• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০১৯, ০৭:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০১৯, ০৪:২৪ পিএম

গরিবগঞ্জের রূপকথা

গরিবগঞ্জের রূপকথা

আমার বেড়ে ওঠার এলাকা নৈসর্গিকভাবে সুন্দর একটি এলাকা। এখানের মানুষের একাত্মতা সংস্কৃতিমনস্কতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে শাণিত করেছে। খাল-বিল অধ্যুষিত অলস পলির মায়ায় বিধৌত সে জনপদ । সাংস্কৃতিকভাবে ঋদ্ধ সে জনপদে শান্তি ছিলো যতোটা ততোটা বিত্ত ছিল না। অনগ্রসর এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ছিলো এ অঞ্চল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী  সময়ে এ অঞ্চলের ঊল্লেখযেগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি। ‘৭৫ পরবর্তীতে সময়ে উন্নয়নের প্রশ্নই আসে না। এটা বঙ্গবন্ধুর এলাকা  বলে কোন উন্নয়ন করেনি কেউ। জেলা সদরে যেতে দিন শেষ হয়ে যেত।  এখন সে এলাকায় বিত্ত-বৈভব বেড়েছে, বেড়েছে সাংস্কৃতিক দরিদ্রতা। মানুষের সাথে মানুষের সখ্য কমে গেছে। বন্ধুত্ব বিত্তের তোড়ে ঝুলে আছে রাং ঝালাই করা কড়াইয়ের আংটার মতো। সেই ছায়াঢাকা, পাখিডাকা ধান-গান পাখির ডাকের এলাকাটি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। বিত্তের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে দেশপ্রেম মানবিকতা। আমাদের জীবন, পরিবেশ-প্রতিবেশের একান্ত অনুষঙ্গগুলো  হারিয়ে যাচ্ছে। সেই নিসর্গ, বিলের জিওল মাছ , সংস্হাকৃতি প্রবণতা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।  হারাচ্ছে সাত পুরুষের পেশা। বিত্তের প্রভাবে খোলস বদলাতে ব্যস্ত এক শ্রেনীর মানুষ। খোলস বদলাতে বদলাচ্ছেপদবি, পেশা, পরিচয় । বড় বংশের পদবি যুক্ত করছে নামের সাথে। কেন করছে? এর উত্তর অনেক সহজ। পুঁজির অসম বিকাশ। কার্ল মার্কস তার এক লেখায় পুঁজি সম্বন্ধে বলেছেন, পুঁজিরও একটি কল্যাণকর দিক আছে। পুঁজির বিকাশ হলে শিল্পকারখানা হয়। অজস্র শ্রমিক চাকরি পায়, সমাজে অবহেলিত মানুষের রুটি-রুজির সংস্থান হয়। কিন্তু আমাদের চারপাশের দৃশ্যাবলিেএকদম অন্য রকম।

এখানে শিল্পের বিকাশ যতটা হয়েছে, পুঁজির আগমন ঘটেছে তার চেয়ে বেশি। কালোটাকার আধিপত্যে উপড়ে গেছে মানবিকতার শেকড়। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিবিসির এক প্রতিবেদন দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলেন দেশের প্রাজ্ঞজনেরা। লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান 'ওয়েলথ এক্স' বিশ্বের অতি ধনীদের ওপর সর্বশেষ রিপোর্টটি প্রকাশ করেছিল তখন। তাদের মতে, বিশ্বে ‘অতি ধনী’ মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে বাংলাদেশে। এই খবর আমাদের দৃষ্টিকে নাড়া দিয়েছিল। অতি ধনী বলে তাদেরই বিবেচনা করা হয়, যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যাদের সম্পদ ২৫০ কোটি টাকার বেশি, তারাই অতি ধনী বলে বিবেচিত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে অতি সম্পদশালীর বৃদ্ধির হার ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশের কিছু কিছু গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলেও এর কারণ এবং এর রাজনৈতিক-অর্থনীতির কার্যকারণ বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।  আলোচনা না হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে এটা কোনো নতুন খবর নয়।  দেশে একটি নব্য ধনিক শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে। এই খবরকে অবশ্য কেউ কেউ এমনভাবেও বিবেচনা করেছিলেন যে এটা কি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলাফল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেক ভাবতে হবে। এ বিষয় নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন আলোচনা আছে। এসব নব্য ধনীর কথা সামনে রেখে সারা দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। দেশে অতিদ্রুত এত ধনী বেড়ে যাওয়ায় যারা বিস্মিত, তাদের জন্য আমার এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার উপজেলার  বিগত ১০ বছরের অর্থনৈতিক পরিবর্তন তুলে ধরতে চাইছি, যার মধ্য দিয়ে সারাটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, কোটিপতি বৃদ্ধির আদ্যোপান্ত বোঝা সম্ভব।কারণ শহর কোন মানচিত্র সৃষ্টি করে না। তাই গ্রামের উন্নয়ন বা দুর্নীতির আলোকে সারাদেশকে বিবেচনা করা সম্ভব।

