• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০১৯, ০৫:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৬, ২০১৯, ০৬:১০ পিএম

ইতিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যত মিথ্যাচার

ইতিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যত মিথ্যাচার
গোলাম মোস্তফা

ইরানের মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে আবার যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। আবার বুঝি যুদ্ধ লেগে গেল! ড্রোন ভূপাতিত করার কয়েক দিন আগে ওমান উপসাগরে তেলবাহী দুটি জাহাজের ওপর হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্বেগজনক বলে উড়িয়ে দেয়। এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইরান হামলা করতে পারে বলে উপসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ পাঠায় এবং কাতারে বোমারু বিমান মোতায়েন করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। গত সোমবারও ট্রাম্প ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহুবার এ ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ মার্কিন সামরিক ড্র্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার পরও শেষমুহূর্তে তা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কখনও সন্ত্রাস দমন, কখনও মানবাধিকার রক্ষা এবং কখনও-বা রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের নামে বিশ্বের নানা দেশে চাপিয়ে দেয় ধ্বংসাত্মক নানা যুদ্ধ। ফলে বহু বছরের জন্য পিছিয়ে যাচ্ছে এসব দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি। অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে অগুনতি মানুষকে। পঙ্গুত্ব বরণ করে পশুর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব দেশের হিসাবহীন মানুষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আমরা যা বলি তা নির্দ্বিধায় বিশ্বের সবাইকে মেনে নিতে হবে। কেউ কোনো টু শব্দ করতে পারবে না। এ ধরনের দাম্ভিকতা এবং মন-মানসিকতার জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার হাতকে রঞ্জিত করেছে আফ্রিকা, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষের রক্তে। গুয়ান্তানামো বে ও আবু গারিব কারাগারেও যেসব ঘৃণ্য নির্যাতন করেছে মার্কিন সেনারা, তা বিশ্বের মানুষ কখনও ভুলবে বলে মনে হয় না।

‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যাচার ও ধূর্তামি সাধারণ মানুষের চোখে মূর্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারছিল না। অনর্থক এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছিল। এ কারণে আমেরিকা নিরপেক্ষ থাকার ভান করে প্রথম দিকে যুদ্ধে জড়াতে পারেনি। যুদ্ধে জড়ানোর জন্য জাপানকে নানা উসকানি দিয়ে একপ্রকার বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করার জন্য’’

বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একক পরাশক্তি। এ পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ার পিছনে রয়েছে পৃথিবীর লাখ লাখ নিরীহ মানুষের জীবনদান। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন এবং চরম মিথ্যাচারের মাধ্যমে। বছরের পর বছর স্থানীয় অধিবাসীদের পশুর মতো হত্যা করে তাদের ভূমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আফ্রিকার হাজার হাজার মানুষকে অপহরণ ও বন্দি করে দাস বানানোর লোমহর্ষক ইতিহাসও কম-বেশি সবার জানা। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে বড় বড় জাহাজ এনে পশ্চিম আফ্রিকার গাম্বিয়াসহ এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে বন্দি করে অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হতো। এভাবে তারা স্বাধীন মানুষকে বন্দি করে দাসশ্রমে বাধ্য করত। আজ আমেরিকায় যারা কৃষ্ণকায়, তারা এদেরই বংশধর। এখনও আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গরা বর্ণবৈষম্যের চরম শিকার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যাচার ও ধূর্তামি সাধারণ মানুষের চোখে মূর্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারছিল না। অনর্থক এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতায় খোদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছিল। এ কারণে আমেরিকা নিরপেক্ষ থাকার ভান করে প্রথম দিকে যুদ্ধে জড়াতে পারেনি। যুদ্ধে জড়ানোর জন্য জাপানকে নানা উসকানি দিয়ে একপ্রকার বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করার জন্য। জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাতানো ফাঁদে ধরা দেয়। জাপান পার্ল হারবারে হামলা করে বসে। পার্ল হারবারে হামলার অজুহাতে যুদ্ধে নামার সুযোগ পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

