• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম

রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন

রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন

বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন অনেক দেশের জন্যই ঈর্ষার কারণ। এক সময়ের `তলাবিহীন ঝুড়ি' বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে। আমরা যেমন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই, তেমনি আকাঙ্ক্ষা উন্নত দেশ হওয়ারও। তবে দুর্নীতি নামক ঘুণপোকা আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নকেই ব্যাহত করছে না, রাজনৈতিক অঙ্গনের সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা সব অর্জনকে ধূলিসাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় নীতি ও শাসন কাঠামোতে দুর্নীতি-সহায়ক শক্তির প্রভাব।

আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক স্বাধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য দরকার ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতা। আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে সে স্বাধীনতা অর্জন করলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য আজও আমাদের বিভিন্ন দোলাচল, অনিশ্চয়তা ও চড়াই-উতরাই ডিঙাতে হচ্ছে। এ দোলাচল ও অনিশ্চয়তার মূলে কাজ করছে রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভাব। অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা। এক্ষেত্রেই আমরা ধুঁকে ধুঁকে মরছি। অর্থনীতির বাঞ্ছিত বিকাশ ও টেকসই প্রতিষ্ঠা পেতে হলে চিন্তাভাবনায়, নীতি-পরিকল্পনায় ও কাজেকর্মে সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল- সব চিন্তাচেতনাতেই গণপ্রজাতন্ত্রের অন্তর্নিহিত শক্তি ও প্রেরণার উৎস। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার নির্বাচিত হবে- এমনটিই নিয়ম। রাষ্ট্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে নির্ভর করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শক্তিশালী অবস্থান ও বিকাশ। 

জবাবদিহিতা ও সুশাসন না থাকলে সমাজে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বেড়ে যায় দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতা। সমাজের সর্বত্র বিরাজ করে একটা চাপা কষ্ট ও দীর্ঘশ্বাস। আমাদের সমাজের দিকে তাকালে আমরা আজ কী দেখতে পাই? সরকার নানাভাবে সমাজে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বারবার সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হলেও নিম্নস্তরে তা কার্যকর না হওয়ায় অবস্থার দৃশ্যমান কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাফল্য যতটা অর্জিত হওয়া উচিত ছিল, তা হচ্ছে না। 

কিন্তু রাষ্ট্রে সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে সম্প্রতি আমাদের উচ্চ আদালত থেকে এমন সব জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে আদেশ আসছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতাও পাচ্ছে। কিন্তু এসব কাজ করার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। তাদের ব্যর্থতার জন্যই আজ বিচার বিভাগকে এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) বা জনস্বার্থে মামলার ধারণাটি বিশ্বের অনেক দেশেই আজ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিবেশী ভারতসহ এ উপমহাদেশে জনস্বার্থে মামলা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেটা মূলত শাসনগত ব্যর্থতার জন্যই। উন্নত গণতন্ত্রের দেশে এর প্রকোপ তেমন একটা দেখা যায় না। পরিবেশের একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আশির দশকের শেষদিকে বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে পিআইএল স্বীকৃতি পায়। এরপর ধীরে ধীরে জনস্বার্থে রিট জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

সম্প্রতি যেসব বিষয় গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত, তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ, খাদ্যে ভেজাল রোধ করা, দুদককে সচল করা, নদী দখলদারদের উৎখাত করা, অনাগ্রহী পুলিশকে তদন্ত করতে বাধ্য করা; সর্বশেষ আলোচিত হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণখেলাপিবান্ধব পরিপত্রের কার্যকারিতা স্থগিত করা। এ সমস্যাগুলো আমজনতাকে প্রতিনিয়ত ভোগাচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা এসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠান আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও সাধারণ মানুষ কার্যকর কোনো ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার জন্যই শাসন বিভাগের কাজ আজ বিচার বিভাগকে করতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের অন্যতম উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব হলো দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা। সেটা করতে হলে সমাজের সর্বত্র সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। সুশাসন ও জবাবদিহিতা ছাড়া যেমন গণতন্ত্রকে পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা যায় না, তেমনি গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন ও জবাবদিহিতাকেও প্রতিষ্ঠা করা যায় না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যতিরেকেও রাষ্ট্রনায়কগণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের উন্নতিসাধন করতে পারেন। তবে সে উন্নতি সুষম, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই হয় না। বৃহৎ দেশ চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কিন্তু উন্নতিতে দেশটি বহু গণতান্ত্রিক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত গণতন্ত্র চর্চায় পৃথিবীর বহু উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে; কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে থাকলেও তাদের উন্নতি জবাবদিহিমূলক ও বেশ টেকসই। আসলে গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়ন পরস্পরের পরিপূরক; একটি ছাড়া অন্যটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না।

শুধু গণতন্ত্র বা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হলেই যে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং সর্বোচ্চ জনকল্যাণ সাধিত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বের এমন অনেক দেশের উদাহরণ দেয়া যাবে যারা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে; কিন্তু সর্বোত্তম জনকল্যাণ সাধন করতে পারেনি। বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। সেই যুক্তরাষ্ট্রও তার দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণসাধন অথবা দারিদ্র্য দূরীকরণে সফল হতে পারেনি। দেশটিতে এখনও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য পর্বতপ্রমাণ। শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা জনগণের ভোটই অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সর্বাধিক জনকল্যাণকর সমাজব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

