• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৪:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৪:৪২ পিএম

ধূসর আকাশ, বিষাক্ত বাতাস

ধূসর আকাশ, বিষাক্ত বাতাস

১.
কিছুদিন আগে আমাদের ক্রিকেট টিম যখন দিল্লিতে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল তখন হঠাৎ করে দিল্লির ভয়ঙ্কর বায়ু দূষণের খবর আসতে শুরু করল। ছবিতে দেখতে শুরু করলাম দিল্লির ঝাপসা ছবি। দূষণের মাত্রা এতই ভয়ঙ্কর যে, এর ভেতর দিয়ে সামনে দেখা যায় না। ৩০টির মতো বিমানের ফ্লাইট রানওয়ে স্পষ্ট দেখতে না পেয়ে অন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে অবতরণ করতে বাধ্য হলো। বায়ু দূষণসংক্রান্ত রোগবালাই এতই বেড়ে গেল যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলতে শুরু করলেন দিল্লি এখন একটা গ্যাস চেম্বার। (দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে হত্যা করত।) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বললেন যে, শহরটিতে বায়ু দূষণের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

শহরে লাখ লাখ মাস্ক বিতরণ করা হলো, স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলো। হাইকোর্ট জানতে চাইল কেমন করে শহরটিতে এ রকম বায়ু দূষণ হতে পারে?
নিজের দেশে বসে তখন আমাদের ক্রিকেট টিমের জন্য মায়া হতে শুরু করল। ভাবতে লাগলাম আমাদের এই ক্রিকেট টিম খেলতে গিয়ে কি রকম বিপদের মাঝে পড়ল, এই ভয়ঙ্কর পরিবেশে থেকে তাদের কিনা কী হয়ে যায়। কখন তারা এই অভিশপ্ত শহর থেকে মুক্তি পাবে, নিঃশ্বাস নেয়ার যোগ্য একটি শহরের খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারবে?

ঠিক তখন হঠাৎ করে খবরের কাগজে পৃথিবীর রাজধানী শহরগুলোর বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ে একটা প্রতিবেদন আমার চোখে পড়ল। পিএম ২.৫ নামে বাতাসের দূষিত ভাসমান কণার পরিমাণ দিয়ে বায়ু দূষণের পরিমাণ বের করা হয়। সেই মাত্রার পরিমাণে প্রথম স্থান দখল করেছে দিল্লি (প্রতি কিউবিক মিটারে ১১৪ মাইক্রোগ্রাম) এবং তার খুবই কাছাকাছি হচ্ছে আমাদের ঢাকা (৯৭ মাইক্রোগ্রাম)।

 এর পরের শহরটি (কাবুল) ঢাকা থেকে দূষণের মাত্রায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম কম এবং অন্যান্য দূষিত রাজধানী শহর সবই এর কাছাকাছি। Dhaka is the seconed most air polluted city in the world নামে গ্রিনপিস এবং এয়ার ভিসুয়ালের এই প্রতিবেদনটি এখনি ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে। দিল্লি এবং ঢাকার দূষণের মাত্রা গ্রাফে যখন দেখানো হয়েছে তখন বুকের মাঝে ধক করে একটা ধাক্কা লাগে। কারণ পৃথিবীর দূষিত রাজধানী শহরগুলোর বায়ু দূষণের মাত্রা খুবই কাছাকাছি। শুধু দুটি দেশ একবারে আলাদা। বায়ু দূষণের তালিকায় অন্য দেশগুলোর প্রায় দ্বিগুণ, সেই ভয়ঙ্কর বায়ু দূষণের শহর দুটি হচ্ছে দিল্লি এবং ঢাকা।

 আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম আমি আমাদের ক্রিকেট টিমের জন্য যে আশঙ্কা অনুভব করছিলাম, আমার নিজের জন্যও সেই আশঙ্কা অনুভব করার কথা। শুধু আমার নিজের জন্য নয়, ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি (মতান্তরে দুই কোটি) মানুষও আসলে এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মাঝে বসবাস করছে। প্রতিবেদনটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে হঠাৎ করে হতাশা অনুভব করতে হয়। কারণ জনসংখ্যা দিয়ে এই বায়ু দূষণ বিবেচনা করলে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গ্যাসের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

