• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৮, ০১:১৮ পিএম

সড়কে ঝুঁকি এখনো কমেনি

সড়কে ঝুঁকি এখনো কমেনি


অধ্যাপক ড. মো: মিজানুর রহমান বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি(বুয়েট)এর সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ২০০৪ সালে জাপানের ইয়োকোহোমা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্র্যাফিক ফ্লো থিওরি’র উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে শহরের বায়ুদুষণ, শব্দদুষণ এবং যানজটের উপর গবেষণা করছেন। ডেইলি জাগরণ অনলাইনের জন্য তিনি সাক্ষাতকার দেন। জাগরণের পক্ষে সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন এম এ খালেক

এম এ খালেক: সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নানাভাবে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পালন করা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর কারণ কি?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: আমরা পুলিশের নিকট থেকে সড়ক দুর্ঘটনার যে  পরিসংখ্যান পাই তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা একটু ভিন্ন। জাতীয় পত্র-পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আমরা যে সংবাদ পাই তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রণয়ন (কম্পাইল) করি। এতে দেখা যায় দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যে পরিসংখ্যান দেয় তার সঙ্গে আমাদের পরিসংখ্যানের পার্থক্য আছে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির নানা কারণ আছে। আমরা যদি সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ অনুসন্ধান করি তাহলে দেখবো, যেসব সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার আছে সেখানে দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে কম। ঢাকা-আরিচা রোডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঢাকা-আরিচা রোডে অনেকগুলো বøাক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব বাক স্পটের ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ডিভাইডার নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমেছে। বিপরীতমুখি গাড়ির যে দুর্ঘটনা তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ঘটে। যখন একটি রাস্তা ফোর লেন করা হবে এবং এই ধরনের ডিভাইডার দিয়ে দেয়া হবে তখন এই ধরনের দুর্ঘটনা কম ঘটবে। একই সঙ্গে মৃত্যুর হারও কমবে। আমাদের দেশের সবগুলো সড়ক পর্যায়ক্রমে ফোর লেন এবং ডিভাইডার যুুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যে জন্য দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মহাসড়কগুলোই এক্সেস কন্ট্রোল সেভাবে নেই। মহাসড়কের সংজ্ঞা অনুযায়ী,যখন তখন সংযোগ সড়ক থেকে যানবাহন মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। গ্রামের মধ্য থেকে একটি রাস্তা এসে হয়তো মূল সড়কের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। সেই রাস্তা দিয়ে যানবাহন এসে মূল রাস্তায় উঠে যাচ্ছে। এই অবস্থার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেশির ভাগই হাট-বাজারের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। সেখানে পথচারিরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলা ফেরা করে। এতে তারা প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। আমাদের সড়ক পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের যে সব সড়ক-মহাসড়ক আছে তার সঙ্গে সার্ভিস লেন নেই। তবে নতুন যে সব সড়ক-মহাসড়কের ডিজাইন করা হচ্ছে সেখানে সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা রেখেই তা করা হচ্ছে। আমরা যদি স্থানীয় জনগণের জন্য সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা করতে পারি তা হলে তারা মূল সড়কে আসবে না। এতে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে। মূল সড়কে দুর্ঘটনার আরো একটি কারণ হচ্ছে গতির পার্থক্য। সড়কে চলাচলকারি যানবাহনের মধ্যে যদি গতির পার্থক্য খুব বেশি থাকে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব গাড়ি যদি একই গতিতে চলে তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। যখন গতির পার্থক্য খুব বেশি থাকবে তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। বাস হয়তো চলছে ৬০/৭০ বা ৮০ কিলোমিটার গতিতে। আর নন-স্ট্যান্ডার্ড গাড়ি,যেমন নসিমন,করিমন চলছে ২০/২৫ কিলোমিটার গতিতে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। আপনি যদি উন্নত দেশের কথা বিবেচনা করেন তাহলে দেখবেন সেখানে তো ১২০ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলছে। কিন্তু তেমন কোনো দুর্ঘটনা তো ঘটছে না। কারণ সেখানে সব গাড়ি প্রায় একই গতিতে চলে। এই বিষয়টি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা যখন মহাসড়কের ডিজাইন করবো তখন স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন রাখতে হবে। এটা করা না গেলে আমরা মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা কমাতে পারবো না। দুর্ঘটনায় আমাদের দেশে যত মানুষ নিহত হয় তাদের পরিসংখ্যান যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখতে পাই দুর্ঘটনায় পথচারি নিহত হয়েছে এমন ঘটনা ঢাকা শহরে ৫৮ শতাংশ। মহাসড়কগুলোতে এই হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে পথচারিদের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা এবং অসচেততাও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ি। এই দুর্ঘটনায় শুধু যে পথচারি মারা যাচ্ছে তা নয় অনেক সময় দেখা যায় তাদের বাঁচাতে গিয়ে আর একটি দুর্ঘটনা  ঘটে যায়। এমনও দেখা গেছে, একজন পথচারিকে বাঁচাতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আগত অন্য বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায়। এ জন্য পথচারি যারা তাদের রাস্তায় চলাচলের সাধারণ আইন-কানুন মেনে সতর্ক ভাবে চলাচল করতে হবে। পথচারিরা যদি আইন মেনে সচেতনভাবে রাস্তায় চলাচল করেন তাহলে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমে যাবে। রাস্তায় চলাচলের বিষয়ে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

