আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ৩০ অক্টোবর। এখনো বিএনপির নির্বাচনে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে না আসে, তাহলে ভোট যে একতরফা হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এবার যেন আগের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মতো নজির তৈরি না হয়, সে জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। সেবার দেড় শরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য এবার ‘ডামি প্রার্থীর’ কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রোববার বিকেলে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ক্ষমতাসীন দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী অনেক সংসদ সদস্যকেই এবারের তালিকায় রাখেনি দলটি। বাদ পড়েছেন মন্ত্রিসভায় থাকা তিনজন প্রতিমন্ত্রী। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেবেন নব্বইজনেরও বেশি নবীন প্রার্থী।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে রোববার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় ২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ঠেকাতে সব আসনেই বিকল্প প্রার্থী বা ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
পাশাপাশি নেতা–কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা না দিতেও নির্দেশ দেন তিনি।
গণভবনের সামনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল সকাল থেকেই। উৎকণ্ঠার সাথে ছিল মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা। রাজনীতিবিদ ছাড়াও খেলোয়াড়, নায়ক, নায়িকাসহ পেশাজীবীরাও ছিলেন গণভবনে। ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কাজ করার কথা জানান তাঁরা।
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যখন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন, তখন সড়েকর অন্যপাশে ফুটপাতে ছিল সমর্থকদের ভিড়। মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
গণভবন থেকে বেরিয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘নৌকা প্রতীক যাকেই দিয়ে পাঠাবেন মানুষের সেবক হিসেবে, তার পক্ষেই কাজ করার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী।’
এ সময় শেখ হাসিনা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নেতা–কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে মাইনুল হোসেন খান জানান, নৌকার পাশাপাশি যেকোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন।
এক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেছেন, “আমার কর্মীরা তো অনেক, আওয়ামী লীগের কর্মীরা। যদি স্বতন্ত্র হিসেবে কেউ নির্বাচন করতে চায় সে ব্যাপারে তিনি একটি সিদ্ধান্ত নেবেন।” সবাইকে (শেখ হাসিনা) আরেকটা কথা বলেছেন, “যদি তোমার কনফিডেন্স লেবেল ভালো থাকে, তুমি যদি এলাকায় পরীক্ষিত মানুষ হও, তাহলে তুমি ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে পার।” কেউ যাতে বিনা ভোটে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না হতে পারে সেই নির্দেশটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব কঠিনভাবে দিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জ্বালাও–পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলেছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।
জাগরণ/দ্বাদশসংসদনির্বাচন/আওয়ামীলীগ/এসএসকে