• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ০১:০৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১২, ২০২২, ০৭:২১ এএম

আমরাই নারদকে বাঁচাতে পারি

আমরাই নারদকে বাঁচাতে পারি
নারদ হালদার। অসুস্থ হবার পূর্বের ও বর্তমানের ছবি।

নারদ হালদার। জেলে পরিবারের সন্তান। ঘরের চালে অসংখ্য ফুটো। রোদ আসে। ঝমঝম বৃষ্টি পড়ে। রাতের বেলা চাঁদ দেখা যায়। তারারা উঁকি মারে। স্যাঁতসেঁতে মাটির ঘরের কোনো পাশে বেড়া আছে তো কোনো পাশে নেই। কুকুর-বেড়াল ঢোকে। হাঁড়িতে ভাত খোঁজে। রান্না করা সবজির কড়াই চাটে। খাবার পায় না। ওরাই খাবার পায় না তো পশুপাখি কি খাবে? জেলেপল্লীর চেহারা আজো বদলাইনি। ছোট ছেলেমেয়েরা লেংটা থাকে। জাল-দড়ি নিয়ে খেলে। গায়ে ধুলোবালি মাখে। কাঁদা মাখে। নাক দিয়ে সর্দি পরে। ঠাণ্ডা লেগে জ¦র হয়। পাতলা পায়খানা হয়। ডাক্তারের কাছে যায় না। দুদিন পর এমনিতেই সেরে যায়। ওদের ডাক্তার দেখানোর বাড়তি টাকা কোথায়? পেটের খিদে মেটাতে ওরা দিনরাত পরিশ্রম করে। এরপরও খিদে মেটে না। তিনবেলা জোটে না পেটভর্তি খাবার। জুটবে কি করে। নদী শুকিয়ে গেছে। গাঙে মাছ নেই। মাছ নেই তো টাকা নেই। টাকা নেই তো পেটের ভাতও নেই।

নারদ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। প্রতি ক্লাসে এক থেকে তিনের ভেতর রোল থেকেছে। ফাইভ পর্যন্ত বিদ্যে আছে পেটে। পড়তে পারেনি টাকার অভাবে। বাপ-দাদার সঙ্গে মাছ ধরতে গেছে জালের নৌকায়। দুটাকা আসলে সংসারের সাশ্রয়। পেটের খিদে যেখানে বড় লেখাপড়া সেখানে তুচ্ছ মনে হয়েছে ওদের কাছে। 

যৌবনে জাল-নৌকা আর জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে একদিন ঢাকা চলে আছে নারদ। বড় কিছু করার জন্য। পেট ভরে খাওয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবতার আগুনে পুড়ে কয়লা হয় দেহ-মন। প্রচণ্ড পরিশ্রম আর দিনের পর দিন উপোষ থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। টিবিতে আক্রান্ত হয় ও। মনের জোর আর বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় একসময় ভালো হয়ে ওঠে। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থেকেই যায়। আবার টাকা রোজগারের চিন্তা। অক্লান্ত পরিশ্রম। দিনের পর দিন উপোষ। আবার শরীর বিদ্রোহ করে। প্রচণ্ড অসুস্থতার পর ডাক্তাররা ওর রোগ নির্ণয় করেন (Post Tuberculosis B/L Lung Bronchietasis (Damaged more than 50% B/L Lung)। চলতে থাকে চিকিৎসা। বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতা আর ধার-দেনা করেও রোগ থেকে মুক্তি মেলে না। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল অনেক চেষ্টা করেও রোগ মুক্তির বার্তা ওকে শোনাতে পারেনি। ফুসফুসের ৫০% নষ্ট। শারীরিক সক্ষমতা অপ্রতুল। ধুকে ধুকে মরা ছাড়া বাংলাদেশে ওর কোনো চিকিৎসা নেই।

৩৮ বছরের নারদ এখন রাজবাড়ি জেলার রতনদিয়ার জেলে পল্লীতে থাকে। যৌবনের সেই তাগড়া ছেলেটার শরীরে আজ হাড় ছাড়া কিছুই নেই। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও। ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। ও জানে, সামনে ওর নিশ্চিত মৃত্যু। তবু বাঁচার স্বপ্ন ওর চোখে-মুখে। ও এখন একটি মুহূর্তও অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারে না। চলতে পারে না। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। কথা বলতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। ঠাণ্ডা-গরমে সমস্যা হয়। কাশি দিলে গলগল করে রক্ত পড়ে। রক্ত বন্ধ করতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয় ১০/১৫ দিন। নির্দিষ্ট ওষুধের সঙ্গে চলে কড়া এন্টিবায়োটিক। তখন ওর মুখের দিকে তাকানো যায় না। কষ্ট হয়, প্রচণ্ড কষ্ট।

মানুষ বাঁচতে চায়। নারদেরও। তাই বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে যোগাযোগ করতে থাকে ভারতে বিভিন্ন হাসপাতালে। একসময় সাড়া দেয় চেন্নাইয়ের এপোলো হাসপাতাল। আশ্বাস দেন তারা রোগ মুক্তির। বেঁচে থাকার মূল্য নির্ধারণ করেন সাড়ে ২৬ লাখ রুপি। মেজর দুটো অপারেশন। একজনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া, ওখানে থাকা-খাওয়া, পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা... সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। যে নিঃস্ব পরিবারের ৩৫ হাজার টাকা নেই সেই পরিবারটি কি করে ৩৫ লাখ টাকা জোগাড় করবে?

নারদের বেঁচে থাকার ইচ্ছে প্রবল। ওর পরিবারের এতো টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমাদের আছে। বাংলাদেশের আছে। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি পদ্মাসেতুর মতো সেতুও আমরা নিজেদের টাকায় করতে পারি। আমরা নারদকেও বাঁচাতে পারব। দেশের ১৭ কোটি মানুষ যদি একটি করে টাকা দেয় তাহলে ১৭ কোটি টাকা। নারদের চিকিৎসায় এতো টাকার প্রয়োজন নেই। শুধু ৩৫ লাখ টাকা দরকার। আমরা পারি নারদকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমরা পারি নারদের স্বপ্নকে সফল করতে। একবার চিন্তা করুন, নারদ তো কারো ভাই, কারো সন্তান, কারো ছেলে। মাত্র ৩৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আসুন আমরা মায়ের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে দেই, দাদার কাছে ফিরিয়ে দেই ভাইকে, বোনের কাছে তার দাদাকে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! 
নারদের পাশে আমরা দাঁড়াব। বাংলাদেশ দাঁড়াবে।

মানবতার জয় হবেই। 

 

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা

নারদ হালদার--  
সোনালি ব্যাংক, কালুখালী শাখা এসি নম্বর- ২২১৩৭০১০১২৩৮২
ডাস বাংলা ব্যাংক, কালুখালী শাখা- এসি নম্বর- ৭০১৭৩১৭৭৪৯৬৩২
নগদ, বিকাশ, রকেট নম্বর- ০১৯৫৩১৩৭৩৩১
নগদ, বিকাশ, রকেট নম্বর- ০১৯৮৫৬৪৮৬১৪

 

লেখক: সম্পাদক. প্রকৃতিবার্তা।