• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৩:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

ডেঙ্গুতে ৬ চিকিৎসকের মৃত্যু

এডিস ঘায়েল করছে সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের

এডিস ঘায়েল করছে সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ডা. শাহাদৎ হোসেন, ডা. তানিয়া সুলতানা ও ডা. উইলিয়াম ম্রং ; ছবি- সংগৃহীত


ডেঙ্গুরোগীদের সেবাদানে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ঘায়েল করতে শুরু করেছে এডিস মশা। শুধুমাত্র ঢাকার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ৭ জন চিকিৎসক ও ৩৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দৈনিক জাগরণ। 

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ওইসব চিকিৎসক ও নার্সরা কী ডেঙ্গুরোগীদের সেবাদান করতো কি-না, জানতে চাইলে হাসপাতালটির উপ-পরিচালক খাইরুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, এখন তো জরুরি বিভাগসহ আরও কিছু বিষয় ভুলে গিয়ে সব চিকিৎসক-নার্স এক যোগে ডেঙ্গুরোগীদের সেবায় নিয়োজিত। আক্রান্তরাও ডেঙ্গু রোগীদের সেবাদানে নিয়োজিত ছিলেন। 

মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭জন চিকিৎসক হচ্ছেন- তাপস চন্দ্র, রেহনুমা পারভীন, তাহেরা বেগম, সুদ্বীপ রাজন দেব, হাসনাত আল মতিন, নাজিম আল আজাদ ও পারভীন সুলতানা।  

শুধু মুগদা হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরাই নন, ঢাকাসহ দেশের বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।  যাদের অনেকেই ডেঙ্গুরোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন বা কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন। মুগদা হাসপাতালের মতন এমন গোছানো তথ্য পাওয়া যায়নি ঢাকার অন্য হাসপাতাল থেকে। কিন্তু আক্রান্তের কথা শোনা যায়।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি এন্ড রাইটস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসনাৎ মিল্টন জানান, এ পর্যন্ত ৬ জন চিকিৎসক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রে ডেঙ্গুরোগীদের সেবাদান করতেন।  

গত ৩ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নিগার নাহিদ দিপু, ২২ জুলাই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় হবিগঞ্জের নবাগত সিভিল সার্জন শাহাদাত হোসেন হাজরা ও ২৬ জুলাই মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক তানিয়া সুলতানা। তিনি আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। একই দিন মুক্তিযোদ্ধা ডা. উইলিয়াম ম্রং। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

উইলিয়াম ম্রং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৯ম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন।  তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ সেক্টরের অধীনে ঢালু সাব-সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে অংশ নেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার চরবাঙ্গালিয়া।

এছাড়া চিকিৎসক রাশেদুজ্জামান, রোমানা আফরোজও মৃত্যুবরণ করেন ডেঙ্গুর প্রভাবে। জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি এন্ড রাইটস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসনাৎ মিল্টন।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ রোববার দুপুরে দৈনিক জাগরণের একটি প্রশ্নে বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের সরাসরি সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকিতে পড়বেন, যদি তাদের কর্মস্থলে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা থাকে, এডিস মশার ঘনত্ব যদি বেশি থাকে এবং সংশ্লিষ্ট রোগীরা মশারি ব্যবহার না করেন।

''কর্মক্ষেত্রে যদি ডেঙ্গু ভাইরাস বহন না করা এডিস মশা থাকে আর রোগীরা যদি মশারি ব্যবহার না করেন- তাহলে ভাইরাস বহন না করা এডিস মশা রোগীকে কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসের বাহক হবে। এরপর সেই মশা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হতে পারেন''- বলেন অধ্যাপক বেনজির আহমেদ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি এন্ড রাইটস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসনাৎ মিল্টন দৈনিক জাগরণকে বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সে অবস্থায় আমি মনে করি সর্বস্তরের সেবাদানকারীরাই ঝুঁকিতে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে একটি এডিস মশাই যথেষ্ট। কর্মক্ষেত্রে মশা আছে কি নেই, এটা কী শতভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব? কিন্তু চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকই কাজ করে যাচ্ছেন। আক্রান্ত হবার ভয়ে তারা বসে নেই।

তিনি বলেন, যে কোনো জাতীয় দুর্যোগ-মহামারী নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করছেন। এখন তাই সময় এসেছে- সরকারিভাবে তাদের জন্য ঝুঁকিভাতা ব্যবস্থা করার।

আরএম/আরআই

আরও পড়ুন