আমাদের দেশ সম্পর্কে যে কোনো নেতিবাচক তথ্য বের হলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা সেই তথ্যের ফাঁক-ফোকর খুঁজে বের করে ফেলতে শুরু করেন। সেই হিসেবে আমি প্রায় নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বায়ু দূষণের এই মন খারাপ করা তথ্যটিকেও নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে বলা হবে এটি অপপ্রচার, অবৈজ্ঞানিক এবং অবশ্যই অতিরঞ্জিত। শুধু তাই নয়, নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলে অনেক রকম তথ্য পাওয়া যায়, সব যে এক রকম তাও নয়। তবে ভালো তথ্য কোথাও নেই। কাজেই আমি কারো সঙ্গেই এ ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে যাব না, কিন্তু আমি নিজের চোখে কী দেখছি সেটা তো বলতে পারি।

সামনে ডিসেম্বর মাস আসছে, আমাদের দেশের সেমিনার কনফারেন্সের মাস। তখন বিদেশ থেকে অনেকেই দেশে আসেন। অনেকের সঙ্গে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়, পরিচয় হয়। তারা দামি হোটেলের নিরাপদ বাতাসে দিন কাটান। তার পরও যদি খোলামেলাভাবে কথা বলতে দেয়া হয়, তারা অবধারিতভাবে মুখ কাচুমাচু করে বলেন, এই দেশে এলে তাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়! আমরা এই বিষাক্ত বাতাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছি টের পাই না। যারা বাইরে থেকে আসেন তারা টের পান। আমরা যে একেবারে টের পাই না।

 সেটা পুরোপুরি সত্যি নয়, আমাদের পরিচিত অনেক শিশুর আজকাল নানা ধরনের অ্যালার্জি, শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুখ, হাঁপানি যেগুলো নিশ্চিতভাবে বায়ু দূষণের কারণে হচ্ছে। আমরা সহজ করে বলি, বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। সত্যি কথাটি হচ্ছে, অনেকেই ভয়ঙ্কর রোগে ভুগে সময়ের আগে মারা যাচ্ছেন। ভয়ঙ্কর রোগ মানেই  ভয়ঙ্কর চিকিৎসা খরচ। চোখের সামনে মধ্যবিত্ত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। যারা অর্থনীতি জানেন তারা বিষয়টা আমাদের  চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারবেন এই বায়ু দূষণের কারণে কতভাবে আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ছে।একসময় আমাদের আকাশের রং ছিল নীল। মাঝে মাঝে যখন বিদেশ যাই- যে দেশে বায়ু দূষণ নেই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।

 তাদের আকাশটা এখনো আশ্চর্য নীল কিন্তু আমাদের আকাশ আর নীল নেই, এটি ধূসর। যদিওবা কখনো নীল আকাশ চোখে পড়ে সেই নীল বিবর্ণ। বাতাসের দূষিত কণা আমাদের আর নীল আকাশ দেখতে দেয় না। শৈশবে যখন অমাবস্যার রাতে আকাশের দিকে তাকিয়েছি, সেখানে দেখেছি লাখ লাখ নক্ষত্র, আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছায়াপথ, আমাদের গ্যালাক্সি। এখনো সুযোগ পেলেই আমি আকাশের দিকে তাকাই, সেখানে এক-দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নেই। ছায়াপথকে খুঁজে পাই না। শেষবার কখন ছায়াপথকে দেখেছি মনে করতে পারি না। বাতাসের ভাসমান দূষিত কণা আমাদের প্রকৃতির আসল রূপটিকে ঢেকে ফেলেছে, দেখতে চাইলেও সেই প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
২. 
আমি বায়ু দূষণের বিশেষজ্ঞ নই। পত্রপত্রিকার খবরাখবর পড়ে কিংবা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যেটুকু জেনেছি সেটুকুই আমার জ্ঞান। এর মাঝে কতটুকু খাঁটি এবং কতটুকু ভেজাল ঠিক করে পার্থক্য করতে পারি না।

