• ঢাকা
  • রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২, ০৯:২৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৪, ২০২২, ০৯:২৭ এএম

পদ্মা সেতু 

পর্যটনে বহুমুখী সম্ভাবনা

পর্যটনে বহুমুখী সম্ভাবনা

২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বাঙালি জাতির স্বপ্নের স্থাপনা পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু চালু হলে আশপাশের জেলাগুলো আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অপরাপর জেলাসমূহ কতভাবে কত দিক থেকে প্রভাবিত হবে তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সেখানকার কৃষির উন্নয়ন হবে, শিল্পের উন্নয়ন হবে, শিক্ষার উন্নয়ন হবে, হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।

এসবের বাইরেও ওই অঞ্চলের জন্য অনেক সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে পদ্মা সেতু। একটি ভালো সম্ভাবনার বিষয়ে চলছে বেশ আলাপ, সেটি হলো পর্যটন। সেতুকে ঘিরে পর্যটনের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য পছন্দের স্পটে পরিণত হতে পারে স্বয়ং পদ্মা সেতু; একইসঙ্গে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের সব পর্যটন স্পট জনপ্রিয় হবে আগের চেয়ে।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন ব্যবসায়ী নাইম ইসলাম। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু অনেক আলোচিত এবং সরকারের মেগা প্রজেক্ট। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখার আগ্রহ ছিল অনেক। তাই উদ্বোধনের আগে একবার দেখতে এলাম।

তিনি বলেন, সেতু কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো। দারুণ অনুভূতি, যে কাউকে এ দৃশ্য মুগ্ধ করবে- পদ্মার বুক চিরে চলে গেছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। এটি যেন নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ আমাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।

ইতোমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে সেতুর দুই পাড়। শরীয়তপুর প্রান্তের জাজিরায় গড়ে উঠছে রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আপাতত ট্রলার ভাড়া দিয়ে পর্যটন-সুবিধা উপভোগ করছেন স্থানীয়রা। আগামীতে এখানে গড়ে উঠবে পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা।

শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা থেকে শিবচরের মাদবর চর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী শাসন এলাকাও এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন বহু মানুষ ওই এলাকা ঘুরে দেখেন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এসব স্থানে পর্যটকদের আগমন আরও বাড়বে। এছাড়া যোগাযোগ সহজ হওয়ার ফলে সুন্দরবন, বাগেরহাট ও কুয়াকাটায় আগের চেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হবে।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে রূপসী বাংলা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর মালিক শিমুল খাঁন বলেন, পদ্মা সেতু দেখতে এখনই অনেকে আসছেন। সেতু চালু হওয়ার পরও এখানে অনেক পর্যটক আসবেন। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে অনেকেই নতুন নতুন উপায়ে ব্যবসার চিন্তাভাবনা করছেন।

জাজিরার নাওডোবায় 'ফুড এক্সপ্রেস' নামে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি একেবারেই পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা। আগামী ২৫ জুন আমাদের স্বপ্নের এই সেতুর উদ্বোধন হবে। সে উপলক্ষে রেস্তোরাঁকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে, জাঁকজমক আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেহেতু এখানে অনেক পর্যটকের আনাগোনা হবে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি ২৫ তারিখের পর আমাদের ব্যবসায়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ১নং সংযোগ সেতুর পাশে 'রোজ ভিউ' নামে প্রকৃতিবান্ধব একটি রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসান বিন ইসলাম সজিব। পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আশপাশে আরো রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে তার।

তিনি বলেন, আমি ট্যুরিজমে পড়েছি, আমি জানি এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠার দারুণ সম্ভাবনা আছে। একটি রেস্তোরাঁ ইতোমধ্যে চালু করেছি, ভালো সাড়া পাচ্ছি। আগামীতে সুন্দর একটি রিসোর্ট করার পরিকল্পনা আছে।

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, জাজিরা একটা অবহেলিত এলাকা ছিল। সেতু চালু হলে ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ হবে। তখন আর এই এলাকা অবহেলিত থাকবে না। এখানে পর্যটন কেন্দ্র, ইপিজেডসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা হবে; পার্ক, রেস্টুরেন্ট, হোটেল-মোটেল হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, এ অঞ্চলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাজে লাগিয়ে পর্যটনের বিস্তার ঘটাতে চাই আমরা। সেজন্য সরকারের তরফ থেকে আমাদের প্রশাসন সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশে যে তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ (বিশ্ব ঐতিহ্য) রয়েছে তার দুটিই দক্ষিণাঞ্চলে- ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন। এই জায়গাগুলো মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এতদিন পর্যটকের সংখ্যা কম ছিল।

তিনি বলেন, এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় আরো অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোতে পর্যটকরা যেতে আগ্রহ দেখাবে এবং পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন পর্যটন স্পট তৈরি হবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত ওই অঞ্চলের মানুষেরা উপকৃত হবে।

 

এসকে এইচ//