• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৬:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৬:৩৫ পিএম

আমাদের দেশে হবে সেই কাজ কবে?

আমাদের দেশে হবে সেই কাজ কবে?

তাঁদের স্বপ্ন এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা যা দারিদ্রের দুষ্টচক্রকে ভাঙবে এবং সমাজবিচ্ছিন্নতার কঠিন দেয়াল ভেঙ্গে আদিবাসীদের মূলধারায় একীভূত করবে। প্রফেসর অচ্যুত সামান্ত এমন একটি স্বপ্নের বীজ রোপন করেছিলেন আজ থেকে ২৭ বছর আগে সেই ১৯৯৩ সালে। ভারতের উড়িষা রাজ্যে কলিঙ্গ ইন্সষ্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স যা কীস নামে অধিক পরিচিত তা প্রতিষ্ঠা করেন। আজ যেখানে ৩০ হাজার আদিবাসী শিক্ষার্থী শিক্ষাসহ সার্বিক জীবনদক্ষতা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। মাত্র ১২৫ জন দরিদ্র আদিবাসী শিশুকে নিয়ে সে যাত্রা যে এতোবড় মহীরূহে পরিনত হবে তা হয়তো স্বয়ং অচ্যুত সামান্তও সেভাবে চিন্তা করেননি। কিন্তু তাঁর গড়া সেই কীস আজ সারাবিশ্বে একটি সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

দারিদ্রতা, সমাজবিচ্ছিন্নতা এবং আইনানুগ সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যাদের দেখার কেউ নেই। সরকারি ও বেসরকারি কিছু সাহায্য যাদের পেটের ক্ষুধাও সেভাবে মেটাতে পারে না। সেই জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালাতে যে প্রদীপ তিনি জ্বেলেছিলেন সে আলোয় আজ আলোকিত হয়েছে হাজার হাজার আদিবাসীর জীবন। শিক্ষার আলোয় তারা এখন তাদের পরিবার, নতুন প্রজন্ম সবার জন্যই নতুন দিগন্ত খুঁজে নিচ্ছে। বঞ্চিত-লাঞ্চিত আদিবাসীরা সে শক্তিতে ভর করে আজ মর্যাদাপূর্ণ জীবনের পথে হাঁটছে।

কিস প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর এর আকার, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও কার্যক্রম বৈচিত্র্য এসেছে। প্রতিষ্ঠাতা সামন্ত তাঁর স্বপ্ন সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বলে মাত্র তিনদশকেরও কম সময়ে সেই রোপিত বীজ আজ ফুলে-ফলে টইটুম্বুর হয়েছে। কীস আজ ভারতের ১০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি এবং সারা দুনিয়ার ২৫০ টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সেদিনের ছোট্ট শিক্ষালয়টি ভার্টিক্যাল ও হরিজন্টাল দু’দিকেই কেবল বেড়েই চলেছে। সেখানে এখন প্রতিটি জীবনের ভিত্তি শক্ত করে গড়ে দিতে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সেবা, কারিগরী শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বনায়ন ও স্বাক্ষরতা এবং জীবিকায়ন। 
কিস-এর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য
সার্বিক শিক্ষা ও টেকসই জীবিকায়ন সুযোগ তৈরির মাধ্যমে আদিবাসী সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দারিদ্রতা দূর ও ক্ষমতায়ন
* সমাজের অধঃস্তন মানুষদের মর্যাদাপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি পরিপূর্ণ উন্নয়ন মডেল তৈরি
* সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও যুবদের শিক্ষা ও দক্ষতাবৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে সমাজের ‘চেইঞ্জ এজেন্ট’ হিসেবে তৈরি করা
* আদিবাসী ঐহিত্য, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা
* সমাজের মূল ধারার সাথে একীভূত হতে শিশু ও যুবদের অনুপ্রাণিত করা
* স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা।

ফিরে দেখা:
প্রফেসর অচ্যুত সামান্ত যখন চার বছর বয়সের তখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তাঁর পিতা দেহত্যাগ করেন। সে সময় তাঁরা সাত ভাই-বোন, বিধবা মা-কে নিয়ে চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছে। খুব অল্প বয়সে তাঁর দেখা হয়ে যায় দারিদ্রতার কঠিন রূপ। উপলব্ধি করে দারিদ্রতা এবং অশিক্ষা কীভাবে একটি মানুষের সবরকম সম্ভাবনাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়। সে উপলব্ধি থেকে তিনি লক্ষ্য ঠিক করেন- যেভাবেই হোক লেখাপড়া শিখবেন এবং সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসী মানুষের জন্য বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবেন। এরকম একটি বাস্তবতায় সে এক আত্মীয়ের সহায়তায় ১৯৯০ সালে রসায়ন বিভাগে স্নাতক হন। 