পত্রপত্রিকা পড়ে জেনেছি, আমাদের দেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের কারণগুলো হচ্ছে ইটের ভাঁটি, কল-কারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। আমরা যারাই ঢাকা থেকে বাইরে যাই কিংবা বাইরের শহর থেকে ঢাকায় আসি তারাই এই আতঙ্ক জাগানিয়া ইটের ভাঁটিগুলো দেখেছি। একটি দুটি নয়, শত শত ইটভাঁটি। কোনো একটা ফসলের জমি দখল করে ইটের ভাঁটি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে শ্রমিকেরা কাঁচা ইট তৈরি করছেন। অন্য পাশে ইট পোড়ানো হচ্ছে, বিশাল কুৎসিত চিমনি।

 সেই চিমনি দিয়ে কুচকুচে কালো ধোঁয়া গলগল করে বের হচ্ছে। এর কোনো বিরাম নেই। বাতাস সেই ধোঁয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমি নিশ্চিত আশপাশে যে গ্রাম আছে সেখানকার মানুষের ওপর আকাশ থেকে প্রতিমুহূর্তে কালো ধোঁয়ার কণার সৃষ্টি হচ্ছে। আমি হাইওয়ে ধরে যাই এবং বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে অপেক্ষা করি কখন বর্ষাকাল আসবে, কখন ঝমঝম বৃষ্টি হবে আর এই ভয়ঙ্কর ইটের ভাঁটি তাদের কাজ বন্ধ রাখবে।

মাঝে মাঝে খবরের কাগজে দেখি যে, পরিবেশবান্ধব ইটের ভাঁটি তৈরি করার উপায় আছে, কখনো কখনো দেখি ইটের বদলে কীভাবে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা যায়। পত্রপত্রিকায় আমাদের কাঁদুনি শুনে ইটের ভাঁটি রাতারাতি পরিবেশবান্ধব হয়ে যাবে না। কিন্তু সরকার চাইলে সেটা হতে পারে। যে দেশে সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয় সেই দেশ কি তার আত্মমর্যাদার জন্য একটু চেষ্টা করবে না?
কল-কারখানা নিয়েও একই ব্যাপার। এক সময় দেশ রীতিমতো দরিদ্র ছিল, অর্থনীতি একটুখানি সচল করার জন্য যে যেখানে যেভাবে পেরেছে কল-কারখানা বসিয়েছে সেই কল-কারখানার কারণে পরিবেশের কী হয়েছে সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামানোর চেষ্টা করেনি। কিন্তু এখন তো অন্য ব্যাপার, পরিবেশ রক্ষা করা বাধ্যতামূলক হতে হবে। কল-কারখানার মাঝে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

আমাদের বায়ু দূষণের আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে নির্মাণকাজ। উন্নয়নের একটা পর্যায়ে মনে হয় পৃথিবীর সব দেশকেই এই যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শুধু ঢাকা শহরেই যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি কিছু একটা তৈরি হচ্ছে। মেট্রোরেল একটা বিশাল কাজ- রাস্তাঘাট, বড় বড় বিল্ডিং সবকিছু মিলিয়ে পুরো ঢাকা শহরে এখন এক সুবিশাল দজ্ঞযজ্ঞ। মাটি কাটা হচ্ছে, কংক্রিট ঢালাই হচ্ছে, বড় বড় যন্ত্রপাতি নড়ছে, খট খট শব্দ করছে, ধুলা উড়ছে এবং আমরা সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। আশা করছি এক সময় এই নির্মাণকাজ শেষ হবে, ঢাকা শহর তার আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে। বাতাস একটুখানি হলেও পরিষ্কার হবে।

বায়ু দূষণের আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে যানবাহন। গাড়ি, টেম্পো, বাস, ট্রাক কিংবা মোটরবাইক। এটি শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি সারা পৃথিবীর সমস্যা। আমাদের আলাদা করে এর সমাধান করতে হবে না, পৃথিবীর অনেক দেশ সেই সমস্যার সমাধান করে রেখেছে, আমাদের শুধু সেই সমাধানটি বেছে নিতে হবে।

