• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০৮:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৯, ২০১৯, ১২:৪২ এএম

দেশে দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলা: বিশ্বে শ্রম-পুঁজির দ্বন্দ্ব আড়ালে রাখার অপকৌশল

দেশে দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলা: বিশ্বে শ্রম-পুঁজির দ্বন্দ্ব আড়ালে রাখার অপকৌশল

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বের একটি প্রধান সমস্যা। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অদ্যাবধি পৃথিবী ক্রমান্বয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে। নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবীর কথা আমরা সবাই বলে থাকি এবং প্রত্যাশা করি। কিন্তু শান্তির সপক্ষে খুব ভালো ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যে দেশগুলো অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং যাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সর্বোত্তম খাত অস্ত্র ব্যবসা, তারা স্বভাবতই চাইবে পৃথিবীতে সার্বক্ষণিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে থাকুক। বিশ্বে যদি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজমান থাকে, তা হলে তারা বিবদমান ইস্যুতে জড়িত উভয়পক্ষের কাছে গোপনে অস্ত্র বিক্রি করতে সক্ষম হবে।

সম্প্রতি দুটো সন্ত্রাসী হামলা বিশ্ববিবেককে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বিশ্ববাসীর মনে। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির অব্যবহিত পরই শ্রীলংকায় ন্যক্কারজনক ঘটনাটি অনিরাপদ বিশ্বকেই নির্দেশ করে। আসলে কি ঘটছে পৃথিবীতে? পৃথিবী থেকে শান্তি কি উধাও হয়ে গেল? মানুষ কি ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপদ নয়! নিরাপদভাবে তারা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে না! এখন এটাই তো ঘটছে ক্রমশ। দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। আমি, আপনি কিংবা আমরা কেউই এ সন্ত্রাসীদের ঝুঁকির বাইরে নই। আমরা কখন তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হব, তাও কেউ বলতে পারব না।

পৃৃথিবীতে জঙ্গিবাদের উত্থানের বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদের ধরন ও কারণ পরিবর্তিত হয় মাত্র। মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইউরোপে জঙ্গিবাদের উত্থান। এসব জঙ্গির নেতৃত্ব দেয় জার্মানির নাৎসি বাহিনী। তখন তারা পুরো ইউরোপে তা-ব চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষমুহূর্তে মিত্রশক্তির নেতৃত্বে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান সূচনা করেন আরেকটি ঘটনার। তার প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখ-কে দ্বিখ-িত করে ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়া হয়। আরব প্যালেস্টাইনে তৈরি করা হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের। সেই থেকে বিশ^ রাজনীতিতে নতুন রূপ পায় ধর্মীয় উন্মাদনা। মার্কিন নির্বাচনগুলোর ফলাফল নির্ধারণ করছে ইসরায়েলের অস্ত্র ব্যবসায়ী ও তাদের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তাদের পরামর্শেই পশ্চিমাবিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ দখলকেন্দ্রিক একশ্রেণির সরকারবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী লালনপালন শুরু করে। এর প্রেক্ষাপটে আমরা ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে পাই। 

