• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৬:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৬:৩৬ পিএম

ওষুধের দাম ও মেহনতী মানুষের সাধ্য

ওষুধের দাম ও মেহনতী মানুষের সাধ্য

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র ভালো নয়। ভালো বলতে আমি বলতে চাইছি জনবান্ধব নয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরে ডাক্তার ভীতি আছে। ডাক্তারের দেখা পাওয়ার সময়, টেস্ট, প্রেসক্রিপশনে বহু ওষুধ ওষুধের দাম। সব মিলিয়ে ডাক্তারের কাছে সে যেতে চায় না। সংকট দেখা দিলে ওষুধের দোকানদারকে বলে। ওষুধের দোকানদার যেসব ওষুধ দিতে পারেন সেসব টুকিটাকি। জ্বর, মাথাব্যাথা ছাড়া অধিকাংশই পেটের পীড়াজনিত ওষুধ।

বারে বারে খেলে  যদি ভালো না হয় বা বিছানায় পড়ে  না যায় তাহলে কোন রোগী ডাক্তারেরকাছ অবধি যেতে চায় না। যাদের কথা বলছি তারা দেশের মেহনতী মানুষ। যাদের শ্রম-ঘামে আমাদের দেশ চলে। উন্নয়নের চাকা ঘোরে।তারা হাতসম্বল মানুষ। দিনের পর দিন তাদের অর্থনীতি বদলায় না। দেশে উন্নয়ন হলে তার ছোঁয়া তাদের গায়ে লাগতে লাগতে তাদেরজীবন ফুরিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ ধনী হয়। বিশ্বের পরিসংখ্যানে দ্রুত ধনীর তালিকায় দেশের নাম যায়। সে খবর যাদের রাখার কাজ
তারা রাখে। অথচ সহজ হিসাব হলো হাজার মানুষ ধনী হতে হলে লক্ষ মানুষকে দরিদ্র হতে হয়। সেই লক্ষ কোটি মানুষের জীবন দেখতেকারও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা একদম আলাদা। দেশের মফস্বল থেকে রাজধানী শহর পর্যন্ত ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন লাগে না। ওষুধের দোকানে উপসর্গের কথা বললেই মুক্তি। এভাবে যে অপকার কতোটা হয় সে খবর রাখে না কেউ। কারন রাখার প্রয়োজন পড়ে না কারও। এরপরে দেখা দিয়েছে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা। দিন দিন ওষুধের দাম বাড়ছে। শ্রমজীবী মানুষ, নিম্নবিত্ত
সবার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ওষুধের দাম। এ নিয়ে কারো কোন কথা নেই। কারও বক্তব্য কোথাও দেখা যায় নি।

 কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যে চিত্র ওষুধের বাজারে তাহলো ওষুধের  দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা সরকার দিলেও দেয়া হলেও বাস্তবে এর সুফল মিলছে না। যাদের কথা ভেবে শুল্কছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তারা অর্থাৎ ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। ওষুধের দাম বৃদ্ধির যাঁতাকলে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। ওষুধ খাতের উদ্যোক্তারা দাবি করেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ওষুধের দাম কম। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে ওষুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সম্প্রতি  বলেছে, দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের তেমন কিছু করার নেই। পত্রিকান্তরে এ খবর প্রকাশ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে এ সংকট নিরসন সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ বা এসডিজি অর্জন করতে হলে অবশ্যই ওষুধের দাম কমাতে হবে। পাইকারি ওষুধের বড় বাজার মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলেছেন, রোগীদের বেশি প্রয়োজন হয় এমন ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

গত পাঁচ বছরে অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যান্সার প্রতিরোধক, ইনসুলিনসহ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই হাজারের বেশি কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাঁচামালে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত এবং কিছু কাঁচামালে শুল্ক কমানো হয়েছে। কিছু কাঁচামালের দাম বেড়েছে সত্য, তবে বাজারে ওষুধের দাম বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে। জানা যায়, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাওয়া বেশিরভাগ ওষুধের গত পাঁচ বছরে দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। কোনো ওষুধের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে এর চেয়ে অনেক কম হারে। ইনসুলিন উৎপাদন উৎসাহিত করতে সব উপকরণে আমদানিতে শূন্য শুল্ক করা হলেও এর দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় ও জীবনরক্ষাকারী ১১৭টি ছাড়া বাকি সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো। ১৯৯৪ সাল থেকে এ নিয়ম চালু রয়েছে  (সমকাল ৯ নভেম্বর’১৯) । কিন্তু তার ফলাফল নিরূপনে আমরা দেখছি যে যার ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বড়ালেই হলো। কোনরকম একটা খোঁড়া যুক্তি হাজির করলেই হলো। আমাদের দেশে একটা দোকোনে সবচে বেশি বিক্রি হয় গ্যাট্রিকের ওষুধ। গত অর্ধশতক ধরে এটা খাচ্ছিলো গ্যাসট্রিকের ওষুধ হিসাবে। কিন্তু কিছুদিন আগেগ্যাস্ট্রিকের ওষুধ হিসেবে পরিচিত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার জন্মানোর উপাদান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বিশ্বের শীর্ষ ওষুধপ্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন (জিএসকে)।

এই কারণে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ভারতের বাজার থেকেও রেনিটিডিন গ্রুপের জ্যানটেক নামের এই ট্যাবলেট প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জিএসকে। কিন্তু বাজারে এখনো সয়লাব রেনিটিডিনে। তার উপরে দামতো বেড়েছেই। গ্যাস্ট্রিক উপশমে ব্যবহৃত ওমিপ্রাজল গ্রুপের একটি ওষুধ উৎপাদনে ৬০ পয়সা ব্যয় হয়। কিন্তু এটি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। ম্যাক্সপ্রো ৪০ কিছুদিন আগেও যারা ৮০ টাকা দিয়ে কিনতো তারা এখন কিনছেন ১০০ টাকায়। সব ওষুধই উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ওষুধের বাজার নিয়ে বছরের পর বছর ধরে  নৈরাজ্য চলছে। অথচ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। যাদের অর্থ আছে তাদের সমস্যা হবে না সোনা দিয়ে ওষুধের পাতা মুড়লেও। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ জনগনতো তারা নয়। তারা প্রেসার কনট্রোল না্ হলে বিদেশে যান আর আমার দেশের উন্নয়নের চাকা যারা ঠেলে তারা মারা যায় ওষুধের
অভাবে। এ কেমন বিচার? ওষুধে এখন নকল ভরা। ওষুধের গায়ে উল্লেখিত উপাদান দেশের বড় বড় কোম্পানির ওষুধে নেই। কোম্পানি নিষিদ্ধ করলেও আবার কিভাবে সব আগের মতোই থেকে যায়।

শেষ কথা
সরকারকে বিষয়টি আমলে নিতে হবে। গুটিকয়েক ওষুধ কোম্পানি মালিকের স্বার্থ রক্ষার জন্য জন স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা যাবে না। ওষুধের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে আনার পাশাপাশি মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। নতুবা ডাক্তার ,টেস্ট ,ওষুধ সব সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই?

লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক