প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত বাংলায়। পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখার সুযোগ থাকতে হবে।
বুধবার বিকেলে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিক্ষার মাধ্যম বাংলা ভাষা হওয়া উচিত। পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখার সুযোগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য, আমাদের সমাজে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষার বিস্তার হয়েছে অথচ প্রাইমারি স্কুলগুলো অনেক ভালো, সেখানে অভিভাবকরা পড়াতে চায় না। আবার বিদেশ থেকে ফিরে বাংলা ব্যবহার করতে চায় না। অনেক নব্য ধনী মনে করে ইংরেজি বললে স্মার্ট হয়ে যাবে। ছেলে মেয়েদের ইংরেজি শেখায় খালি। স্মার্ট হতে হলেই বিদেশি ভাষায় কথা বলতে হবে এটা ঠিক না। নিজের মাতৃভাষাকেও জানতে হবে।
অন্য ভাষা শেখার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষায় হতে হবে। তবে আধুনিক বিশ্বে চলার জন্য অন্য ভাষা শিখতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভাষা জাদুঘর ও ভাষা লিখনরীতি আর্কাইভসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি দেশের ছয়টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় ভাষান্তরের প্রকাশনা ও বহুভাষী পকেট অভিধানের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া চলতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি রক্ত দিয়ে ভাষা রক্ষা করেছে। পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।
অনুবাদ করতে গিয়ে ভাষা যেন বিকৃত না হয়ে যায় সেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মাতৃভাষা চর্চা করার, মাতৃভাষাকে রক্ষা করা এবং আমাদের সাহিত্যকে অনুবাদ করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ ঘোষিত হয় মুজিব শতবর্ষ। ২ বছর ব্যাপী মুজিব শতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচিকে স্থায়ীরূপ দেয়ার বুধবার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি প্রতি পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। নিজের ভাষায় কথা বলতেও বাধা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা দিয়েছেন। ৭৫ পরবর্তী বাংলা নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করে বিদেশি ভাষায় দেয়া হয়। বারবার বাঙালির ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে, বিকৃত করা হয়েছে। এখন আর সেই সুযোগ নেই সবকিছু সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রাম করেই ভাষাকে রক্ষা করতে হয়েছে। বারবার ভাষা বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাতৃভাষা জানতে হবে, বলতে হবে, লিখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা শেখার প্রয়োজন রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাঙালি জাতি। শান্তি থাকলেই প্রগতি ও উন্নতি আসবে তাই সারা পৃথিবীতে আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।
জাগরণ/জাতীয়/এসএসকে