• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ১১:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৮, ২০২২, ০৫:৪৬ এএম

সকাল থেকে ঘুরবে চাকা মেট্রোরেলের

সকাল থেকে ঘুরবে চাকা মেট্রোরেলের
ছবি ● সংগৃহীত

মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব আয়োজন শেষ। এখন শুধু উদ্বোধন।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই শুভ কাজটি সারবেন।

এরপরই তিনি হবেন মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী। তাকে নিয়ে ছুঁটবে নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া আধুনিক মেট্রোরেল। যাত্রীদের অভ্যস্ত করতে আপাতত সকাল ৮টা থেকে পরের ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কেবল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। 

পল্লবী, মিরপুর, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার স্টেশনগুলো চালু হবে আগামী ২৬ মার্চ থেকে।  মতিঝিল কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু করে আরও এক বছর পর। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা রাজধানীতে যুক্ত করে মেট্রোরেলের বিশাল নেটওয়ার্ক। 

অনেক অপেক্ষার মেট্রোরেলের উদ্বোধন বুধবার। আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচের সড়কে এখন উৎসবের আমেজ। ঝাঁ চকচকে রাস্তা। ফুলের বাগান আর শেষ মুহুর্তের ধোয়া মোছার কাজ চলছে সর্বত্র। 

প্রধানমন্ত্রী উত্তরা থেকে এসে নামবেন আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে। এই স্টেশনের পুরোটাই এখন প্রস্তুত। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ২৯ তারিখ থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত শুধু উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত মেট্রো চলবে। 

 মেট্রোরেলের নির্মাণকারী সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এটি। মাঝখানে কোনও স্টেশনে থামবে না।’

তিনি বলেন, ‘সব স্টেশনে মেট্রোরেল থামানোর জন্য সব প্রস্তুতি আছে। কিন্তু মানুষ অভ্যস্ত নয় বলে এখনই থামানো হবে না। এই তিন মাস মানুষকে অভ্যস্ত করা হবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে মেট্রোরেল সব স্টেশনে থামবে।’

শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোরেলে কোনও হাফ ভাড়া থাকছে না। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও মেট্রোরেলে না থাকার কারণ জানান এমডি। তিনি বলেন, এমনিতেই যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা খরচের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ কম।

যারা স্থায়ী কার্ড কিনে যাতায়াত করবেন, তাদের জন্য ১০ শতাংশ ছাড় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পঙ্গুদের জন্য ছাড় আছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা নেই।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। ২০২৫ সালে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে। সে ক্ষেত্রে পুরোটা চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।

 ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মেট্রোরেলের বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আতশবাজির কর্মসূচি ছিল। সেটা বাদ দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সুধী সমাবেশের মাধ্যমে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে।

সেতুমন্ত্রী জানান, আপাতত ছয় কোচবিশিষ্ট ২৪ সেট চালু থাকবে। তবে, ভবিষ্যতে আট কোচে উন্নীত করা যাবে। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৯০ জন, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। 

ছয় কোচবিশিষ্ট মেট্রোরেলে মোট আসনসংখ্যা ৩০৬টি। মাঝের চারটি কোচের প্রতিটিতে আসনসংখ্যা ৫৪টি, ট্রেইলর কোচের প্রতিটিতে আসনসংখ্যা ৪৫টি।

সড়ক মন্ত্রী জানান মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তবে মুক্তিযোদ্ধারা বিনা পয়সায় যাতায়াত করতে পারবেন।  কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন করে মেট্রোকার্ড ব্যবহার করেন তাহলে ভাড়ায় ১০ ভাগ ছাড় পাবেন। 

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমসিটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, বিদ্যুতের দামসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি যেসব দেশে মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে, সেসব দেশের সাথে ভাড়ার তুলনা করার পরামর্শ দিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘দেখবেন যে, আমরা সেই জায়গাটাতে আছি। বিদ্যুৎ বিলটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, এটা একটা বৈদ্যুতিক ট্রেন।’

মেট্রোরেলে চড়তে প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে দিয়াবাড়ির উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হবে ৬০ টাকা।

সবার চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই মেট্রোরেল অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এতে নারীদের জন্য যেমন থাকছে আলাদা কোচ, তেমনি অন্তঃসত্ত্বা এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য থাকছে সংরক্ষিত আসন। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য মেট্রোর সব সেবাতেই বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে।

মেট্রোর স্টেশনগুলোতে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকছে। শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে মেট্রোস্টেশন ও ট্রেন।

হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা যাতে টিকিট অফিস মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সে জন্য অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় টিকিট বুথ থাকবে। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন থেকেও যাতে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের টিকিটও সংগ্রহ করতে পারবেন। 

হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের পেইড জোনে সহজে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য হুইলচেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া পরিশোধের প্রশস্ত গেট থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের লিফটে সহজে ওঠা-নামার সুবিধার্থে লিফটের ভেতরে ধরার হাতল, কম উচ্চতায় কন্ট্রোল প্যানেল ও নিজের অবস্থান বোঝার জন্য আয়না থাকবে।

স্টেশন এলাকায় ও মেট্রোরেলের ভেতরে অডিও এবং ভিজ্যুয়াল তথ্য ব্যবস্থাপনা থাকছে, যাতে অন্যান্য যাত্রীর মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীরাও শুনে বা দেখে যাতায়াত করতে পারেন। 

দুর্ঘটনা রোধ এবং হুইলচেয়ার ও ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের কোচের ফ্লোর ও স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপরিভাগ একই সমতলে রাখার জন্য কোচের নিচে এয়ারব্যাগ সাসপেনশন সংযোজন করা হচ্ছে।

জাগরণ/যোগাযোগ/মেট্টোরেল/কেএপি/এসএসকে