• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৫:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৫:২৯ পিএম

লক্ষণ ভালো, তবে...

লক্ষণ ভালো, তবে...

সারা দেশে সরকার যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে তা সর্বমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এটাকে সরকারপ্রধানের দূরদর্শিতার প্রমাণ বলেই মনে করছেন তারা। অনেকে এ শুদ্ধি অভিযান আরও আগে শুরু করা দরকার ছিল বলে মনে করছেন। তবে দেরি হলেও শুরু তো হয়েছে- এটাই-বা কম কিসে? এখনও অনেকের মাথায় নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে- এ যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতদূর অগ্রসর হতে পারবেন, পাহাড়সমান অনিয়ম-দুর্নীতির তিনি কতটুকু সাফ করতে পারবেন?

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে অন্যায়-অবিচার, ব্যভিচার বাসা বেঁধেছে তাতে এ কথাটি সর্বক্ষণই সাধারণের মনে ধিকি ধিকি জ্বলে। বিভিন্ন দিক দিয়ে দেশ এগিয়ে চললেও একেক সময় একক ঘটনায় মনে হয় আমরা প্রাগৈতিহাসিক যুগের বর্বরতাকেও হার মানাচ্ছি। তখন মানুষ বলে নিজেকে পরিচয় দিতে ঘৃণাবোধ হয়। খুবই অসহায় লাগে।

অমাবস্যার এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও হঠাৎ করেই আশার আলো জ্বালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার ধমণীতে প্রবাহিত বঙ্গবন্ধুর রক্ত। নিজ হাতে গড়া শোভন-রাব্বানীকে দিয়েই তিনি ঘুটঘুটে অন্ধকার দূর করার অভিযান শুরু করেছেন। যথোপযুক্ত সময়ে যথোচিতভাবেই তিনি এ অভিযান শুরু করেছেন। তারপর শুরু করেছেন ক্যাসিনো-সম্রাটদের বিরুদ্ধে অভিযান। এতে ক্ষীণ হলেও মানুষ আশার আলো দেখছেন।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশাও ছিল দুবেলা দুমুঠো ভাত, রাতে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম। এ দেশের মানুষ এর চেয়ে বেশি কিছু চায় না। এ প্রত্যাশা পূরণেই ৩০ লাখ মানুষ বুকের তাজা দিয়েছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন আড়াই লাখ মা-বোন। এত রক্তদান, এত মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর পর ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও দেশের সংখ্যাগনিষ্ঠ মানুষ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও যাপিত জীবনের স্বস্তি পায়নি কতিপয় অর্থগৃধ্নু নরপিশাচের কারণে।

দেশের মানুষের এই চাওয়া-পাওয়া এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ভালোভাবে জানেন বলেই শেখ হাসিনা যথোপযুক্ত সময়ে যথোচিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও তিনি শিক্ষা নিয়েছেন। তাই তিনি অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ধীর পদক্ষেপে এগোচ্ছেন। কৌশল হিসেবে প্রথমে বিভিন্ন দলের লোক নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন এবং নিজের শক্তি সংহত করে সর্বশেষ শুধু নিজ দলের তরুণদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতারই পরিচায়ক। এ দিক দিয়ে তিনি শেখ মুজিবের থেকেও অনন্য। 

তাই শোভন-রাব্বানী, খালেদ মাহমুদ-জিকে শামীমদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত। জনগণের প্রত্যাশার মাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু সিঁধুরে মেঘ দেখলে গোয়ালের গরু যেমন ভয় পায়, তেমনি দেশের মানুষও বঞ্চিত হতে হতে অল্পতেই ভেঙে পড়ে। অন্যায়-অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ অভিযান যেন মাঝপথে মুখথুবড়ে না পড়ে। শধু দু-চারজনকে গ্রেপ্তার বা জেলে পাঠানোতেই যেন এ অভিযানের সমাপ্তি টানা না হয়। প্রয়োজনে তাকে আরও কঠোর হতে হবে। দেশের মানুষ আপনার পাশে আছে।

বিপ্লবের পর দেশকে এগিয়ে নিতে চীনের মাও সেতুংকেও এ রকম পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। তিনি চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ধনীকশ্রেণীর সদস্যদের বিতাড়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী সংস্কৃতির জন্ম দেয়া, প্রাচীন পুঁজিবাদী ও সামন্তীয় সংস্কৃতির বিলোপসাধন করে সমগ্র সমাজে জ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তির জাগরণ সৃষ্টি করা। টেকসই সমাজ বিনির্মাণে এ পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই চীন আজ দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
 
দেশের মাটি ও মানুষের কাছের একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা, দেশকে একটি সত্যিকার স্বস্তিময় ও টেকসই অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে একটি দৃঢ়, কঠোর অথচ বাস্তবোপযোগী গাইডলাইন। যে গাইডলাইন বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত একটি দেশে পরিণত করবে। এক্ষেত্রে তাকে চোখ-কান খোলা রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। কারণ এ যুদ্ধে তাকে জিততেই হবে। দেশের জনগণের স্বার্থেই তাকে জিতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক


 

আরও পড়ুন