• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৯, ০৫:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম

বালিশকাণ্ড : রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার কাণ্ড

বালিশকাণ্ড  : রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার কাণ্ড

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাংলাদেশের মানুষের একটি দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। দেশ সমৃদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন; সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এ স্বপ্নের শুরু সেই ১৯৬১ সালে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় দেশ স্বাধীন হওয়ারও ১০ বছর আগে। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালির সেই স্বপ্ন মুখথুবড়ে পড়ে ছিল। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ২০১০ সালের ২১ মে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে দৃঢ়পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চার শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমাদের দেশে বিদ্যুতের প্রচুর ঘাটতি। দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে তাই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প নেই।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। পুরো প্রকল্পটির ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ঋণ ৯১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিস্তি পরিশোধ করা শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। মূল টাকার সঙ্গে বাড়তি সুদই পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকা। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কর্মকর্তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে গ্রিনসিটি আবাসিক এলাকা। সেখানে থাকবেন ৩৩০ রাশিয়ান নাগরিকসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত দেশীয় প্রকৌশলীরা। তাদের জন্যে টিভি, ফ্রিজ, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে বালিশ সবই কেনা হয়েছে। এসব কিনতেই কেচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। একটি বালিশ কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে উঠাতে খরচ উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬০ টাকা। একটা ফ্রিজের দাম ৯৪ হাজার টাকা, আর সেটা ঘরে তুলতে খরচ ১৪ হাজার টাকা। সাত হাজার টাকার প্রতিটি চুলা ঘরে আনতে খরচ ৬ হাজার ৯শ’ টাকা। ২০ তলা একটি ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা এবং তা ভবনে উঠাতে সব মিলে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা। এসব আসবাবের ক্রয়মূল্য ও সেগুলোকে ফ্ল্যাটে তুলতে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য ও অস্বাভাবিক। দেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। সরকারি টাকায় আকাশসমান দামে এসব আসবাবপত্র কেনা এবং তা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক অর্থব্যয়ের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।

শুধু এসব আসবাবপত্র কেনাই নয়, প্রকল্পটির গাড়িচালকের বেতন ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের বেতনের কাছাকাছি। প্রকল্পটির গাড়িচালকরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন। এতে আরও ১৮ হাজার টাকা পাবেন সেই গাড়িচালক। এতে তাদের বেতন দাঁড়াবে ৯১ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পটির সর্বনিম্ন বেতন রাঁধুনি বা মালীর। প্রকল্প থেকে তিনি বেতন পাবেন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করলে তিনি পাবেন আরও ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার বেতন পড়বে ৭৯ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের বেতনের চেয়েও বেশি! এসব নিয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরবে এ ভয়ঙ্কর দুর্নীতির চর্চা। কী ভয়াবহ লুটতরাজ ও ছিনিমিনি খেলা চলছে এ দেশে জনগণের সম্পদ নিয়ে! ঋণের সাত হাজার টাকার বালিশে কর্মকর্তারা বৌ বাচ্চা নিয়ে ঘুমাবেন। কিন্তু এ টাকা শোধ করতে হবে এ দেশের কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে। এ দেশের সেই কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার ক্ষমতা নেই বলে বিদেশ যেতে গিয়ে গণকবরে ঠাঁই হচ্ছে এ দেশের যুবকদের- ভূমধ্যসাগরে বড় ভাইয়ের হাত ছেড়ে ছোট ভাই লাশ হয়ে ভেসে যাচ্ছে।

কয়েক বছর আগে বিটিসিএলের এ রকম আরেকটি প্রকল্পে একটি সিলিং ফ্যানের দাম এক লাখ এক হাজার টাকা ধরা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়েছিল দেশেজুড়ে। ৪৫০টি ফ্যান কিনতে তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪ কোটি ৫৫ লাখ। পরে বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ ওই সংবাদের প্রতিবাদ করে বলেছিল, এটি যেনতেন ফ্যান নয়। সেটি আইভিএস ফ্যান। একে সিলিং ফ্যান বলা যাবে না। অবশ্য রূপপুর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বালিশের কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। বলেনি, এটি ভিন্ন জাতের বা ভিন্ন নামের কোনো বালিশ!

বাংলাদেশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া এ রকম হাজারো কাণ্ডের মধ্যে বালিশকাণ্ড মাত্র একটি। এ ধরনের কাণ্ড এ দেশে অহরহই ঘটে চলেছে। দেশে চলমান কয়েকটি প্রকল্পের দিকে একটু খেয়াল করলেই বিষয়টি কাছে সবার পরিষ্কার হবে। এক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণব্যয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। বিশ্বে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণব্যয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষস্থানে। ২০০৫ সালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকা। এখন ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনে কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ১২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১১ বছরে ব্যয় বেড়েছে ২৫ গুণ। পাশের দেশ ভারতে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় গড়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকা; চীনে এক কিলোমিটারে গড় ব্যয় ১৩ কোটি টাকা। ইউরোপে কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণব্যয় ২৯ কোটি টাকা। অথচ বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি গড় ব্যয় ৫৪ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশীয় বাজারে শ্রমিকের মজুরি কম থাকলেও ১১ বছরে এক্ষেত্রে নির্মাণব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৫ গুণ! বাংলাদেশের সড়কের মান যে আহামরি কিছু, তাও কিন্তু নয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের মহাসড়কের মান এশিয়ার যে কোনো দেশের তুলনায় নিচে। অথচ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রতিবছরই সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। মহাসড়ক নির্মাণব্যয় বাড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের কমিশন বাণিজ্য। প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখে বলা হয়, নির্মাণসামগ্রীর দাম, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ও পরামর্শকের ভাতা বাড়ছে, তাই বাড়াতে হবে ব্যয়।