সার্বিকভাবে আমি আমার এলাকার কথা যদি বলি তাহলে এ তথ্যে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমার এলাকায় ১২ সম্প্রদায়ের বসবাস। ফলে এলাকার অসাম্প্রদায়িক চেতনা বেশ আগে থেকেই সুসংবদ্ধ। এখানে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশাজীবীরাও বাস করে, যারা জেলে, বাদ্যকর, ধোপা, নাপিত, কামার, কুমোর, কারিগর । তারা আগেও ছিল, এখনো আছে। এদের পাড়াও আলাদা। সব পাড়ায়ই সবার যাতায়াত অবাধ। মানবিক এক সমাজ ছিল এখানে। জাত-পাতের বিভেদ কোনো সময় দেখা দেয়নি। মানুষ হিসেবে মানবিকতার পরিচয়টা মুখ্য ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে একটা বিবর্তন চোখে পড়ার মতো। এসব বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় গিয়ে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। এমনও আছে, কে কী করে তা জানে না কেউ বা জানলেও কমসংখ্যক লোকজন জানে। ঈদ-কোরবানি-পূজায় তারা দেশে আসে।

বড় করে উৎসব করে, প্রচুর মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ায় সবাই তাদের গুণগান করে। গ্রামের মানুষকে সম্মান করলে, যত্নআত্তি করলে কেন গুণগান গাইবে না? অর্থনৈতিক পরিবর্তন এলাকার ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছে। যাদের গোলপাতার ঘর ছিল, তারা বাড়িতে ভবন করেছে। যারা সাধারণ ব্যবসায়ী ছিল তারা অনেক বড় ব্যবসায়ী। যেসব পরিবারকে কেউ জানত না, তারাই এখন সামনের কাতারে। এসব বিষয় অনেক ইতিবাচক। আমার ভাবতে বুক ভরে যায়, আমার এলাকায় গরিব মানুষ বা কুঁড়েঘর এখন আর নেই। অজস্র হোন্ডায় চড়ে তরুণেরা দ্রুতগতিতে চোখের চতুষ্কোণ থেকে মিলিয়ে যায়। আমাদের ছোটবেলায় আমরা একটা হোন্ডা দেখতাম। পূর্বপাড়া মিশনের এক মিশনারি, যিনি বিদেশি ছিলেন, তিনি চালাতেন। আমরা বিস্মিত হয়ে দেখতাম। এখন তার চেয়ে অনেক উন্নত হোন্ডা প্রায় প্রতি বাড়িতেই আছে। কী দারুণ ফোর লেনের রাস্তা। যেখানে জেলা শহরে যেতে ৭ ঘণ্টা সময় লাগত, সেখানে এখন ২০-২৫ মিনিটেই যাওয়া যায়। কত ঠিকাদার এখন আমাদের এলাকায়। আমাদের ছাত্রজীবনে দেখেছি আমাদের এলাকার কাজ করতে দূরদূরান্ত থেকে প্রভাবশালী ঠিকাদাররা আসত। এখন আমার এলাকায় বারো সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক ঠিকাদার আছেন, তারা বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক।