এ সম্পর্কে মার্কিন সরকার আজও যুক্তি দেখায়, যদি পরমাণু বোমা ব্যবহার করে জাপানের দুটি শহরের ২ লাখ মানুষকে হত্যা করা না হতো, তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলতেই থাকত এবং বিশ্বে আরও ২০ লাখ মানুষ নিহত হতো। পরমাণু বোমা ব্যবহার করে মার্কিন সরকার নাকি মানবতার সেবাই করেছে।এটা হচ্ছে বিশ্বে সবচেয়ে প্রতারণাময় ও অদ্ভুত মিথ্যাচার। অথচ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রধান স্তম্ভ হিটলার জাপানে পরমাণু বোমা বর্ষণের কয়েক মাস আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আর জাপানে ওই হামলার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেক বড় হোতা ইতালির মুসোলিনিও বন্দি হয়েছিলেন এবং জাপানিরাও দুই মাস আগে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ বলতে গেলে তখন কোনো যুদ্ধই ছিল না। তবু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আসলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই নতুন অস্ত্রকে বাস্তব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিল। এতে খেসারত দিতে হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকির নিরপরাধ ২ লাখ মানুষকে। অথচ ইতিহাসের নৃশংসতম এ গণহত্যাকে এখনও মানবতার সেবা বলে প্রচার করে তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে লিপ্ত হয় কোরিয়ায়। এ যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র আগের মতোই মিথ্যাচারের পর মিথ্যাচার করে। জাতিসংঘের অনুমোদনের আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের পতাকা ব্যবহার করে যুদ্ধে নেমে পড়ে। কোরিয়া যুদ্ধের সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা ছিল চীনকে আক্রমণ করা এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করা। এজন্য মার্কিন সেনাপতি জেনারেল ম্যাক আর্থার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে চীন সীমান্তে হামলা চালায়। কিন্তু চীনের লাল ফৌজের হাতে চরম মার খেয়ে রণাঙ্গন থেকে লেজ গুটিয়ে পালাতে হয় তাদের। লজ্জাকর এ পরাজয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে জেনারেল ম্যাক আর্থারকে বরখাস্ত করেন।

‘‘মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক এবং তেল-গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার কব্জা করতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিয়ে যে খেলা খেলছে, তা ¯স্রেফ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। অনেক পরাশক্তিই আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই মিথ্যাচার ও ভণ্ডামিরও অবসান অবশ্যই ঘটবে, হয়তো আরও কিছু রক্ত ঝরার পর’’ 

কোরিয়া যুদ্ধে লজ্জাকর পরাজয়ের পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চৈতন্যোদয় হয় না। কিছুদিনের মধ্যে তাদের আবার ভিয়েতনামে যুদ্ধ করার সাধ জাগে। ভিয়েতনামে তখন স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে। হো চি মিনের নেতৃত্বে জনগণ ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে রত। দিয়েনকিয়েনফুয়ের যুদ্ধে ভিয়েতকঙ সেনাদের হাতে ফরাসি সেনাবাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। তখন ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধ ব্যর্থ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ফরাসিদের সাহায্য করার নামে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর পরাজিত ফরাসিরা সরে গেলে তারা একাই যুদ্ধ শুরু করে। আমেরিকার হাতে বিপুল মারণাস্ত্র। নাপাম বোমাসহ সব মারণাস্ত্র ভিয়েতনামবাসীর ওপর প্রয়োগ দ্বারা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করার রেকর্ড স্থাপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপরও ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হয়নি। জেনারেল গিয়াপের ভিয়েতকঙ বাহিনীর হাতে চূড়ান্ত মার খেয়ে তারা দলে দলে লাওস থেকে পালাতে বাধ্য হয়। জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সুপার পাওয়ারের দানবশক্তিও যে কতটা তুচ্ছ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ তারই প্রমাণ।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের শোচনীয় পরাজয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুকাল বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোয় সামরিক হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখে। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবার যুদ্ধে জড়ানোর সাধ জাগে! যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয় তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে। দীর্ঘদিন ইরাক-ইরানে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখার পর শুরু করে মিথ্যা অজুহাতে সাদ্দাম হোসেনকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে যুদ্ধ। ১২ বছর অর্থনৈতিক অবরোধ এবং জাতিসংঘ দ্বারা অস্ত্র তল্লাশি চালিয়েও সাদ্দাম হোসেনকে কাবু করতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্র দু-দুটি গালফ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করেও যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে; কিন্তু যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জয় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরাক আরেক ভিয়েতনামে পরিণত হতে চলেছে। ইরাক এখন বিশ্বের একটি ভয়ানক কিলিং ফিল্ড জোন।