দেশে হরিলুটের কায়কারবার শুধু সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেই নয়, যানজট নিরসনের অছিলায় হাজার হাজার কোটি টাকার নয়-ছয় করা হচ্ছে ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতু নির্মাণেও। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে দ্বিগুণ বা তারও বেশি ব্যয়ে উড়াল সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজধানীজুড়ে যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে বা পরিকল্পনায় আছে তার সব কটিরই প্রকল্পব্যয় আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষের যানজট যন্ত্রণাকে পুঁজি করে নেয়া এসব প্রকল্পের কোনোটিই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেগে যায় প্রথমে বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ, কখনো-বা তারও বেশি। কাজের সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে এসব প্রকল্পের ব্যয়ও। কলকাতায় গত বছরের ৯ অক্টোবর মহানগরীর দীর্ঘতম পরমা ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করা হয়। ৮ দশমিক ১৪ কিলোমিটারের ফ্লাইওভারে ব্যয় হয়েছে ৩৯২ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি চীনে ১০০ কিলোমিটারের পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। মালয়েশিয়ায় ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ৫৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ৯০ কোটি টাকা। শুধু ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রেই ব্যয় বেশি নয়, মেট্রোরেল বা বিআরটি প্রকল্পের ব্যয়ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। 

বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছে, ফ্লাইওভার যানজট না কমিয়ে বরং বৈদেশিক দেনার বোঝা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশে ফ্লাইওভার নির্মাণ টাকা বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছে। এজন্য প্রথম দফায় প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ ও অর্থ বাড়ানো হয়। চারদলীয় জোট সরকার ও মহাজোট সরকারের আমলে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে সেই এগিয়ে যাওয়া সবার ক্ষেত্রে সমান দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন চালাতে এখনো নাভিশ্বাস উঠছে। আর হাতেগোনা মুষ্টিমেয় মানুষ দিনের পর দিন ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছে। এ তথ্যেরই সাক্ষ্য দিয়েছে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স। তাদের তথ্যটি হলো, ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়, এ অবস্থান এখন বাংলাদেশের। চীনকে হারিয়ে গত পাঁচ বছরে এ অবস্থানটি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন ১৭ দশমিক ৩ ভাগ হারে অতিধনীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। চীনে বাড়ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধনকুবের বাড়ার হার পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। কিন্তু ধনকুবের বাড়ার নেপথ্যে আসলে কী? আসলে রাষ্ট্রীয় বা প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়া এবং সরকারি ক্রয়-বিক্রয় খাতে ব্যাপক কারচুপি। বালিশকাণ্ডে আমরা যেটা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুটের চিত্র শাসকদের চোখে পড়ে না বলেই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে স্পিড মানি দেওয়া কোনো অবৈধ বিষয় নয়।

এসব বৈষম্যের কারণেই একদিকে কিছু লোক সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিচারহীনতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (সিপিডি) গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সমাজের সবচেয়ে নিচের দিকের ৫ শতাংশের আয় মোট আয়ের দশমিক ২৩ শতাংশ। যেখানে ২০১০ সালে ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। অপর গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন ‘অন্বেষণ’ বলছে,  ২০১০ সালে দেশের ১০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের মোট জাতীয় আয়ে ২ শতাংশ অবদান ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তা কমে ১ দশমিক ০১ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১০ সালে দেশের ১০ শতাংশ ধনী লোকের মোট জাতীয় আয়ে অবদান ছিল ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ; কিন্তু ২০১৬ সালে তা বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে গরিব আরও গরিব হচ্ছে, বিপরীতে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে। এ কারণে নিচের দিকের সাধারণ মানুষ বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত থাকছেন।

এক সাগর রক্ত আর আড়াই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা এ ধরনের হরিলুটের বাংলাদেশ প্রত্যাশা করিনি। বাংলাদেশের জনসাধারণ সব অবস্থায় দেশের সার্বিক কল্যাণ প্রত্যাশা করে। দেশ এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে, দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটুক, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর হোক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি সুন্দর-স্বস্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক- এমন আকাঙ্ক্ষাই সাধারণ মানুষের। এ চাওয়া শুধু চাওয়ার জন্য চাওয়া নয়, তাদের অন্তরের অন্তস্তলের কামনাও বটে। তাদের এ কামনা বাস্তবায়নের জন্যই তারা ক্ষমতাসীনদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা এখনও বিশ্বাস করে-  জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুস্থতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ দেশের রাজনীতিবিদরা সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম।


লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন