• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৩, ১২:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০২৩, ১২:৩২ এএম

জ্বালানি তেলে শুল্ক বাড়াতে চাপ এনবিআরের

জ্বালানি তেলে শুল্ক বাড়াতে চাপ এনবিআরের

ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের আমদানি শুল্ক লিটারপ্রতি আরও ১৫ টাকা বাড়াতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) চাপ দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য এনবিআর জ্বালানি তেলের শুল্কায়ন বন্ধ করে দিয়েছে।

বিপিসি বলছে, এনবিআরের কথা মানতে হলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি কমপক্ষে ১৫ টাকা বাড়াতে হবে।

গত ২৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে জ্বালানি তেলের শুল্কায়ন বন্ধ রেখেছে এনবিআর। এর মধ্যে ভারতের নুমালিগড় থেকে আমদানি করা পরিশোধিত ডিজেলের প্রথম চালানের ৭ হাজার টন তেল গত ১৫ দিন ধরে আটকে আছে পার্বতীপুরে। 

বিপিসির পরিচালক মোস্তফা এলাহী বলেন, গত ২৫ তারিখ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও পাবর্তীপুরে জ্বালানি তেলের শুল্কায়ন বন্ধ রেখেছে এনবিআর। তবে চট্টগ্রামের কনসাইনমেন্টগুলো বন্ড সইয়ের মাধ্যমে ছেড়ে দিলেও পার্বতীপুরের চালান আটকে রেখেছে। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। কারণ, ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করলে প্রতি ব্যারেলে ৬ ডলার কমে পাওয়া যায়। এখন আগের চালান খালাস না হওয়ায় নতুন করে কোনও এলসি করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে বর্তমানে ৭০ লাখ টনের মতো পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়। এত দিন সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালু হিসেবে আমদানি শুল্ক দিচ্ছে বিপিসি। সেই হিসেবে এখন বিপিসিকে প্রতি লিটার ৪০ সেন্ট বা ৪০ টাকার বেশি শুল্ক দিতে হয় এনবিআরকে। অর্থাৎ, এক লিটার ডিজেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। এ থেকে এনবিআর ৪০ টাকা শুল্ক নিচ্ছে। কিন্তু এবার এনবিআর ইনভয়েস ভ্যালু, অর্থাৎ আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক নিতে চাইছে। সে হিসেবে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের শুল্ক ৫৫ থেকে ৬৫ সেন্ট বা ৫৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় আসতে পারে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম ওঠানামা করছে, সেই হিসাবে এ শুল্কের পরিমাণও কম-বেশি হতে পারে।

এনবিআরের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাস্টমস অ্যাক্ট-১৯৬৯ এর অনুচ্ছেদ ২৫বি অনুযায়ী পেট্রলিয়াম পণ্যের শুল্কায়ন হবে ইনভয়েস ভ্যালুর ভিত্তিতে, ট্যারিফ ভ্যালুর ভিত্তিতে নয়। তাই বিপিসি বা বেসরকারি আমদানিকারককে সেই অনুযায়ী শুল্ক দিতে হবে। 

সম্প্রতি একটি বেসরকারি ফ্রাকশেনেশন কোম্পানি এ-সংক্রান্ত একটি মামলায় উচ্চ আদালতে হেরে গেছেন। আপিল বিভাগ স্পষ্ট বলেছেন, পেট্রলিয়াম পণ্যের শুল্ক দিতে হবে ইনভয়েসের মাধ্যমে। তাই এত দিন ট্যারিফ ভ্যালুর মাধ্যমে শুল্ক নেয়া হলেও এখন বিপিসি ও অন্যান্যদের ইনভয়েস ভ্যালুর মাধ্যমে শুল্ক দিতে হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি ফ্রাকশেনেশন কোম্পানি সুপার পেট্রকেমিক্যাল হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল। ওই কোম্পানি দেশ-বিদেশ থেকে কনডেনসেট বা গ্যাসক্ষেত্রের তলানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করে। সেখান থেকে অকটেন, পেট্রল ও ডিজেল উৎপাদন করে সেগুলো বিপিসিকে নির্ধারিত দাম বিক্রি করে।

সুপার পেট্রোর মতো আরও তিনটি কোম্পানি বিদেশ থেকে কনডেনসট আমদানি করে পেট্রলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে। তাদের কনডেনসেট আমদানির সময় এনবিআর ইনভয়েস ভ্যালুর ওপর শুল্কায়ন করে। অথচ বিপিসির পণ্য খালাস করা হতো ট্যারিফ ভ্যালুর ভিত্তিতে।

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, ইনভয়েসের মাধ্যমে শুল্কায়ন করা হলেও বিপিসি তাদের বিল দেয় ট্যারিফ ভ্যালুর ওপর ভিত্তি করে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রিটের পর হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ গত মাসে এক রায় দেন। সেখানে আপিল বিভাগ বলেছেন, ইনভয়েস ভ্যালুর মাধ্যমে শুল্কায়ন করতে হবে এবংএটি বিপিসির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

জাগরণ/জ্বালানি/এসএসকে/এমএ