আমরা সবাই জানি, আশির দশকে সংঘটিত রুশ-আফগান যুদ্ধটিই হচ্ছে জঙ্গিবাদের সূতিকাগার। এ সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আফগানদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলে। অথচ আজ পশ্চিমারাই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় লিপ্ত হচ্ছে। এ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ যে আসলে পশ্চিমাদের রাজনীতির খেলা, অর্থাৎ চড়ষরঃরপধষ মধসব, সেটাও আজ সবার কাছে প্রমাণিত। এতে তারা খনিজ ও তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো দখল করতে পারছে, পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসা করে নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে যেমন বলা হয় কৃষি-অর্থনীতি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বলা হয় যুদ্ধ-অর্থনীতি (ডধৎ ঊপড়হড়সু)। বিশ্বে যুদ্ধ না থাকলে তাদের অর্থনীতি মন্দায় আক্রান্ত হয়। তাদের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ে। এ কারণেই তাদের প্রয়োজন বিশ্বজোড়া অস্ত্রের বাজার। কিন্তু তারা নিজেরা আর সশরীরে যুদ্ধ করতে আগ্রহী নয়। তাদের সৈন্যরা যুদ্ধবিমুখ ও ভোগবাদী। তাই দরকার পড়েছে মুসলমানদের একটি দলকে আরেকটি দলের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া। সুতরাং তারা যেমন জঙ্গিদের জিইয়ে রাখতে চায় চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত, তেমনি অনেক দেশের সরকারও জঙ্গিবাদ নির্মূল হোক এটা চায় না। জঙ্গিরা থাকলে তাদের বহুমুখী স্বার্থোদ্ধারের পথ খোলা থাকে। তালেবান, আল কায়েদা বা আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে পৃথিবীব্যাপী শোষণ অব্যাহত রাখতে যতখানি সুযোগ করে দিয়েছে, অতীতে তা কেউ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী একটি নতুন মাত্রা পায়। সে সময় এ হামলার জন্য আল কায়েদা এবং এর প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করা হয়। টুইন টাওয়ার হামলার অজুহাতে ওসামা বিন লাদেনকে শাস্তি দেয়ার জন্য সারাবিশ্বে তখন জিগির তোলা হয়। অথচ টুইন টাওয়ার হামলার বিতর্ক আজও আমেরিকা বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার করেনি। আমেরিকার অর্থনীতি টুইন টাওয়ার হামলার আগে থেকেই টলটলায়মান। তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ক্রমহ্রাসমান। তাই অনেকেই বলে থাকেন, অর্থনীতির মন্দা থেকে পরিত্রাণের জন্যই আমেরিকা নিজে এ কা- ঘটিয়েছে!

টুইন টাওয়ার হামলায় অর্থনৈতিক মন্দা সাময়িক ঠেকানো গেলেও ২০০৭ সালের শেষদিকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। মন্দা দেখা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ২০০৮ সালে তা বৈশ্বিক মন্দায় রূপ নেয়। বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিশ্বব্যাপী বৃহৎ এক মন্দা অনুভূত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯২৯ সালে। এটি চল্লিশের দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর ফলে তখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস পায় শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকরা ২৫ ভাগ। অন্যান্য দেশেও তা বেড়ে যায় ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত।

এ অর্থনৈতিক মন্দার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ২০০৭ সালের আর্থিক সংকটের ১০ বছর পর আবারও বৈশ্বিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এ সংকট হবে আগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর এমনটিই বলেছেন ইউরো প্যাসিফিক ক্যাপিটালের সিইও এবং অভিজ্ঞ স্টক ব্রোকার পিটার শিফ। পিটার শিফ বলেন, “২০০৭ সালের থেকে এবারের অর্থনৈতিক সংকট আরও ভয়াবহ হবে। কিছু ব্যাংক আছে যা বহু বছর আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু সরকারের জন্য তা হয়নি। আসলে বিশ্ব পূর্বের সংকট থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। যার ফলাফল অনেক ভয়াবহ হতে যাচ্ছে।” বিশ্বের নামকরা অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকোনমিস্টসহ বিভিন্ন পত্রিকা এবং অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বিশ্ব আবার আরেকটা মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। তারা যদিও-বা দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে কখন মন্দাটা শুরু হচ্ছে তা বলেননি। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ নরিয়ের রুবিনির মতে, ইউরো জোন, ব্রিটেন, জাপান ও বেশির ভাগ উদীয়মান দেশে প্রবৃদ্ধি মন্দা হয়ে পড়েছে। মার্কিন ও চীনা প্রবৃদ্ধির এখনো প্রসার ঘটে চললেও মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আর্থিক প্রণোদনা দ্বারা চালিত হচ্ছে, যা কখনো টেকসই নয়। 

