• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ০৪:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ০৪:৫৮ পিএম

অটোরিকশায় ‍‍`সবুজপ্রেম‍‍‍‍` ও আমাদের ‍‍`সিভিক সেন্স‍‍`

অটোরিকশায় ‍‍`সবুজপ্রেম‍‍‍‍` ও আমাদের ‍‍`সিভিক সেন্স‍‍`

অন্তরে যার অন্যের মঙ্গলের চিন্তা তাকে কোন সীমাবদ্ধতাই আটকে রাখতে পারে না।আমরা যদি সর্বদা অন্যের ভালো চিন্তা করি,সমাজ এমনিতেই সুখের হয়ে উঠবে।পরিবেশের এই যে আমূল পরিবর্তন তা হুট করে হয়নি।সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই দেশকে আমরা সকলে মিলে তিলেতিলে শ্রীহীন করে তুলেছি। একটি দেশ বা নগরী তখনই দূষিত তকমা লাভ করে যখন সেই দেশে পরিবেশ বান্ধব জনগন ও সরকারের অভাব তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হয়।রাজধানী ঢাকা বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত নগরী হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।এই শহরটা যে মরে যাচ্ছে তার দায় কি শুধু সিটি কর্পোরেশন কিংবা সরকারের একার?এই শহরটাকে আমরা সবাই মিলে কি একটু একটু করে মেরে ফেলিনি?

ফুটপাত কিংবা রাস্তা ভরে থাকে প্লাস্টিক বোতল,পলিথিন আর বর্জ্যে।এগুলা নিশ্চয়ই সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে ফেলে দিয়ে যায় না!প্রতিবছর রাজধানীর ড্রেন আর সুয়ারেজ লাইনগুলো ভরে ওঠে পলিথিন,প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা বর্জ্য পদার্থে।এগুলো পরিষ্কার করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে প্রতিবছর কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করতে হয়।অথচ আমরা একবারও ভাবি না বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় এই আমরাই কষ্টভোগ করি,গালাগাল দিই কর্তৃপক্ষকে।এই জলাবদ্ধতায় এডিস মশার প্রজনন কয়েকশ গুণ বেড়ে কেড়ে নেয় শত শত প্রাণ।

রাজধানী ঢাকায় যতগুলো লেক আছে তার কোনটিরই পানি স্বচ্ছ তো নয়ই,দুর্গন্ধে বেশিক্ষণ বসে থাকাও যায় না।অথচ লেকের পানি দুর্গন্ধ ও দূষণমুক্ত করতে প্রতিবছরই সিটি কর্পোরেশন নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করে।লেকগুলো ভরে থাকে পলিথিন,প্লাস্টিক আর নানা বর্জ্যে।এগুলা কারা ফালায় লেকের পানিতে?নিশ্চয়ই সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা নয়?আমরাই বিনোদনের বিনিময়ে লেকগুলোকে মেরে ফেলার সকল বন্দোবস্ত করে আসি।অথচ নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে।লেকগুলোতে প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়ার জন্য বেশ পরিছন্ন টয়েলেটের ব্যবস্থা রয়েছে।অথচ প্রায়ই চোখে পড়ে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই লোকজন গাছের আড়ালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন!

বুড়িগঙ্গা তো মৃত প্রায়।তাকে বাঁচানোর নানা উদ্যোগও কাজে আসছে না।ঢাকা শহরের বেশিরভাগ সুয়ারেজ ও শিল্প কারখানার বর্জ্য গিয়ে মিশে বুড়িগঙ্গার পানিতে।দক্ষিণ বঙ্গের শত শত লঞ্চ প্রতিদিন সকালে এসে পৌঁছে ঢাকায়।যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর লঞ্চগুলোকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয় বুড়িগঙ্গার বুকেই।হাজার হাজার পাস্টিক বোতল,পলিথিন আর নানা বর্জ্য মুহূর্তেই মিশে যায় বুড়িগঙ্গার পানিতে। ইঞ্জিন চালিত নৌকার দৌরাত্ম্যে বুড়িগঙ্গার পানিতে সবসময় ভেসে থাকে তেল। এগুলো দেখার জন্য যেন কেউ নেই,নেই কোন আইন।অথচ এসব অনিয়ম রোধে না আছে কঠোর কোন আইনের প্রয়োগ না আছে ব্যক্তি সচেতনতা।

