• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২, ০৭:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১, ২০২২, ০১:৪৬ এএম

দৈনিক কালবেলায় যোগ দিলেন বরেণ্য সাংবাদিক আবেদ খান

দৈনিক কালবেলায় যোগ দিলেন বরেণ্য সাংবাদিক আবেদ খান

প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিতব্য দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় আজ (বৃহস্পতিবার) সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি দৈনিক জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী আবেদ খান দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদক হিসেবে গত দুই দশক যাবত অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন এবং নিজের অবস্থানকে যেমন তাঁর অসাধারণ কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণ পরিচালনা ক্ষমতা ও সময়োপযোগী নেতৃত্বের বদৌলতে একটি অনন্যমাত্রায় উন্নীত করতে সফল হয়েছেন; ঠিক তেমনই দেশের গণমাধ্যম সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে রেখে চলেছেন অবিস্মরণীয় ভূমিকা।

১৯৬২ সালে ১৭ বছর বয়সে ছাত্রাবস্থায় আবেদ খানের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় দৈনিক ‘জেহাদ’ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৬৩-তে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক-এ যোগ দেয়ার মাধ্যমে শুরু করেন এক দীর্ঘ কর্মসাধনাময় অধ্যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি পর্যায়ক্রমে শিফট-ইনচার্জ, প্রধান প্রতিবেদন, সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে তিনি ২০০৩ সালে সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজে এবং ২০০৫ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক পদের দায়িত্ব নেন। আবেদ খান দৈনিক সমকালের সম্পাদক হিসেবে ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দৈনিক কালের কণ্ঠের একজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ২০১১ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। 

এর আগে ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি একুশে টেলিভিশনের সংবাদ ও চলতি তথ্য বিষয়ে প্রধান হিসেবে কাজ করেন। একুশে টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সংবাদ উপস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে একুশে টেলিভিশনকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে অনেক বেশি সীমাবদ্ধতা ছিল। তা সত্ত্বেও টেরেস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন মিডিয়ায় আধুনিক সাংবাদিকতা এ দেশে তাঁর হাত ধরেই স্পর্শ করেছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিরল শিখর। তারও আগে ১৯৯৬-৯৯ সালে তার অণুসন্ধানমূলক টেলিভিশন রিপোর্টিং সিরিজ ‘ঘটনার আড়ালে’ টেলিভিশন-সাংবাদিকতার আরেকটি জনপ্রিয় চূড়া।

বাংলাদেশ আমলে অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিংয়ের সূচনা হয় তাঁর হাতেই। তাঁর বিখ্যাত ‘ওপেন-সিক্রেট’ সিরিজ আজ পর্যন্ত এ দেশের সাংবাদিকতার জগতে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে। এ সংক্রান্ত পড়াশোনায় ‘রেফারেন্স’ হিসেবে ‘ওপেন সিক্রেট’-এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া, দেশের সংবাদ মাধ্যমে কলামিষ্টকে তিনিই পেশায় রূপান্তরিত করেন। 

সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময়ই তিনি অভাজন ছদ্মনামে তাঁর পাঠকপ্রিয় ‘নিবেদন ইতি’ শিরোনামে কলাম লেখায় মনযোগী হন; যেটি সেসময় অভাবিত জনপ্রিয়তা পায়। ভোরের কাগজ-এ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘টক অফ দ্যা টাউন’, জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘গৌড়ানন্দ কবি ভনে শুনে পুণ্যবান’, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে এই প্রতিবেদনগুলোর মধ্য দিয়েই আবেদ খান তুমুল জনপ্রিয়তায় দেশবাসীর কাছে হয়ে ওঠেন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। 

তাঁর সম্পাদিত দৈনিক জাগরণে রাজনৈতিক ইতিহাসমূলক কলামগুলো ইতিহাসের নিরিখে অমরত্ব পাবে বলে বিবেচনা করেন অনেকেই। তিনি অজানা ইতিহাস নিয়ে নতুন এই অনুসন্ধানী কলাম ‘মেজর মঞ্জুর ও জিয়া হত্যার পূর্বাপর’ শিরোনামে লিখে চলেছেন। ইতোমধ্যেই সেগুলোকে এক জায়গা করে ‘ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড) নামে বই আকারে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতির ভেতরে যে অনোন্মোচিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জাল বিস্তৃত ছিল তা উন্মোচিত করে পাঠককূলকে বেশ নাড়া দিয়েছে। 

এক সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন যোগ্যতার সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় উপস্থাপক, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। ছয় বছর তিনি বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন এই গুণীজন। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ‘প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ’ (পিআইবি) চেয়ারম্যান- এর দায়িত্বটি সফলভাবে শেষ করেছেন। 

২৫ মার্চের কাল-রাতে ট্যাংকার নিয়ে পাকিস্তানি-হানাদার বাহিনী ইত্তেফাক ভবনে আগুন জ্বালিয়ে সর্বতোভাবে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা ও জুন মাসে সংবাদ, ডেইলি পিপল, ইত্তেফাক ভবন এবং সারা ঢাকার ওপর বয়ে চলা বিশ্ব-ইতিহাসের সেই ভয়াল পৈশাচিক হামলা ও ধ্বংসলীলার চাক্ষুষসাক্ষী হিসেবে তিনিই প্রথম কলকাতার আকাশবাণী বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে স্বনামে তুলে ধরেন। বাঙালি কর্মরত সাংবাদিক হিসেবে তিনিই প্রথম যার সাক্ষাৎকার বাংলা ও ইংরেজিতে কলকাতা থেকে একযোগে প্রচারিত হয়। ৭১-এ আপসহীন লড়াকু এই মুক্তিযোদ্ধা আকাশবাণী কলকাতা থেকে নিয়মিত যে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটি করতেন তার নাম 'জবাব দাও'। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান 'জবাব দাও' অনুষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর দেয়া বিস্তারিত ঘটনা জেনে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, প্রবন্ধ, গল্প, শিশুসাহিত্য এবং স্মৃতিকথা নিয়ে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে আবেদ খানের এবং তাঁর বেশিরভাগ লেখাই রাজনীতি বিষয়ক।

আবেদ খান একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংস্কৃতিতে সুদীর্ঘকাল যাবত অনবদ্য অবদান রেখে আসছেন এই বরেণ্য সাংবাদিক। দেশের জন্যে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সক্রিয় ও সোচ্চার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

 

এসকেএইচ//