আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই মনোনয়ন না পাওয়া দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলটির মতে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এর আগে যে হারে ভোট পড়েছে, একই হারে ভোট পড়লে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই ভোটার বাড়ানো ও নির্বাচনকে উৎসবমুখর দেখাতে এমন উদার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানো। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে কমিশন ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বললেও তা নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক।
তাই এবার বিএনপি না থাকায় জমজমাট ভোট করতে এবং উপস্থিতি বাড়াতে সারাদেশেই নৌকার প্রার্থীদের বাইরেও দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ সুযোগে ভোটে লড়ছেন নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত ব্যক্তিদের অনেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা।
এর মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো তাদের মূল লক্ষ্য। কারণ, ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, হাজার কর্মী আছে একটি নির্বাচনী এলাকায়। কর্মীদের কাছে যে প্রার্থী জনপ্রিয়, সেই কর্মীরাই কিন্তু প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য কাজ করে। ভোটারদের ঘরে ঘরে যায়। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনে।
সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে যে ২৭১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের ৭৪৭ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এটি রেকর্ড।
সরকারি দলের নেতাদের দাবি, আন্তর্জাতিক তৎপরতা নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। বরং সংঘাতমুক্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারাকেই চাপ বলে মনে করছেন তারা।
নৌকার মনোনয়ন ঘোষণার দিন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বলেছেন, কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দেখতে চান না তিনি। এমনটি হওয়ার চেষ্টা হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা উৎসাহের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে মোট প্রার্থীর মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর ২০১৪ সালে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রার্থী ছিল স্বতন্ত্র। আর এবার মোট প্রার্থীর প্রায় ২৮ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে অন্তত ৫৯ শতাংশ প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
২০০৮ সালে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম ২৬.৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। জেনারেল জিয়ার ‘হ্যাঁ-না’ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছিল।
জাগরণ/দ্বাদশজাতীয়সংসদ নির্বাচন/স্বতন্ত্রপ্রার্থী/এমএ/কেএপি