ডা. মাহাথির মোহাম্মদ একটানা প্রায় ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করেছেন। নতুন করে আবার শুরু করেছেন। তার টানা শাসন সময়ে মালয়েশিয়ায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গণতন্ত্রি ছল না। কিন্তু উন্নতি হয়েছে বিস্ময়করভাবে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে শাসনক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে। মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন মালয়েশিয়া শাসনক্ষমতার ধারাবাহিকতা এবং উন্নয়নের গতি সচল রাখার পাশাপাশি আরও যে কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন তা হলো, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। যেটা আমাদের দেশে বড়ই অভাব। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃত্ববাদী সরকারও জনগণকে প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নতি উপহার দিয়েছে, তবু সে দেশের জনগণ সুখী হতে পারেনি। তাই তারা রাস্তায় নেমে, সংগ্রাম করে সুশাসন ও জবাবদিহিতা হাসিল করেছে। রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই।

গণতন্ত্র মানে শুধু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া নয়। নির্বাচন নাগরিকদের মতপ্রকাশের একটি তাৎপর্যবহ শর্ত মাত্র। গণতন্ত্র রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণের জন্য, রাষ্ট্রকে আধুনিকতার উচ্চশিখরে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হলো জনগণের হিসাব-নিকাশ কড়ায়-গণ্ডায় শোধ করা। নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে উপভোগ করা, তার শিক্ষা-দীক্ষা, নিরাপত্তা এবং জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সুখকর করে তোলা। গণতন্ত্র একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, রাষ্ট্রের চোখ দিয়ে জনগণকে দেখা নয়, বরং জনগণের চোখ দিয়ে রাষ্ট্রকে দেখার অনুশীলনই গণতন্ত্রের হলো অন্যতম লক্ষ্য। আর এই গণতন্ত্রের মুখ্য উপাদানই হলো সমাজের সর্বত্র জবাবদিহিতা ও সুশাসনের প্রতিষ্ঠা।

--------------------

রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের অন্যতম উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব হলো দেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা। সেটা করতে হলে সমাজের সর্বত্র সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। সুশাসন ও জবাবদিহিতা ছাড়া যেমন গণতন্ত্রকে পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা যায় না, তেমনি গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন ও জবাবদিহিতাকেও প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

--------------------

বাংলাদেশে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু একটি অনুন্নত দেশ হওয়ায় যেটুকু উন্নতি হচ্ছে, প্রয়োজন রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। প্রকল্পের কাজের ধীরগতি উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। অর্থবছরের শেষদিকে গিয়েও দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয় না। অনেক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যায়। আবার বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দ অনেক বেশি হওয়ার অভিযোগ আছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়িবিলাসের বিষয়টি তো বহুল আলোচিত। তার পরও দেখা যায়, তিন বছরের প্রকল্প ছয় বছরেও শেষ হয় না। মাঝখানে বরাদ্দ বাড়ানোর ঘটনা ঘটে একাধিকবার। দুর্নীতির অভিযোগও বিস্তর। প্রকল্পের কাজের মানের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ্য। তাই রাষ্ট্রীয় অর্থের যাতে অপচয় না হয়, সেজন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিষ্ঠা করতে হবে শৃঙ্খলা। 

টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রে যেমন গণতন্ত্র লাগবে, তেমনি লাগবে সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এক্ষেত্রে সরকারের যেমন জনগণের কাছে তার কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, তেমনি জনগণকেও সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জবাবদিহিতা না থাকলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। সরকার স্বেচ্ছাচারী হলে দেশে সুশাসন থাকে না। সুশাসনের অভাব মানে কোথাও স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। কেউ যদি অন্যায় করে, তার কোনো শাস্তি হয় না। সবাই দেশের রাজা বনে যায়। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই গণতন্ত্রকে জবাবদিহিতা ও সুশাসনের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলতে হয়।

দেশে ব্যাংকিং সেক্টর দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে এ সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাব। ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন বলতে কিছু নেই। ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য নীতিমালা ও আইনকানুন সবই আছে, আছে আন্তর্জাতিক নর্মসও। কিন্তু এগুলো সঠিকভাবে পরিপালন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। পরিচালনা বোর্ড থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট এবং কর্মকর্তা পর্যায়ে কোথাও সুশাসন অনুসৃত হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা এখন মোটেও ভালো নয়। 

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ব্যক্তি খাতে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনকভাবে পরিচালিত হলেও, একই ধরনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর লোকসান দেয়। এর অন্যতম কারণ সুশাসন ও জবাবাদিহিতার অভাব। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় প্রতিনিধির মাধ্যমে। এখানে মালিক থাকেন অনুপস্থিত। রাষ্ট্র কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিরা কখনোই মালিকের মতো দায়িত্বশীল হন না। অন্যদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সরাসরি মালিকের অধীনে। সেখানে জবাবদিহিতা ও সুশাসন থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি বা ক্ষতিকর কিছু করে টিকে থাকা যায় না।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। এক সময় বাংলাদেশকে নিয়ে যারা উপহাস করত; এখন তারাই বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নতি অর্জন করে চলেছে। গত প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। বিশ্বের খুব কম দেশের পক্ষেই এমন অর্থনৈতিক সাফল্য প্রদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছি না। এজন্য বিদগ্ধজনরা মূলত রাষ্ট্রে সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবকেই দায়ী করে থাকেন। দেশকে টেকসই অর্থনীতির ওপর দাঁড় করাতে হলে তাই আমাদের এখন সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ওপরই বেশি জোর দিতে হবে।


লেখক : সাংবাদিক
 

আরও পড়ুন