সভ্য নাগরিকরাই অধিকার রাখে উন্নত নাগরিক সেবা পাওয়ার।দেশ প্রেম অন্তরে ধারণ না করতে পারলে দেশের বারোটা এমনিতেই বেজে যায়। দেখা যাচ্ছে কেউ একজন ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন,তার হাতে বোতলজাত কোন পানীয়।পান করা শেষে ফুটপাতেই ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন।বাসে বসে বাস যাত্রীরা যা কিছুই খাচ্ছেন,খাওয়া শেষে বর্জ্যগুলো রাস্তায়ই ফেলে দিচ্ছেন।এমন চিত্র সারাদেশের সকল জায়গায়।আর এভাবেই দেশটা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।

আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই,নেই শুধু তার যথাযথ প্রয়োগ।আমরা আইন ভাঙ্গতে যতটা কৌশলী ও পারদর্শী,আইন মানতে ততই অনীহা।দৃশ্যমান বিচার ও শাস্তিই পারে এই অসহনীয় পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে।পাঠ্য পুস্তকে বিস্তারিতভাবে পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখার উপায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।সেখানে আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধান কি তারও উল্লেখ থাকতে হবে।যাতে করে একটি শিশু ছোটবেলা থেকেই শিখে বড় হতে পারে তা কি করণীয়,কি উচিত নয়।আর এইসব শিক্ষা তখন সুফল বয়ে আনবে যদি আইন অমান্যে যথাযথ শাস্তির প্রয়োগ থাকে।

আমরা সকলে মিলে চাইলেই এই মৃত নগরীকে আবার বাসযোগ্য করে তুলতে পারি।আমরা সবাই যদি সচেতন হই,নিজের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করি,তাহলে সিটি কর্পোরেশনের জন্য কাজগুলো যেমন সহজ হবে তেমনি তারা জবাবদিহিতার আওতায়ও চলে আসবে।আমরা সবাই সভ্য হলে অসভ্যরা হয়ে ভয়ে পালিয়ে যাবে,নইলে নিজেকে পাল্টাতে বাধ্য হবে।সিটি কর্পোরেশনের নানা কর্মসূচীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা নাগরিক জীবনকে অনেকাংশে কঠিন করে তুলেছে।তাদের এই বিষয়ে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। ঢাকার বাতাসকে দূষণমুক্ত করতে তাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।বাতাসে ধুলোবালি মিশে শ্বাস নেয়ারও উপায় নেই।অতিদ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ঢাকা শুধু দুষিত নয় মৃতের নগরীতেও পরিনত হবে অচিরেই।

কারো ভালো করার জন্য,পরিবেশ সুন্দর ও সুস্থ রাখার জন্য সচেতনতা ও দায়িত্ব পালনে মেয়র হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। সকল দায় মেয়র বা সরকারের নয় তার বড় প্রমান দুলাল চন্দ্র। যিনি সবুজ নগরী,সবুজ দেশ গড়ার আহবান জানিয়ে ছুটে চলছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে।শুধু তাই নয় ,এই সিএনজি চালক তার গাড়িতে বিনামূল্যে অসহায় রোগিদের সেবা দিয়ে থাকেন। ইত্যাদি কর্তৃক পুরষ্কার প্রাপ্ত দুলাল চন্দ্র নিজের জায়গা থেকে নিজের দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন।আমরা কি পারিনা নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিবেশ সুরক্ষায় নিজের দায়িত্বটি পালন করতে?

লেখক: শিক্ষক, সমাজকর্মী