উন্নয়নের  জোয়ারের একটা শ্রেণী ফুলে ফেঁপে উঠেছে, ফুলে উঠার সে হার ভাবনার চেয়ে  চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু সাথে এটাও ঠিক, আমার এলাকায় যেসব সড়ক তা একাধিকবার করতে হয়। বৃষ্টিতে পিচ ধুয়ে যাওয়ার সংবাদ আসে। পয়সার হাটের রাস্তায় প্রতিবছর ঈদে, কোরবানিতে কাজ করতে হয়, সামাজিক মাধ্যমে এসব দেখেছি। এমন অভিযোগ আছে। বড় বড় অফিস ভবন করার পরে সেগুলো দ্রুত অকার্যকর হয়ে যায়। বড় অঙ্কের টাকার ভবন তৈরীর অল্প কয়েক দিন যেতেই ছাদ চুয়ে জল পড়ে। খালের ওপর রাস্তাহীন জায়গায় ব্রিজ করা হয়। পারাপারের পথ নেই। ব্রিজ পার হয়ে ছোট একটা বিলে নামতে হবে। তবু ব্রিজ হওয়া চাই। ঘাঘর নদীটা দখল হয়ে যাচ্ছে। তার পাড়ে বড় বড় স্থাপনা। সেগুলো সরাতে পটারবে না কেউ। এসব কাজের প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারো। প্রতিবাদ কে করবে? এই রোগ তো এখন ঘরে ঘরে। কে কার চিকিৎসা করবে? তবে বৃহৎ সংকটে একটি অংশের জনগণ। যারা এসব বিত্তের ধারে-কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তারা প্রতিদিন দরিদ্র হচ্ছে। লক্ষ মানুষকে দরিদ্র না করলে শত মানুষ কোটিপতি হয় কীভাবে? এলাকায় কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট হয়নি। কোনো কারখানা নেই। সাধারণ মানুষের কাজের ক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে। তাহলে এ টাকার উৎস কোথায়? দুদক কতজনকে জিজ্ঞেস করবে এ কথা ? গ্রামে এনজিওর কিস্তি দিতে এখন নব্য একদল সুদখোরের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয় দরিদ্র মানুষদের। বহু মাপের সুদখোরে এলাকা ভরে আছে। কোটি টাকা থেকে হাজার টাকা সুদে দেয়ার লোক আছে। কারা এসবক কারবার করে তা সবার জানা কিন্তু কি হবে তাতে। টাকা আছে যার তারা এলাকায় প্রণম্য। 

কিন্তু সাধারণ মানুষ মুটে-মজুর- হতদরিদ্র যারা তারা কিস্তি শোধ করতে সুদ নেয়। কিন্তু কিস্তির প্যাচে পিষ্ট দরিদ্র শ্রেণী কিস্তি শোধ করতে পানে না। শেষে  কিস্তি ও সুদ দুইয়ের  ভয়ে এলাকা ছাড়ে বা ভিটে-মাটি বন্ধক রাখতে বাধ্য হয় । ধর্মীয় উপাসনালয়ে মানুষ যাওয়ার হার বেড়েছে, বেড়েছে গরিবকে নিঃস্ব করার এমএলএম ব্যবসা, চেকের ব্যবসা, সুদের ব্যবসা বেড়েছে।

চেকের ব্যবসাটা অভিনব। কোনো কায়দায় এটিকে রোধ করা সম্ভব নয়। এটা শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেলায় হয়। ছাপোষা শিক্ষকরা মেয়ে বিয়ে বা জমি চাষ করতে কোনো মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়। তার বদৌলতে সরকারি চেক মহাজনকে প্রতি পাতায় সই করে দিয়ে আসতে হয়। শতকরা ৬/১০ টাকা সুদে হিসাব করা হয়। শিক্ষক টাকা শোধ দিতে না পারা পর্যন্ত চেক থেকে টাকা তোলেন মহাজন। শত শত শিক্ষকের চেক এভাবে বন্ধক রাখা আছে মহাজনদের ঘরে। কেউ তার কোনো প্রতিবাদ করবে না। এসব মহাজন নব্য মহাজনরা বিশাল সুদের ব্যবসা খুলে বসেছে। এলাকার উন্নয়নে ঠিকাদাররাও এসব সুদের আওতায় কাজ করেন। কেউ সরকারকে সুদ খাওয়ার কর দেন না।

বিভিন্নভাবেই ধনী হয়েছে এলাকাবাসী।  হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অন্ত্যজ শ্রেণির  যারা , তারা পেশা বদলে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে।  কালোটাকার বৈভবে ধরাকে সরাজ্ঞান করে তারা পেশার সাথে পদবি বদলে ফেলেছে। শেখ, চৌধুরী, কাজী, সৈয়দ, সেন ,বণিক, কর্মকার পদবি ঝুলিয়ে দিয়েছে নামের শেষে। একবারও ভাবেনি পদবি কি মানুষ বানাতে পারে? আমরা পড়েছি : ‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’। বাংলার সেরা কবিয়াল কানাই লাল শীল বা ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের অদ্বৈত মল্লবর্মন জেলে ছিলেন। বিনয়বাসী জলদাসের মতো বিশ্বমানের ঢুলী পদবি বদলাননি তাতে তাদের ছোট হতে হয়েছে? নাগার্সি সম্প্রদায়ের লোকেরা বাদ্যকর। অসম্ভব গুণী শিল্পী তারা। কোটালীপাড়ায় এক সময় এমন সব শিল্পী ছিলো এই সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা জাতীয় মানের ছিলেন। বালিয়াভাঙ্গা স্কুলের পাশের সুরেন নাগার্সিরা ঢোল বাজাতেন বিশ্বখ্যাত সানাই বাদক বিসমিল্লাহ খাঁর সঙ্গে।  বাদ্য বাজানোর জন্য  নাগার্সি সম্প্রদায়েরর নির্ভর করতে হয় হিন্দুবাড়ির বিয়ে, বারো মাসের তেরো পার্বণের ওপর।