এরপর শিক্ষকতায় যোগ দেন। কিন্তু অল্পদিনেই তিনি টের পান পূর্ণকালীন চাকুরি তার করা চলবে না। মানুষের জন্য কিছু করতে হলে তাকে অবশ্যই সত্যি সত্যি কাজে নামতে হবে। এভাবে একদিন মাত্র ৫০০০ টাকা (১০০ ডলার) সম্বল নিয়ে তিনি নেমে পড়েন। উড়িষ্যা রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাসমূহে ঘুরে ঘুরে দেখেন, তাদের সাথে কথা বলেন, তাদের সাথে কিছুদিন অবস্থান করেন এবং বুঝবার চেষ্টা করেন আদিবাসীদের জীবন ও সংগ্রাম। এভাবে একসময় তার মনে হলো-সরকার ও বেসরকারি সংগঠনসমূহের নানাবিধ সহায়তা সত্ত্বেও কেনো তাদের উন্নয়ন হচ্ছে না, কেনো তারা দারিদ্রতার দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না। তিনি উপলব্ধি করেন-শিক্ষা ছাড়া শুধু আর্থিক সহায়তা মানুষকে বরং পরমুখাপেক্ষিই করে তুলছে। 

তিনি, উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বরে একটি ভাড়া ঘরে কলিঙ্গ ইন্সষ্টিটিউট অব টেকনোলোজি-কীট আরম্ভ করেন যার উদ্দেশ্য আদিবাসী কর্মোপযোগীদের কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধি করে আয়ের সুযোগ তৈরি করা। অন্যদিকে, কলিঙ্গ ইন্সস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স বা কিস শুরু করেন দরিদ্র আদিবাসী সন্তানদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে। শুরুতে মাত্র ১২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৩ সাল প্রতিষ্ঠার পর অল্প দিনেই প্রতিষ্ঠান দুটি সাফল্যের মুখ দেখে। এভাবে একটা পর্যায়ে কিস-এর শিক্ষা মডেলটি দিল্লি প্রাদেশিক সরকার গ্রহণ করে যা পর্যায়ক্রমে উড়িষ্যার সকল জেলাতেও রেপ্লিকেটেড হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম:
কিস একটি সার্বিক শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ করে। এখানে কেজি-ওয়ান থেকে মাস্টারডিগ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদের শিক্ষা খরচ, থাকা, খাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রতিপালিত হয়। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পৃথক আবাসিক ব্যবস্থা।  
বর্তমানে সেখানে ২৬৬৪২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। যারা মোট ১০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত যা ৩০ লক্ষ বর্গফুট শিক্ষা-অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারে। এখানে অধ্যয়ন করার জন্য মোট ৬২টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। উড়িষ্যা ছাড়াও এর আশেপাশের রাজ্যসমূহ থেকেও আদিবাসী দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হতে পারে। এর ২০ হাজার পুস্তক সম্বলিত গ্রন্থাগারটি একটি অন্যতম স্থাপনা। 
শিক্ষা কারিকুলাম
* কেন্দ্রীয় সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট কারিকুলাম কিস-এ চলমান রয়েছে। যেখানে ৮০০ শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পাঠ নিচ্ছে।
* কিস-ভারনাকুলার স্কুল উড়িষ্যা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড এর অধিভূক্ত যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়।
* উচ্চশিক্ষার জন্য মানবিকী, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় পাঠদান করা হয়। 
* ২০০৮ সালে কীট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট ২৭টি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
* আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কারিকুলামের পাশাপাশি কীস কারিগরী, স্কাউট, রেডক্রম, মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। 
শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কীস আরও কিছু বিষয়ে তাদের দক্ষ করে তুলছে। এ লক্ষ্যে ঐচ্ছিক কার্যক্রম হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা রয়েছে-
* উপজাতি সংস্খৃতি, দর্শন এবং আধ্যাত্মবাদ
* বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে আদিবাসী জ্ঞান অনুসন্ধান
* তুলনামূলক আদিবাসী ভাষা ও সাহিত্য
* আদিবাসী ঐতিহ্য ও পরম্পরা
* তুলনামূলক ইন্দো-উপজাতি বিজ্ঞান
* আদিবাসী সম্পদ ব্যবস্থাপনা
* আদিবাসী আইন শিক্ষা ও আদিবাসী অধিকার


