• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৬:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ০৮:৪০ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে জার্মানির নতুন যুদ্ধ হয়ে পড়েছে

জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে জার্মানির নতুন যুদ্ধ হয়ে পড়েছে

জার্মানির লিবারেল পার্টিপ্রধান ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার সম্প্রতি বলেছেন, তার দেশ এখন গাড়ির বিরুদ্ধে সামাজিক যুদ্ধে আছে। তার কথা শুনে জনগণ অতিরঞ্জন বলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।  কারণ লিবারেল পার্টির সদস্যরা সাধারণত ব্যবসাবান্ধব। এবং তাদের আছে পরিবেশ নিয়ে বিশেষ নীতি। কিন্তু বিষয় অন্যত্র- একদিক দিয়ে মি. লিন্ডনারের কথা ঠিক। বিগত কয়েক বছর জার্মানিকে অভিবাসন, শরণার্থী এবং   বৈচিত্রের বিরুদ্ধে সামাজিক যুদ্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু সেই যুদ্ধ যখন স্তিমিত হয়ে আসছে, তখন নতুন যুদ্ধের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। পরিবেশ নতুন করে অভিবাসনের স্থান দখল করছে। এটা নতুন মেরুকরণ আর সেই মেরুকরণকে সাধারণ মানুষ নিয়ে রাজনীতি করা  ডান দল কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। 

অবশ্যই অভিবাসন জার্মানিতে এখনো প্রতিযোগিতার একটি ইস্যু। কিন্তু ২০১৫ বা ’১৬ সালের মত বাতিক এখন খানিকটা থিতিয়ে পড়েছে। জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদনের সংখ্যা এখন উল্লেখজনক হারে কমেছে। গত বছর আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার, যা ছিল ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৪৬ হাজার।  চরম ডানপন্থি দল এএফডি যখন মাইগ্রেশন ইস্যু নিয়ে পড়ে আছে তখন প্রধান দলগুলো এই ব্যাপারটিকে দূরে ঠেলে রাখতে চাইছে। ২০১৮ সালের বেশির ভাগ সময় ক্রিশ্চিয়ান স্যোসাল ইউনিয়ন, দি কনসারভেটিভ, মধ্য ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রাটদের বাভারিয়া শাখা অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের অভিবাসনের অবস্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কিন্তু গত বছর বাভারিয়ায় বেদনাদায়ক পরাজয়ের পর ক্রিশ্চিয়ান সোস্যাল ইউনিয়ন এই ইস্যুকে শিকায় তুলেছে। একই সঙ্গে পরিবেশের উপর বিতর্ক আরও জোরদার হয়েছে। সরকারের ভেতরে বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই। হোক সেটা গ্রীন হাউস গ্যাস নিয়ে, সিটিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে অথবা মৌমাছি রক্ষা নিয়ে, বিতর্ক বাড়ছেই। 

উদাহরণ হিসাবে বলা যায় এই বছর জার্মানির কয়েকটি বড় শহর বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ছড়ানোর ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা অনুসরণ করে ডিজেলচালিত পুরোনো গাড়ি তাদের শহরে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। এই নিষেধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত বছর এবং ঘোষণার পর জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। 

এই জানুয়ারিতে লাঙস স্পেশালিস্ট দিয়ে তার কোয়েলারের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক  ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেয়াদসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ড. কোয়েলার টক শো’ করে বেরিয়েছেন এবং এ এফডি তাকে হিরো হিসাবে আখ্যায়িত করেছে তার সাহসী বক্তব্যের জন্য।  এমনকি  বিজ্ঞান কমিউনিটি কোয়েলারকে কোনো এপ্রিডেমিওলজিস্ট নয় বলে হুমকি দেওয়ার পরও পরিবহনমন্ত্রী  আঁন্দ্রিয়াস শোয়েয়ার ড. কোয়েলারের বক্তব্য সমর্থন করেছেন। পরে অবশ্য এটা প্রমাণ হয়েছে যে ড. কোয়েলারের কিছু যুক্তি ভ্রান্ত। কিন্তু ততদিনে ডিজেল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে কলুষিত হয়ে উঠেছে। 

জার্মানরা গাড়ি ভালোবাসে। সেটা কেবল নিজের সম্পদ বা জাহির করবার জন্য নয়। তারা ভালোবাসে  মেনুফ্যাকচারিং এর শক্তি প্রদর্শন করতে। সুতরাং অনুমেয় যে, পরিবেশ নিয়ে যুদ্ধের কেন্দ্রে আছে এখন অটোমোবাইল। সম্প্রতি বার্লিন সিটির পরিবেশ ও পরিবহন বিষয়ক সিনেটর রেগিনে গ্যুন্থার বলেছেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে জনগণ গাড়ি ব্যবহার বাদ দিয়েছে।’ তার এ কথার প্রতিক্রিয়ায় সোস্যাল মিডিয়ায় তাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘গ্রীন কমিউনিস্ট’ ‘কারবিদ্বেষী’ বলে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় মহাসড়কে গতি কমানো এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং  গ্যাসের দাম বাড়াতে পার্লামেন্টের একটি রিপোর্টের অনুমোদন দেয়, তখন জনতা এমনভাবে বৈরী হয়ে ওঠে যে শেষ পর্যন্ত সেটা বাতিল করতে হয়। 
এমনকি শিশুদেরও এই খেলায় টেনে আনা হচ্ছে। ১৬ বছর বয়সী উইডশ পরিবেশবাদী গ্রেটা থানবার্গকেও জার্মান ডানপন্থিরা  টার্গেট করছে। এমনকি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিকস দলের মহাসচিব গ্রেটা থানবার্নকে বলেছেন, ‘পিওর আইডিওলজি’।  

প্রথমত, জার্মান নাগরিকদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। একদিকে সরকার  নাগরিকদের প্রত্যেককে  স্বার্থ ত্যাগ করতে বলেছেন, সেখানে ভক্সওয়াগন এবং অন্যান্য গাড়ি কোম্পানিগুলোর প্রতারণামূলক পরিবেশ ও গ্যাস উদগিরণ ডাটা বিষয়ে চুপ হয়ে আছে। 
ঠিক একই সময়ে জার্মানি এবং ইউরোপের জনপ্রিয় দলগুলো পরিবেশ আইনের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে। জনপ্রিয়তার ধারা বজায় রাখার জন্য এমন বিরোধিতা একেবারে পারফেক্ট। 
 
পরিবেশ নিয়ে বিতর্ক ঠিক অভিবাসনের মতই মৌলিক ফাটলের সৃষ্টি করেছে। অভিবাসন এবং পরিবেশ দু’টোরই পলিসির উদ্দেশ্য বৈশ্বিক এবং নৈতিক। 
(নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষিপ্ত অনূদিত)
 

লেখক: নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রদায়ক