• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৪, ২০১৯, ০৪:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৪, ২০১৯, ০৪:৪০ পিএম

আমি একজন ভারতীয় মুসলমান, আপনি কে?

আমি একজন ভারতীয় মুসলমান, আপনি কে?

আমাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সর্বধর্ম স্থলের একটি গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। এই স্থল কেবল পূজা-প্রার্থনার স্থল নয়, সার্বিকভাবে আমাদের হৃদয়ের স্থল। আমরা সবাই সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এটাই সর্বধর্ম।  আমি জন্মসূত্রে একজন মুসলমান। কিন্তু একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে যখনই কোনো পালা-পর্বন আসে আমি গর্বের সঙ্গে কপালে তিলক পড়ি।

 আমাদের রেজিমেন্টের গনেশ চতুর্থি, কর্ব শোথসহ সব পুজায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করি। আমার স্বামী যখন কমান্ডিং অফিসার ছিলেন, তখন আমি আর তিনি মিলে সত্য নারায়ণ পূজা, হলিকা দহন পুজা, সরস্বতী পুজা, মহা মৃত্যুঞ্জয় জপ-এ নেতৃত্ব দিয়েছি। আর এসব করার পাশাপাশি আমরা প্রতিদিন নামাজ পড়েছি।  আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে আমি একজন হিন্দুত্ববাদীর চেয়ে ভালো হিন্দু এবং মৌলবাদী মুসলমানের চেয়ে ভালো মুসলমান।

 কারণ আমার হৃদয়ে ভালোবাসার সঙ্গে বাস করে কৃষ্ণ, হযরত আলী, গণপতি, ইমাম হুসেন, যিশু এবং গুরু নানক। সর্বোপরি আমি তথাকথিত ধার্মিকদের চেয়ে ভালো মানুষ। এরপর আমাকে আহত করার পূর্বে, আমাকে অপমান করার আগে, কোরানের কোনো বাণীর অসমাপ্ত অংশ উদ্ধৃত করে খাটো করার আগে দয়া করে নিজের চেহারার দিকে তাকাবেন। আপনি কে, ঘৃণা আপনাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আপনি এখন কিসে পরিণত হয়েছেন?

আমি আবারও বলছি, আমার জীবনে আমি যত হিন্দু বন্ধু, সহকর্মীর সঙ্গে চলাফেরা করেছি, যাদের সঙ্গে আমার সময় কেটেছে, তারা সবাই ছিলেন ভদ্র, শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিকতাপূর্ণ। তারা কেউ সোস্যাল মিডিয়ায় যে নোংরা কথাবার্তা দেখি তার ধারে-কাছেও না। এমনকি এখনো রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে কোনো পরিবর্তন নেই। 

সুতরাং আমি আবার জিজ্ঞেস করি আপনি কে, আপনারা কারা, যারা গায়ে গেরুয়া কাপড় জড়িয়ে, বিশাল তিলক  কেটে, অথবা রুদ্রাক্ষের মালা জড়িয়ে বা হনুমানের একটি ছবি নিয়ে নিজেকে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংস  হয়ে ওঠার সার্টিফিকেটধারী মনে করছেন? না, ভারত যে হিন্দুকে নিয়ে গর্ব করে সে হিন্দু আপনারা নন। আমি জানি এখনই আপনি আমার দিকে আঙুল তুলে ইসলামী সন্ত্রাসীদের কথা বলবেন। হ্যাঁ, আমরা ধর্মের নামে যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ভর্ৎসনা করে আসছি। 

অথচ তারপরও আমাদেরকে প্রত্যেকদিন অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আমরা কখনোই মুঘল, আইএস, পাকিস্তান, তালিবান, জিহাদিস্ট, কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন না করা সত্বেও আমাদেরকে অভিযুক্ত করা হয় এই কারনে যে আমরা একই ধর্মের অনুসারি? এটা কি বিবেচনাপ্রসূত?  আমরা চাকরি থেকে বঞ্চিত, আমাদের ভিসা দেওয়া হয় না, স্কুলে বাচ্চাদের উপহাস করা হয় এবং আলাদা চোখে দেখা হয়। কেন? কী কারণে? আমরা আমাদের সামর্থ অনুযায়ী আমাদের ধর্মের ভেতরে থাকা ফ্যানাটিকদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। আমরা কখনোই তাদেরকে আমাদের ধর্মের নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করতে দেব না।
 
আর আপনারাও যারাই হোন না কেন, হিন্দুত্বের এবং সত্যিকার হিন্দুর ক্ষতি করে চলছেন। ঠিক ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যেমন সারা দুনিয়ার মুসলমানদের ক্ষতি করছে। এদেরকে ধর্ম থেকে প্রত্যাখ্যান করা দরকার, ঠিক আমরা যেমন ইসলামী টেররিস্টদের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান করে থাকি, তেমনি যদি তা আপনারা না করেন, তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আপনিও তাদেরই একজন। 

দয়া করে এটা বুঝতে চেষ্টা করুন যে এই বিভক্তির মধ্য দিয়ে কিছু লোক এবং কিছু রাজনীতিবিদ ফায়দা তুলে থাকেন।  তারা এই বিপজ্জনক আগুনে তেল ঢালেন নিজেদের স্বার্থে। আসুন, যারা আমাদের বৈচিত্র্য, আমাদের সংস্কৃতি আমাদের একতা ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেইসব প্রত্যেকটি শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করি। শাহরুখ খান যেমনটি বলেছেন, ‘বিভিন্নতা ভালো কিন্তু বিভেদ ভালো নয়’। সর্বধর্ম ভাব সেটাই যা আমি হৃদয়ে ধারণ করি। এবং আমি এটাই আমার সন্তানদেরও শিক্ষা দিয়েছি। 

এটাই আমার কাছে একজন ভারতীয়র কাজ বলে মনে হয়েছে। আপনারও উচিত হবে তাই করা। 

( দি টাইমস অব ইনডিয়ার ব্লগ থেকে দৈনিক জাগরণে ভাষান্তরিত। )