এম এ খালেক: বিশ^ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের দুর্ঘটনার হার কেমন বলে মনে করেন?                   

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি তুলনা করি, বিশেষ করে দেশটির মোট জনসংখ্যা এবং প্রতি বছর দুর্ঘটনায় কত লোক মারা যাচ্ছে তাহলে দেখবো,বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। বাংলাদেশকে সে হিসেবে দুর্ঘটনা প্রবণ দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। আবার বিষয়টি যদি আমরা রেজিস্ট্রার্ড ভেহিকেলের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় আছি। অর্থাৎ জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের দেশে দুর্ঘটনার তুলনামূলক হার কম। কিন্তু রেজিস্ট্রার্ড যানবাহনের অনুপাতে এখানে দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের একটি কমিটমেন্টও আছে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি সেই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। 

এম এ খালেক: বাংলাদেশে প্রতি বছর যে সড়ক দুর্ঘটনা হয় তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কেমন বলে মনে করেন?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া দুরূহ। তবে আনুমানিক একটি হিসাব আমরা দিতে পারি। আমরা গবেষণা থেকে দেখেছি,সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার পরিমাণ ৩৬ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এটা দেশের মোট জিডিপি’র ২ থেকে ৩ শতাংশের মতো। তার অর্থ হচ্ছে আমরা যদি সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অর্ধেকেও নামিয়ে আনতে পারি তাহলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অন্তত দেড় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কাজেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিরাপদ সড়ক তৈরিতে বিনিয়োগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। সড়ক ব্যবস্থা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেখানে দুর্ঘটনার অশঙ্কা কম থাকবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রæততর হবে। এ ধরনের প্রকল্পে যদি ১০০ কোটি টাকা বেশিও বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয় তা আমাদের করতে হবে। কারণ এটা মূল্যবান ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। নিরাপদ এবং দ্রæত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সেটা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে। সড়ক দুর্র্ঘটনার কারণে প্রতি বছর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা দিয়ে প্রতি বছর একটি করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে। 

এম এ খালেক: আপনি পদ্মা সেতুর কথা বললেন। এই পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা কেমন অবদান রাখবে বলে মনে করেন?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: অর্থনৈতিকভাবে প্রক্ষেপণ আছে যে,পদ্মা সেতু নির্মিত হলে মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা সমূহের জিডিপি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল যোগাযোগ সংযুক্ত হবে। পরিকল্পনা আছে যে, রেল যোগাযোগ মংলা থেকে চিটাগাং এবং মংলা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা করা হলে জিডিপি আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা যে ডাবল ডিজিট জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই পদ্মা সেতু নির্মাণের পর সেটা অর্জন সম্ভব হবে। 

এম এ খালেক: অর্থমন্ত্রী কিছুদিন আগে প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন,আমাদের দেশে সড়কের সংখ্যা অনেক বেশি। আগামীতে আর নতুন কোনো সড়ক নির্মাণ করা হবে না। শুধু বিদ্যমান সড়কগুলো সংস্কার করবো। এ ব্যাপারে আপনার অীভমত জানতে চাই?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: মাননীয় অর্থমন্ত্রী কোন্ প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন তা আমার জানা নেই। একজন পরিবহনবিদ হিসেবে আমি বলতে পারি যে,আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যে পর্যায়ে আছে তা দিয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো না। সড়ক নেটওয়ার্ক,রেল নেটওয়ার্ক আরো ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি করতে হবে। উন্নত দেশের মতো আমাদের সড়ক নেটওয়ার্ক তেমন একটা আধুনিক নয়। সেই অর্থে আমি মনে করি,যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। চাহিদার তুলনায় আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।          
      