বড় শহরের যানবাহন সমস্যার সবচেয়ে সুন্দর সমাধান আমি দেখেছি ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরে। এই দুটি শহরের যানবাহনের সমস্যার সমাধান একই রকম। সেটি হচ্ছে সাইকেল! এই শহরগুলোতে সবাই সাইকেলে যাওয়া-আসা করে, শিশুটির জন্ম হওয়ার পর সে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে সাইকেলে, যখন বড় হতে থাকে তখন সাইকেলে যাতায়াত করে, বয়স নব্বই হোক আর একশ’ হোক - সে সাইকেল ছাড়া আর কিছুতে ওঠে না। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, মৃত্যুর পর তার মৃতদেহটি পর্যন্ত কবরস্থানে নেয়া হয় সাইকেলে। যার দশটি গাড়ি কেনার ক্ষমতা আছে সেও সারাজীবনে গাড়ি কেনে না, সাইকেলে ঘুরে বেড়ায়! আমার ধারণা, এটি এখন শুধুমাত্র এই দুটি শহরের জন্য সত্যি নয়, সারা পৃথিবীতেই এই সাইকেল কালচার শুরু হয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমাদের দেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?

৩.
যে সব শহরে সাইকেল খুব চমৎকার সমাধান হতে পারে ঢাকা শহর হচ্ছে ঠিক সে রকম একটি শহর। তার একটা কারণ হচ্ছে, শহরটি আসলে খুবই ছোট। দিনের বেলা গাড়ি নিয়ে বের হলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায় কিন্তু কেউ যদি একটু গভীর রাতে- যখন গাড়ির ভিড় কমে যায় তখন বের হয় তা হলে দশ মিনিটের মাঝে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে পারে। ঢাকা শহর সাইকেলের জন্য খবুই উপযোগী একটা শহর তার আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে পুরো শহরটা সমতল, পৃথিবীর অনেক দেশের  মতো উঁচু-নিচু নয়। যে কোনো মানুষ একেবারে সাধারণ একটা সাইকেলে করে এই শহরে চক্কর দিতে পারবে।

 তিন নম্বর কারণ হচ্ছে, ঢাকা শহরের জনবসতির বয়স, অনেক বড় একটা অংশ হচ্ছে কম বয়সী তরুণ এবং তরুণী। তাদের যদি সাইকেলে যাতায়াতের সুযোগ করে দেয়া হয় তারা সাগ্রহে এবং সানন্দে সেই সুযোগটা লুফে নেবে। চার নম্বর কারণ হচ্ছে, সাইকেলে যাতায়াত করলে শুধু যে বায়ু দূষণ কমবে তা নয়, ট্রাফিক জ্যামও কমবে। আমরা যখন গাড়িতে যাতায়াত করার সময় আশপাশে তাকাই তখন দেখতে পাই একটা বিশাল গাড়িতে একজন মানুষ যাচ্ছে। মাত্র একজন মানুষ যদি তার গাড়িতে করে এতখানি দখল করে রাখে তাহলে ট্রাফিক জ্যাম না হয়ে উপায় কী? কিন্তু সেই মানুষটি যদি সাইকেলে যেত তাহলে কত অল্প জায়গা নিয়ে চলাচল করত কেউ চিন্তা করে দেখেছে কি? শুধু তাই নয়, কম বয়সী ছেলে ও মেয়েরা তরুণ এবং তরুণীরা সাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছে, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে কিংবা কাজে যাচ্ছে এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে?

ঢাকা শহরের বিশাল এই সমস্যার খুব সহজ এই সমাধানটি আসলে একটি জায়গায় আটকে আছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা শহরের মানুষ সাইকেল চালাবে কোথায়? কোপেনহেগেন এবং আমস্টারডামে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করে দেয়া আছে, সবাই সেই লাইনে নিরাপদে সাইকেল চালায়। পেছন থেকে বিশাল একটা ট্রাক তার ঘাড়ের ওপর চেপে বসবে সেটা নিয়ে কাউকে দুর্ভাবনা করতে হয় না। ঢাকা শহরেও যদি আমরা সাইকেল দিয়ে যানবাহনের একটা বড় সমাধান করে ফেলতে চাই তা হলে সাইকেলের জন্য আলাদা একটা লেন করে দিতে হবে। বড় বড় রাস্তার পাশে ছোট একটুখানি জায়গা আলাদা করে দেয়া যেখানে সবাই নিরাপদে সাইকেল চালাতে পারবে।
অন্যদের কথা জানি না, যদি আমাদের দেশে সত্যিই কখনো সাইকেলের লেন করে দেয়া হয় তাহলে আমি সবার আগে সেখানে সাইকেলে করে নেমে যাব।
আমি এই ধূসর আকাশ আর বিষাক্ত বাতাস থেকে মুক্তি চাই!

লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক