• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৬, ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৬, ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

অমানবিকতার দাপট    

অমানবিকতার দাপট    

 `মানুষ জ্ঞানের আধার ” মানুষ ছাড়া সমাজ  সভ্যতা আর রাজনীতির ইতিহাস অম্ব ডিম্ব ছাড়া  আর কিছুই নয়, সেই কারণেই বলা হয় পৃথিবীর ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাস । সমাজ ছাড়া মানুষ বাস করতে পারে না। সেই কারনেই মানুষকে সামাজিক জীব হলা হয়। সামাজিক জীব হিসেবে সবাই সাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য সহাবস্থান থাকা প্রয়োজন। মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধির বিষয়টি সকল কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে বঞ্চিত করে মুষ্টিমেয় মানুষের  স্বার্থ উদ্ধারের নানান কুটকৌশল অঙ্কুরে বিনষ্ট করা উচিৎ এ জন্য ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকাকে জোরদার করা জরুরি, কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রই যদি জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে যায়, তবে সেই রাষ্ট্রে মানুষ বাঁচতে পারে না,তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত অঙ সাং সুচি ।  

সে দেশে রোহিঙ্গাদেরে উপর যে হারে  হত্যা,নির্যাতন চালিয়ে তাদের দেশান্তরি  করা হয়েছে তা ধারনার বাইরে।কয়েকদিন আগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা করে করে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা, শ্রীলংকাতে হোটেলে এবং র্গীজাতে  হামলা করে দুই শতাধিক মানুষ হত্যার ঘটনাসহ একের পর এক ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বাস করা কঠিন যে পৃথিবীর মানুষ সভ্য হয়েছে। হত্যা ,খুনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে অমানবিক এক জগতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।  এসব নারকীয় হত্যাকান্ডের পরও  রাষ্ট্র যন্ত্রকে দুর্বল হওয়া চলবে না। কারণ রাষ্ট্র যন্ত্রের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতাই পারে সামাজিক অনাচার রোধ করতে। প্রকৃতির রাজ্যে জন্মগতভাবে সব মানুষই সমান , একই প্রকৃতির সন্তান । একই  প্রকৃতির আলো- বাতাস আর অক্সিজেন ভোগ করায় সমান অধিকারী। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নে সেটাই ছিল। কিন্তু আজকের ভোগবাদী সমাজের মতো আদিম যুগে কৌশলে আর তন্ত্রমত্রের কারসাজিতে ভাইয়ে ভাইয়ে বৈষম্য করার ফন্দি ফিকির ছিল না। অতি আধুনিকতার নামে ইতর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যকে মগজে লালন করে ভাইয়ে ভাইয়ে নবতর বৈষম্যের জন্ম দিয়েছে । দক্ষতা, যোগ্যতা আর ক্যারিয়ারের কথা বলে সাধারণ মানুষের সাধারণ অধিকারগুলি পর্যন্ত হরণ করেছে।

জমি সম্পদ তথা বস্তুগত বিষয়গুলি হস্তগত করে বঞ্চিত করেছে অসংখ্য আদম সন্তানকে, ধরা ছোঁয়ার বাইরের আলো বাতাস থেকেও বঞ্চিত করার শেষ চেষ্টা এরা অব্যাহত রেখেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরী করে খাদ্য ঘাটতি  করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ফেলছে, পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রন করতে সমুদ্রে ফসল ফেলে দেওয়া হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর,এফসি গ্যাস, গাড়ী থেকে নির্গত কার্বন মনো-অক্সাইড আর সীসা তৈরির মধ্য দিয়ে করে বাতাসকে দূষিত করা হচ্ছে। শিল্পের বর্জ্য উৎপাদন  ও পরিবহন থেকে অতিরিক্ত পরিবেশ বিধ্বংসী উপাদান তৈরী করে পরিবেশের ভারসাম্য  নষ্ট করে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বঞ্চিত মানুষের বঞ্চনা রোধে গড়ে উঠা আন্দোলনের কাফেলাকে নির্মূল করতে রাজনীতি কে কলুষিত করছে।  কালো টাকা, সন্ত্রাস, মাস্তান,  আমলা ,রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন আর মিডিয়াকে নিয়ে সাধারণ জনতা বিরোধী শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হচ্ছে মনুষ্যবিরোধী ও চীনের প্রাচীরের চেয়ে শক্তিশালী  আকারে। কায়েমী স্বার্থ রক্ষাকারীদের এই অনৈতিক ঐক্য শক্ত ভিত্তের উপর দাঁড়িয়েছে।