এম এ খালেক: রাজধানী ঢাকা শহরে যানজট একটি বিরাট সমস্যা। যানজটের কারণে প্রতি বছর কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় বলে মনে করেন?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: যানজটের কারণে প্রতি বছর আমাদের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় তা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে নির্ণয় করেছেন। অনেকেই বলছেন,যানজটের কারণে প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। আমরা যদি গড়ে হিসাব করি তাহলে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে বছরে  প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এটা শুধুু আর্থিক ক্ষতির হিসাব। একজন মানুষ যখন যানজটে পড়েন তখন তিনি আরো নাানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। শারিরিক এবং মানসিকভাবেও তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হন। একই সঙ্গে তার কর্মদক্ষতার উপরও প্রভাব পড়ে। আমাদের স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্টেশন প্লান সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে ৫টি এমআরটি(মাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিট) লাইনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ৫টি মেট্রো রেল লাইন স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। আমরা যদি এটা করে ফেলতে পারি তাহলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশেই দূর হবে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন ট্রিপ জেনারেট হয়। আমাদের যে পরিবহন ব্যবস্থা এবং রোড নেটওয়ার্ক রয়েছে তা দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক ট্রিপ একমোডেট করা সম্ভব নয়। যে কারণে আমাদের ম্যাস রেপিড ট্রানজিট বা গণ পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাসও গণপরিবহন কিন্তু শুধু বাস দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। মেট্রো রেল ও আন্ডার গ্রাউন্ড পরিবহন ব্যবস্থা করা যেতে পারে,যাকে আমরা সাবওয়ে বা পাতাল রেল বলি। সেখানে প্রতি ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যায়। কিন্তু একটি বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে দুই হাজার যাত্রী পরিবহন করা যেতে পারে। এ জন্য যে স্পেস দরকার তাও ঢাকা শহরে নেই। 

এম এ খালেক: অনেকেই বলেন,ঢাকা শহরের যনজট কমানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি অফিস ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা আবশ্যক। আপনি কি বলেন?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: এটা করা হলে যানজট হয়তো কিছুটা কমতে পারে।  প্রত্যেকটি শহরের কিন্তু একটি ক্যাপাসিটি আছে। ঢাকা শহরের যে আয়তন এবং এখানে যে সংখ্যক মানুষের ধারন ক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে। ঢাকা শহরে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস করে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। জনসংখ্যা যত বেশি হবে ট্রিপের সংখ্যা তত বাড়বে। আমরা যদি বিভিন্ন সরকারি অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারি তাহলে ট্রিপের সংখ্যা কিছুটা কমবে। ফলে যানজটও কিছুটা  হ্রাস পাবে। 

এম এ খালেক: ঢাকা শহরে যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে ভবিষ্যতে আমাদের যদি আন্ডারগ্রাউন্ড রেল লাইন করতে হয় এগুলো কি সমস্যার সৃষ্টি করবে না?      

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবেই। যেসব ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে সেগুলোর নির্মাণ কাজ মাটির অনেক নিচে থেকে শুরু হয়েছে।  মেট্রো রেল যখন নির্মাণ করা হবে তখন সব স্থানে রাস্তার নিচ দিয়ে যাওয়া যাবে না। যেখানে ফ্লাইওভার আছে সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড রেল এর দিক পরিবর্তন করতে হবে।  

এম এ খালেক: শহরে যেখানে রাস্তার পাশে বাজার অবস্থিত সেখানে দুর্ঘটনা বেশি হয়। এটা কি ঠিক?

অধ্যাপক ড.মো:মিজানুর রহমান: এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন তৈরি করতে পারি। সার্ভিস লেন তৈরি করে সাধারণ মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেখানে সার্ভিস লেন মূল রাস্তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলবে। যেহেতু হাটবাজারে লোকজন আসবেই। কাজেই তাদের পাড়াপাড়ের জন্য রাস্তা রাখতেই হবে। আমরা তাদের জন্য ফুটওভার বা আন্ডার পাস তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। তারা ফুটওভার এবং আন্ডার পাস ব্যবহার করতে চান না। আমরা যদি মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করাতে পারি তাহলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যেতে পারে। 
এম এ খালেক: জাগরণের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।