বিশ্বে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যে যে রক্ত ঝরছে, তাতেও আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়ার কাজ করেছে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ তথা ছয় দিনের যুদ্ধ চলাকালে তাদের মিথ্যাচারের নগ্ন বহির্প্রকাশ দেখা যায়। ১৯৬৭ সালের ৮ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস লিবার্টি জাহাজের ওপর অতর্কিতে জেট প্লেন এবং টর্পেডো দিয়ে আক্রমণ করে ইসরায়েল। ওই আক্রমণে নিহত হন মার্কিন নৌবাহিনীর ৩২ সদস্য এবং আহত হন আরও ১৭১ জন।

‘‘পৃথিবী নামক গ্রহে আজ যে নরকের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, তার মূলে রয়েছে এই একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ যুদ্ধবাজ পরাশক্তিই নিজেদেরকে মানবাধিকারবাদী, শান্তিকামী, গণতন্ত্রকামী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী বলে জাহির করে থাকে’’

ইউএসএস লিবার্টি হামলাই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-হামলা, যার কোনো সংসদীয় তদন্ত সংঘটিত হয়নি। লিবার্টিতে আক্রমণের কারণ হিসেবে বিবিসির ‘ডেড ইন দ্য ওয়াটার’ ডকুমেন্টারিতে দাবি করা হয়, ইসরায়েলের আসল উদ্দেশ্য ছিল এ হামলার দায় মিসরের ওপর চাপানো, যেন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এ হামলার পেছনে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনও জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন তথ্যে প্রতীয়মান। সাংবাদিক পিটার হুমানের লেখা ‘অপারেশন সায়ানাইড’ বইয়েও এ রকমই দাবি করা হয়েছে।

পৃথিবী নামক গ্রহে আজ যে নরকের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে, তার মূলে রয়েছে এই একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ যুদ্ধবাজ পরাশক্তিই নিজেদেরকে মানবাধিকারবাদী, শান্তিকামী, গণতন্ত্রকামী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী বলে জাহির করে থাকে। অথচ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নানা দেশের স্বাধীনচেতা ও মার্কিননীতির বিরোধী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাই ছিল গত অর্ধশতকে মার্কিন সরকারগুলোর রাষ্ট্রীয় মূল নীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার অজুহাতে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে হামলা চালায় আফগানিস্তানে। ২০০৩ সালেও গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংসের নামে তারা হামলা চালায় ইরাকে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারই মধ্যপ্রাচ্যে আর আফগানিস্তানে সন্ত্রাস সৃষ্টি ও জোরদারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এ কথা আজ বিশ্বের সবাই জানে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারই আশির দশকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য সাদ্দাম হোসেনকে প্রযুক্তি ও মাল-মসলা জুগিয়েছিল।

৯/১১-এর ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র আল কায়েদাকে দায়ী করে ঘটনার পরদিনই ঘোষণা দিয়ে শুরু করে সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের মানুষের কাছে এ কথা আজ স্পষ্ট, আল কায়েদার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত অভিযোগের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। ৯/১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের একটি ইহুদিবাদী যৌথ দুষ্কর্ম, উদ্দেশ্যমূলক যৌথ সন্ত্রাসী কর্ম। আল কায়েদার ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইহুদিদের যোগসাজশে এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফলস-ফ্যাগ অপারেশন বা কভার্ট অপারেশন মাত্র।

৯/১১ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক মিথ্যাচার এবং সুষ্ঠু তদন্তকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। ৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ দেড় দশক ধরে চালিয়ে আসছে, তাতে এক কোটিরও বেশি মুসলমান মারা গেছেন। প্রায়ই বলা হয়, টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তিন হাজার লোক হত্যার বদলা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটের এই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ! আসলে এটি নিওকন আমেরিকান ও জায়নবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের এক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, মার্কিন জোটের এক সন্ত্রাস, যার শুরু ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে।

আমরা বিশ্ববাসী এখনও ঈশপের গল্প বিস্মৃত হইনি। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক এবং তেল-গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার কব্জা করতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিয়ে যে খেলা খেলছে, তা ¯স্রেফ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। অনেক পরাশক্তিই আজ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই মিথ্যাচার ও ভণ্ডামিরও অবসান অবশ্যই ঘটবে, হয়তো আরও কিছু রক্ত ঝরার পর।  

লেখক : সাংবাদিক