কারিগরী ও অন্যান্য শিক্ষা:
কিস আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। যাতে একজন আদিবাসী মেয়ে বা ছেলে স্বাবলম্বি জীবিকায়ন নিশ্চিত করতে পারবে। এরমধ্যে অন্যতম হলো-কারিগরী শিক্ষা। যেখানে ‘‘আর্নিং ডিউরিং লার্নিং” এর মতো উদ্ধাবনী ব্যবস্থাপনাসহ আরও প্রায় কুড়িটি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই আর্নিং ডিউরিং লার্নিং কর্মসূচির আওতায় যে ট্রেডসমূহে শিক্ষা নিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো-খেলনা তৈরি, কম্পিউটার, কম্পোজিক ফারমিং, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পশুপালন, মৌচাষ, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, সেলাই, হাতের কাজ ইত্যাদি। এখানে ২৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর তৈরিকৃত পণ্য বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ্ই সব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের ২৫% পায় শিক্ষার্থীরা যারা শিক্ষাকালীন সময়েই দক্ষতা ও আয় উপযোগী হতে পারে।
কিস ফাইনেন্সিং মডেল
একটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কীস শুধু ভারতেই নয় বরং সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু এই বিশাল শিক্ষা কার্যক্রম, স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা কীভাবে চলছে সেটাও কম আগ্রহের বিষয় নয়। শুরুতে অচ্যুত সামান্ত নিজের এবং ব্যক্তি পর্যায়ের কন্ট্রিবিউশনে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলেও অচিরেই তা সামর্থের বাইরে চলে যায়। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থসহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়। বর্তমানে কীট-এ কর্মরত প্রতিটি কর্মী তাঁদের বেতনের ৩% শতাংশ নিয়মিতভাবে এ্ই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে। সরকারি অনুদানও আসছে। পাশাপাশি ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, ইউএনডিপিসহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিস-এর স্বীকৃতি
একটি ব্যতিক্রমী ও সফল শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ করে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের সার্বিক জীবন উন্নয়নে কিস দেশে-বিদেশে নানাভাবে স্বকৃত হয়েছে। ভারতের বেশীরভাগ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছেন। মূলধারার সকল প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সেখানে গেছেন। এর পাশাপাশি আন্তর্জতিক ও আন্তঃদেশীয় প্রতিষ্ঠানও কীস-কে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিস জাতিসংঘের অন্যতম একটি সংস্থা ইউনেস্কো’র সহযোগী সদস্যপদ লাভের গৌরব অর্জন করেছে। 
কিস মানবিক সাহায্য পদক:
কিস-এর অন্যতম একটি উন্নয়ন দর্শন হলো-স্বেচ্ছাসেবা। ফলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কারিকুলামে ও সংস্কৃতিতে স্বেচ্ছাব্রতী হওয়ার বিশেষ তাগিদ থাকে। এই বিষয়ে আরও বেশী মানুষকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর একজন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয় যিনি কি না মানবকল্যণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তিব্বতী আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গুরু ড. দালাই লামা ও প্রফেসর ইউনুস সহ ১২ জনকে এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।


স্বপ্নদ্রষ্টার কথা
প্রফেসর অচ্যুত সামান্ত (www.achyutasamanta.com)  বলেন-তার সমগ্র জীবনই এই আদিবাসী মানুষের জন্য। তিনি যে কাজ শুরু করেছেনসেখানে তাঁর স্বপ্ন ছিল ছিলএকাগ্রতা ও পরিশ্রম।ফলে সাফল্য ধরা দিতে বেশী সময় লাগেনি। আদিবাসীদের জীবনে দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভাঙ্গার শপথে তিনি অবিচল থেকেছেন। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে কিন্তু হতাশ হননি। বরং সেগুলো থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং মানবতার দর্শন দিয়ে একটি বৃহৎ দলকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

অধ্যাপক সামান্ত তাঁর মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কারিকুলাম, ব্যবস্থাপনা, তহবিল সংগ্রহসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার চর্চা করেছেন। শিক্ষা চলাকালীন আয় এবং সেটি করিগরী শিক্ষার মাধ্যমে যা ইতিপূর্বে কেউ চিন্তা করেনি। তাঁর শিক্ষা দর্শনের মধ্যে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয় বরং জীবনদক্ষতার অন্যান্য উপাদানকে অন্তর্ভূক্ত করে তিনি জীবনমূখী শিক্ষার এক যুগান্তকারী নজীর স্থাপন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কর্মী ও শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবসেবায় ব্রতী হওয়ার প্রেষণা জাগাতে তিনি কন্ট্রিবিউটরি তহবিল সংগ্রহের যে মডেল তৈরি করেছেন যেখানে প্রতিজন স্ব-বেতনের ৩ শতাংশ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় দান করছেন।

শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বিত্তভিত্তিক বিভাজন যেমন রয়েছে তেমনি জাতিগত বৈষম্যের শিকড়ও গভীরে গ্রথিত। যা মানব সভ্যতার তথাকথিত উন্নযনেও এতটুকু দূরীভূত হয়নি। বলা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেদিক থেকে দেখলে জোর দিয়ে বলা যায়-শুধু উপরিকাঠামোর উন্নয়ন কোনোভাবেই মৌলকাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না। হাজার বছরের অভিজ্ঞতা বলে-স্ইে মৌল-কাঠামোয় পরিবর্তন আনার জন্য হাতেগোনা কিছু মহান ব্যক্তিত্ব কাজ করেছেন। যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বর্তমান প্রজন্মও স্বীকার করে চলেছে। প্রফেসর অচ্যুত সামান্তও তেমনি একজন। যিনি গতানুগতিক উন্নয়ন ধারার সাথে না গিয়ে নতুন উদ্ভাবনী পথে সন্ধান করেছেন সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষের মুক্তির পথ। 
কীস এগিয়ে যাক। আরও লক্ষ কোটি আদিবাসীর অন্ধকার ঘরে জ¦লে উঠুক মক্তির প্রদীপ। স্যালুট প্রফেসর অচ্যুত সামান্ত। লং লিভ কীস।

লেখক: মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী