• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২, ০১:০৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২২, ২০২২, ০১:০৫ এএম

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় অবিবেচক হবে না বিইআরসি

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় অবিবেচক হবে না বিইআরসি
প্রতীকী ছবি

এবার সব ধরনের গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। তবে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে অবিবেচক হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত না নেয়ার কথা জানিয়েছেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক। ব্যবস্থাপনা উন্নত করে, সিস্টেম লস কমিয়ে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাসাবাড়িতে গ্যাসের দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৯৭৫ টাকা। আর ৭৫০ টাকার এক চুলার জন্য বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা করা হয়।

পৌনে তিন বছরের মাথায় আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলাসহ সংস্থাগুলো। এবার দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে চায় গ্যাসের দাম।

প্রতি ঘনমিটার ৯.৭০ টাকার বদলে ২০.৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে গ্যাসের দুই চুলার জন্য গুণতে হবে ২,১০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে বাড়তি গুণতে হবে ১ হাজার ১২৫ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে গ্যাসের দাম, বেড়েছে দেশে উৎপাদন খরচও। সাথে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পেট্রোবাংলার। তবে খরচ বৃদ্ধির যুক্তি যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি বিভাগের হাতে একাধিক বিকল্প ছিল। তারা সেদিকে না গিয়ে দাম বাড়ানোর মতো জটিল পথে গেছে। গ্যাস সরবরাহ আসছে প্রধানত দুটি উৎস থেকে। একটি দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন, দ্বিতীয়টি বিদেশ থেকে আমদানি।

বিদেশ আমদানি দুই ধরণের চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। একটি হচ্ছে জিটুজি ভিত্তিতে, আর স্পট মার্কেট থেকে। দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। দাম বেড়েছে শুধু স্পট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। যার পরিমাণ সামান্যই।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, দাম বেড়েছে স্পট মার্কেট থেকে আনা কমবেশি ৫-৬ শতাংশ। সিস্টেমের ৫ থেকে ৬ শতাংশের দাম বেড়েছে বলে পুরো গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য।

তিনি দাবি করেন, তারা গোজামিল দিয়ে হিসেব দেখাচ্ছে, হিসাব বাস্তব সম্মত না। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না।

প্রথম দিনের শুনানিতে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অবিবেচক হবে না বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

তিনি বলেন, বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে আসছে। কমিশন হচ্ছে আধাবিচারিক ব্যবস্থা, এখানে যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। আমরা আশা করবো পেট্রোবাংলা তার পরিচ্ছন্ন তথ্য উত্থাপন করবেন।

তিনি আরও বলেন, অডিট রিপোর্টে সবার মার্জিন দেখা গেছে (লাভ করছে), তাহলে কেনো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা  দেবেন। জিডিএফ জনগণের পয়সা দ্বারা গঠিত, এখান থেকে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে সরকার।

সে বিষয়ে পেট্রোবাংলার সঠিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। জিডিএফ’এ চার্জ ধরা হয় ৮৩ পয়সা, কিন্তু পাচ্ছে ৪১ পয়সা, ৪১ পয়সা অনুদান হিসেবে পাচ্ছে পেট্রোবাংলা। 

সিস্টেম লস সাড়ে ৮ শতাংশের উপরে। পৃথিবীর কোথাও দুই শতাংশের বেশি নেই। সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য মাত্রায় হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন কমিশনের চেয়ারম্যান।

একটি অভিন্ন ডাটা সেন্টার থাকা উচিত বলে মন্তব্য করে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, কোনও সংস্থা তার তথ্যের প্রতি দৃঢ় এবং অবিচল নয়। তার আজকে একটি তথ্য দিলে কয়েকদিন পরে আরেক রকম তথ্য দিচ্ছে। একটি অভিন্ন ডাটা সেন্টার থাকা উচিত।

তিনি বলেন, এবার মূল্যহার সুবিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। বাস্তবতার নিরিখে ঘোষণা করা হবে। কোনও অমানবিক সিদ্ধান্ত দেয়া হবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ এবং গেরস্থালিতে ১১৬ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে।

তবে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। এবার মূল্য নির্ধারণে অবিবেচক হবে না। তিন মাসের মধ্যে গ্যাসের নতুন দাম ঠিক করবে বিইআরসি।

জাগরণ/জ্বালানি/গ্যাস/কেএপি