তাই তাদের নামও ছিল বাঙালি নাম। যেমন জীবন বাদ্যকর, সুখেন বাদ্যকর ইত্যাদি। কিন্তু যারা এখন প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক, তারা নাম বদলে ফেলছেন। পেশা ধরে আছে কম লোকজন। যারা আছেন তারা শিল্পী, তারা সবার সেরা। আজও মানুষ অক্কুর-শুক্কুর, সুরেন বাজনাদারের কথা শুনতে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। এমন মহৎ শিল্পীরা  মানুষের মধ্যে সেরা। অথচ তাদেরও বদলে ফেলা হচ্ছে। বিত্তের চাকচিক্য, সংস্কৃতিকে উৎখাত করতে ব্যস্ত। সুরেনকে শামসুদ্দিন, জীবনকে জয়নদ্দিন করে কেউ বড় হতে পারে না। তাহলে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম তার বাবার জেলে পেশাটির কথা মুছে দিতে পারতেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতাপশালী নেতা যোশেফ স্ট্যালিন তার জন্ম যে মুচি পরিবারে, সেটি মুছে দিতে পারতেন। তারা করেননি। তারা মানুষ হতে চেয়েছিলেন। মহান সেসব মানুষ পদ-পদবির কথা না ভেবে নিজের কাজটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। অথচ কাঁচা টাকার এত জোর যে সব বদলে দিচ্ছে নিমেষে। আমার এলাকার খালটি বন্ধ। ওই খালে আমি সাঁতার কাটতে শিখেছি।

শুধু কচুরিপানা সাফ করলে এখনো নৌকা চলতে পারবে। ইতিমধ্যে খালের অনেক জায়গা দখল হয়েছে। অনেকে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এটাকে চলাচলের উপযোগী করলে নৌপথে চলাচল বাড়ত। জলাধার বাড়ত, উষ্ণতা কমত। এলাকার সৌন্দর্য ফুটে উঠত। কিন্তু বিত্তের কাছে সৌন্দর্য, মানবিকতা কোনো বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু ধনী-গরিব না, হিন্দু-মুসলমান না, অচ্ছুত বিষয়টি টেনে তুলছে নতুন টাকা। একটি এলাকা যেখানে ধান ছিল, গান ছিল, বারোমাসি উৎসব ছিল- যাত্রা, কীর্তন, রয়ানি, রামযাত্রা, রামায়ণ, গাজীর গীতে মুখর ছিল । ইট-সুরকির আধিক্যে সেখানে আধুনিক সুবিধা সব বেড়েছে। কিন্তু একটা লাইব্রেরি হয়নি। আধুনিক ধারার একটি বিদ্যাপীঠ হয়নি। জেলা শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, অনার্স  কলেজ আছে। কিন্তু মাঠগুলো বেকার পড়ে থাকে। শিক্ষিত হচ্ছে যত ততো  মানবিক মানুষ হচ্ছে না। এ অঞ্চলে গুনীজন আগে যারা ছিলেন তারা এখন পেছন সারির মানুষ। দুর্নীতিবাজ,সুদখোর,ঘুষখোরদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। তাদের অসততাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে না। বরং তারাই সম্মানিত। এ সমাজে  যেকোন ভাবে কতিপয় মানুষ বিত্তবান হয়েছে- জনপদের চাকচিক্য বাড়লে গরিবের সংখ্যাও বেড়েছে। সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাংস্কৃতিকভাবে ঋদ্ধ এলাকাটি এখন গরিবগঞ্জে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, বাংলাদেশের প্রান্তিক জনপদের আলোকে বিচার করে দেখতে হবে কেন ‘অতি ধনী’র সংখ্যা বাড়বে না।

লেখক : সাংবাদিক