 বার্ট্রান্ড রাসেলের ঐ কথাই যেন শতভাগ সত্য হয়েছে  যে, রাষ্ট্র যন্ত্র যদি জনগণের বিপক্ষের হয়, সে আর যাইহোক, মানুষ বাঁচতে পারে না। ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল সেই সুরেই আগের টার্মে ক্ষমতাসীন হয়ে বলেছিল মুসলিমদের এ  দেশের থাকা চলবে না। থাকতে হলে হিন্দুত্ব বরণ করেই থাকতে হবে। রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে সমাজে যে অনাচারের সৃষ্টি এবং চলছে তা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পরেছে। শাসকদলের লোক সমাজবিরোধী এহেন কাজ নেই, যা করছে না।,নারী সমাজের সম্ভ্রম হরণ থেকে শুরু করে খাল, বিল , নদীনালা, হাটবাজার, ফুটপাত দখল উন্নয়ন কাজে টেন্ডার ভাগাভাগি আমদানি রপ্তানিতেও নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়ে পরেছে। রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ক্ষমতার লবাসে যেসব অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে তার দৃষ্টান্তমূলকশোস্তির কোন বিধান চোখে পড়ছে না।

লঙ্কায় যে যায় ,সেই হয় রাবন, গ্রামীণ প্রবাদ যেন আমাদের দেশের আগে পিছনের ক্ষমতাসীন সবার ক্ষেত্রেই সমভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও  জাতীয়তাবাদীরা একজন মুক্তিযোদ্ধার চিন্তা থেকে জন্ম নিলেও ক্ষমতার মসনদ  ঝুঁকিমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং এখনও আছে।  মুক্তিযোদ্ধা হয়েও অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে জেল জুলুম হুলিয়া ও মৃত্যুর কাঠগড়ায় নিয়েছিলেন। বিষয়টি আকস্মিক নয়, ক্ষমতার প্রশ্নে ।  এরাই তাদের অনৈতিক কাজকে জায়েজ করার জন্য রাজনীতিতে নতুন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটিয়েছিল।  যে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই । জাতীয়তাবাদী এই মুক্তিযোদ্ধা শাসকের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বরেণ্য ব্যক্তিদের রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় আসামী হতে হয়েছে। আর দেশ স্বাধীনের বিপক্ষের শক্তির গাড়ীতে জাতীয় পতাকা  উড়ানোর যাত্রায় এক হয়েছে।

নীতিহীন নীতি নিয়ে এই রাজনীতি মুষ্টিমেয় মানষের মুখে ঘি মাখন দিলেও বেশির ভাগ মানুষের জীবন জীবিকা আর খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্ন হওয়াই  স্বাভাবিক । ভোগবাদী এই রাজনীতি বিমুখ হয়ে পরেছে মানুষ, তার প্রমান সদ্য নির্বাচন হওয়া সিটি কর্পোরেশন গুলিতে ভোটারের উপস্থিতি।  মুষ্টিমেয় মানুষের আকাশ ছোঁয়া আয় আর অধিকাংশ মানুষের নিজ ব্যবহার সামগ্রী ক্রয় ক্ষমতা সৃষ্টি হচ্ছে না ।  রাজনীতিই সকল উন্নয়নের চাবি কাঠি, পৃথিবীর ইতিহাস সেটাই বলে।

তবে সেই রাজনীতি হতে হবে জনগণের জন্য জনস্বার্থ জনগণের সরকার কায়েম হতে হবে। জনগণের নিকট রাজনৈতিক দল ও শাসকের জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।  ভোট ও ভাতের অধিকার বাস্তবায়নের অবাধ গনতন্ত্র চর্চার সুযোগ থাকতে হবে। রাজনীতিকে হুন্ডাগুন্ডা ,কালো টাকা প্রশাসনিক ও সামরিক আমলামুক্ত হতে হবে। ক্যাশ ক্রাইম ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিকনীতির চর্চার অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করার মধ্য মিয়ে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক এবং জনস্বার্থ নির্ভর রাজনীতির চর্চা বাড়াতে হবে। তাহলেই মানুষের কিছু কল্যাণ হতে পারে, নচেৎ নয়। 

লেখক: অধ্যক্ষ , সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ( বাকবিশিস) ।