• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২০, ০৬:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৮, ২০২০, ০৬:৫০ পিএম

আহা প্রাণীকূল, ঝলসিছে মহাবেদনায়!

আহা প্রাণীকূল, ঝলসিছে মহাবেদনায়!

গত প্রায় দুইমাস ধরে জ্বলছে অষ্ট্রেলিয়া। আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাক করে চলেছে দেশটির লক্ষ লক্ষ হেক্টর এলাকা। পুড়ছে গাছপালা, পুড়ছে অবলা বণ্যপ্রাণী। প্রাণীতত্ত্ব ও পরিবেশবিদদের ধারনা ইতিমধ্যে দেশটির বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ কোটি স্তন্যপায়ী প্রাণী আগুনে পুড়ে মরেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ জনের বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কয়েক হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, পুড়ে গেছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল। দেশের ছয়টি প্রদেশের চারটিই আজ পড়েছে দাবানলের করাল গ্রাসে। অষ্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এ অগ্নিত্রাস থামাতে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আশংকা প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, এই পাগলপারা দাবানল আরও কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে।

অষ্ট্রেলিয়া জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। একটা সময় পরিবেশ ও ভূগোল বিষয়ক পাঠ্য বইয়ে আফ্রিকা মহাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য অন্তর্ভূক্ত ছিল। সেখান থেকেই আমরা খুব কমবয়সে অষ্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে প্রথমত জানতে পারি। জানতে পারি-ক্যাঙ্গারু, কোয়ালা, জিরাফ, প্লাটিপাস, হরিণ, হাজার রকম পাখি, সরীসৃপ তথা অষ্ট্রেলিয়ার প্রাণী বৈভব সম্পর্কে। অতীব দৃষ্টিনন্দন ঐসকল প্রাণীর জীবনাচার, খাদ্যাভাস এবং বংশবিস্তার ইত্যাদি সম্পর্কে যে বর্ণনা তা ছিল ভীষণ আকর্ষণীয়। প্লাটিপাসের দেহের গড়ন অনেকটা খরগোসের মতো হলেও এর মুখটি হাঁসের ঠোঁটের মতো, ক্যাঙ্গারু পেটের নিচের অংশে থলে সদৃশ্য স্থানটিকে শিশু ক্যাঙ্গারুকে নিয়ে কিভাবে দু’পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, কোয়ালা কিভাবে দ্রুততার সাথে গাছে ওঠে আর মগডালের কচি নরম পাতা খায়, সরীসৃপের ভয়ঙ্কর সুন্দর গাত্রবর্ণ আর তার বিষের মাত্রা ইত্যাদি নিয়ে কি চমকপ্রদ বর্ণনা বইয়ের পাতাগুলিকে একেবারে জীবন্ত করে তুলতো। 

আজ সেই নিরীহ অবলা প্রাণীরা আগুনে ঝলসে যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী কোটি কোটি প্রাণী আগুনে বেঘোরে মরছে। জ¦লে অঙ্গার হয়ে পড়ে থাকছে যত্রতত্র! কী বিভৎস্য, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু নির্মম সত্য হলো- সেই বিভৎসাই এখন দেখতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। অষ্ট্র্রেলিয়ার মতো উন্নত একটি দেশের প্রশাসন, প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক বাহিণী, স্থানীয় বাসিন্দা, সর্বস্তরের মানুষ সবাই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও তেমন কিছুই করতে পারছে না। শত শত অগ্নিনির্বাপক গাড়ী, সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য আর স্বেচ্ছাসেবক সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্বেও এতো কোটি প্রাণীর মৃত্যু আসলেই ভাবিয়ে তুলেছে তাবৎ সংবেদনশীল মানুষকে। দেশটির সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি, ব্যাপক প্রচারণা, ভিকটিমদের সহায়তা প্রদান এবং সর্বোপরি আগুন নেভানোর জন্য তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। সবার উৎকন্ঠিত অপেক্ষা কীভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে সে বিষয়ে। 

কিন্তু কেনো এই ভয়াবহ দাবানল? সেটা আজ অন্যতম একটি আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক-তাঁরাও  বিষটি নিয়ে নানান চিন্তা-ভাবনা চালিয়ে যাচ্ছে আশু কোনো সমাধান খুঁজে পাবার আশায়। তাঁরা বলছেন-জলবায়ু পরিবর্তন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি এ অঞ্চরের দাবানলের অন্যতম কারন হতে পারে। এছাড়া আরও কারন থাকতে পারে যা খুঁজে বের করা প্রয়োজন এবং এ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ওয়াকিফহাল মহল বলছে-এ দাবানলের ক্ষয়ক্ষতি একাধারে ব্যাপক ও বহুমাত্রিক হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা-চরিত্র করে এ আগুন হয়তো একসময় নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কিন্তু যে বিপুল সংখ্যায় প্রাণীর মৃত্যু হলো সেই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে?

 যে সকল প্রাণী হারিয়ে গেলো সেগুলোর পরম্পরা রক্ষা, বিরল প্রাজাতি বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিসমূহের অস্তিত্ব কীভাবে রক্ষিত হবে সেগুলি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। আবার কতো বছরে অষ্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য হারানো গৌরব ফিরে পাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চলছে জোর আলোচনা যা সংশ্লিষ্ট সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।

এমন একটি বাস্তবতায় প্রাণীকূলের অসহায়ত্ব আসলেই নাঙ্গা হয়ে দেখা দিল। সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপে প্রাণীদের অসহায়ত্ব, বাঁচার আহাজারি, একে অপরকে একসাথে নিয়ে পালাবার যে প্রানান্ত চেষ্টা তা সত্যিই হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পর্শী। মানুষের উপস্থিতি দেখলেই তারা ছুটে আসছে আশ্রয়, খাবার আর পানির আশায়। নিরীহ অবলা প্রাণীদের জন্য এমন অসহ্য পরিস্থিতি স্মরণকালের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা যা মানুষকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। কায়মনবাক্যে তাই চাই- পরিস্থিতির যেনো আশু সমাধান হয় এবং আর কখনই যেনো তা ফিরে না আসে। 

 

  লেখক : অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন সন্ধানী