পুঁজিবাদী অর্থনীতি বারবার মন্দায় আক্রান্ত হওয়া একটা স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ-দুর্বিপাকে পড়লেও পুঁজিপতিদের কোনো সমস্যা হয় না। হেরফের হয় না তাদের মুনাফা লাভের। এ বক্তব্যেরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় সম্প্রতি ব্রিটেনের দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে। অক্সফাম তার প্রতিবেদনে বলছে, বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব অর্ধেক মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, ঠিক সেই পরিমাণ সম্পদের মালিক বিশ্বের মাত্র ২৬ ধনকুবের। গত বছর বিশ্বের সব ধনীর প্রতিদিন গড়ে ২৫০ কোটি ডলার সম্পদ বেড়েছে। আর একই সময়ে বাকি পৃথিবীর যে অর্ধেক মানুষ তাদের সম্পদ প্রতিদিনই কমছে। গত এক দশকে বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় ২০১৪ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া কৈলাস সত্যার্থীর বক্তৃতাতেও। তিনি বলেন, কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিইও ২০ জন শ্রমিকের সমান আয় করতেন। আর এখন এই বৈষম্য বেড়ে ১ : ২০০ হয়েছে। বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ মাত্র আটজন ধনীর কাছে আছে। তিনি বলেন, একদিকে ১০০ মিলিয়ন শিশু দাসত্ব, পাচার ও শিক্ষা বঞ্চনাসহ বিভিন্ন সহিসংতার শিকার হচ্ছে; অন্যদিকে ১০০ মিলিয়ন তরুণ চাইছে পৃথিবীকে বদলে দিতে। পৃথিবী বদলে দেয়ার ভয়ে তাই তরুণদের পুঁজিবাদী বিশ্বমোড়লরা বিপথে চালিত করার হাজারো পথ জারি রেখেছে। দেশে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা এর মধ্যে একটি। 

পাঁঠার কান মোচড়ালে নাকি রাগ বেড়ে যায়, তেমনি বিভিন্ন ধর্মের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে তরুণসমাজকে এই মোড়লরা একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখে তারা দুপক্ষের কাছেই অস্ত্রের ব্যবসা করে যাচ্ছে। এসব বিবদমান দেশ মূলত অস্ত্র সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই। তাই অর্থনীতিতে মন্দা চললেও গত পাঁচ বছরে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোয় অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। যুদ্ধ ও আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতেই এসব দেশ অস্ত্রের ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এসআইপিআরআইর গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র আমদানি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগের পাঁচ বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র কেনার হার ১০৩ শতাংশ বেড়েছে। এত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পালে হাওয়া লেগেছে।

পুঁজিবাদী পশ্চিমা দেশগুলো এক ঢিলে তিন পাখি মারার উদ্দেশ্যেই দেশে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটির জন্ম দিয়েছে এবং সেটা বিশ্বময় রপ্তানি করে নিজেরাই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মত্ত আছে। এসব যুদ্ধখেলার স্বল্পমেয়াদি উদ্দেশ্য হলো- পররাজ্য দখল করা, তাদের সম্পদ লুট করা, খ্রিস্টান-ইহুদিদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘ইসলাম’কে ধ্বংস করা। আর দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য হলো, দেশে দেশে প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামকে ঠেকিয়ে রাখা। বিশ্বের মানুষকে একটা ধূ¤্রজালের মধ্যে আটকে রাখা, যেন তারা কোনোভাবেই মানুষ মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারে। তৃতীয় উদ্দেশ্য হলো- শ্রম-পুঁজির দ্বন্দ্ব মানুষের চোখের আড়ালে রেখে তাদের শোষণ-নির্যাতন অবাধে চালিয়ে যাওয়া।

পুঁজিবাদী মোড়লদের এত কিছুর পরও আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিক-কৃষক, যুবক, জনতা বিভিন্নরূপে আন্দোলন-সংগ্রাম, বিক্ষোভ-সমাবেশ, ধর্মঘট-সাধারণ ধর্মঘট তীব্রতর করে চলেছেন। তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। শ্রম-পুঁঁজির দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়া এবং একচেটিয়া পুঁজির তীব্রতর আক্রমণ মোকাবেলায়, শোষণ-লুণ্ঠন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, বর্ণবৈষম্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে গোটা আমেরিকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়ে চলেছে। গ্রিস, স্পেনসহ ইউরোপের দেশে দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই ব্যাপক বিক্ষোভ, সমাবেশ, ধর্মঘট সংঘটিত হচ্ছে। এসব আন্দোলন-সংগ্রাম, বিক্ষোভ-সমাবেশ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বৈ কমছে না। তাই বিশ্বমোড়লরা শোষণ-নির্যাতনের উদ্দেশে যত মোড়লগিরিই দেখাক, প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে হঠাৎই তা উবে যাবে বলে ইতিহাস সে কথার সাক্ষ্য দেয়।