতে পারব না।

এ ব্যপারে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দীন বলেন, আমি তো এসেছি কিছুদিন হলো। বিষয়টি একটু খোঁজ নিয়ে দেখি, যদি এমনটি হয়ে থাকে তবে সত্যিই দুঃখজনক। আমি যতদিন আছি, এসব ব্যাপারে সজাগ থাকব। অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।