• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১, ২০২০, ০৫:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১, ২০২০, ০৬:০২ পিএম

প্রধানমন্ত্রী আমলাতন্ত্রের উপরই ভরসা রাখছেন

প্রধানমন্ত্রী আমলাতন্ত্রের উপরই ভরসা রাখছেন
রাশেদ খান মেনন

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অর্থ বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ‘ফোবর্স’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশংসা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত সেখানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে শ্লাঘারী বিষয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের এই স্বীকৃতি সংকট মোকাবিলায় দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সবার প্রত্যয়দীপ্ত সম্মিলিত প্রয়াসকে বেগবান করবে। 

প্রধানমন্ত্রীর এই স্বীকৃতি দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা যোগাবে সন্দেহ নাই। তবে যে সম্মিলিত প্রয়াস বেগবান করার কথা বলা হয়েছে তা ইতিমধ্যেই অনেকাংশে পথভ্রষ্ট হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৮ই মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশের আগেই প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় কমিটির যে সভায় করোনা ভাইরাসজনিত কারণে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত হয় সেই সভায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যবস্থাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে স্বাস্থ্যসেবা সচিব সভাকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ডব্লুএইচও-র প্রটোকল অনুযায়ী সব প্রস্তুতি আছে। ঐ সভার পর প্রস্তুতির ব্যাপারে তিন মাস কি অমূল্য সময় আমরা হারিয়েছি সে সম্পর্কে আরেকটি নিবন্ধে আমি লিখেছি। এখানে তার পুনরুক্তি করতে চাই না। তবে ঐ মহামারী মোকাবিলায় সবার অজানা যে ৫০০ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছিল তার প্রধান হয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় এই বলে প্রকাশ্যেই গণমাধ্যমে খেদোক্তি করেছিলেন যে করোন ভাইরাস মোকাবিলায় কি ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছেন তা তিনি জানেন না। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যাকে সেনাপত্যের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার ঐ অসহায়ত্ব কি প্রমাণ করে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে এখন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ‘জাতীয় টেকনিক্যাল  পরামর্শক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে কোন পর্যায়ে কি পরামর্শ নেয়া হবে তা জানা নাই। আর যদি নেওয়াও হয় তবে ঐ পরামর্শের মূল্য কতটুকু হবে তাও জানা নাই। প্রস্তাব করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে জাতীয় টাস্ক ফোর্স করার যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহী করবে। সেটা কোনো বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ট্রাম্প পাগলামী করছে সেখানে তাকেও সহযোগিতা করছে ড. ফাউসি-র মত খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকের দল। চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, অন্যান্য দেশেও সেটা লক্ষ্য করেছি। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি এটা সম্পূর্ণতই আমলাতন্ত্রের হাতে বন্দী যার ফলে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা দূরে থাক, প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নাই। পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল নাই। করোনা রোগী ও তার আত্মীয়দের সাথে কি ব্যবহার করা হয়েছে ও হয় তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া ভুক্তভোগীদের হৃদয়বিদারক বর্ণনায় পাওয়া যায়। সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের বা মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ একজন জাক করে বলেছিলেন যে, তারা চীনের মত কয়েক দিনেই হাসপাতাল বানিয়ে ফেলবেন। এখন যে হাসপাতালগুলো আছে তার পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায় তারা দেশবাসীকে বোকা মনে করেন বলে একথা বলতে পেরেছিলেন। দেশের মানুষের ভাগ্য ভাল যে শতকরা আশি ভাগ করোনা রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয় না। আর যদি যেতেই হয় তবে ভেন্টিলিটারের অভাবে ঐ রোগীদের কি অবস্থা হোত তা বোঝা যেত। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ব্রিফিং-এ বলেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ভেন্টিলিটারের অভাব রয়েছে! সেখানে কত হাজার আক্রান্ত, আর কতজন মারা যাচ্ছে তার হিসাব আছে কি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর। সে পরিমাণ আক্রান্তের সংখ্যা হলে সবাই তো হাসপাতালে মরে হেজে যেত। তার সংখ্যা কত হত?

এ ব্যাপারে একজন চিকিৎসকের বক্তব্য উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি করোনা চিকিৎসার বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘দেশের জনগণ তার চিকিৎসার প্রকৃত চাহিদা নিরুপন করতে পেরেছে কি? দেশের রাজনীতিবিদগণ নিরুপন করতে পেরেছেন কি সুচিকিৎসা সেবাদান বলতে কি বোঝায়? দেশের সরকার সঠিক সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিরুপন করতে পেরেছেন কি? উত্তর হলো, না। যেখানে খোদ রাজধানী ঢাকায় অত্যাধুনিক একটি নবনির্মিত হাসপাতালে (কুর্মিটোলা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল) সেন্ট্রাল অক্সিজেন, (এমনকি মেনিফ্লোট- যা অনেক বেসরকারি ছোট হাসপাতালেও আছে- সরাসরি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য) করার প্রয়োজনবোধ করেনি। এই চিত্র শুধু এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের নয়, প্রায় সকল সরকারি হাসপাতালের এই চিত্র। জনগণ, রাজনীতিবিদ এবং সরকার এই তিনটি গোষ্ঠীর কাছে চিকিৎসাসেবা বলতে বোঝায় চিকিৎসকের উপস্থিতি। কিন্তু শুধু চিকিৎসকের উপস্থিতি দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা তা তারা কোন দিন ভেবে দেখেনি আমলাতন্ত্রের সুক্ষ্মকুচক্রে পরে। একজন চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত সুচিকিৎসার প্রথম ও প্রধান ধাপ- চিকিৎসাপত্র। কিন্তু সুচিকিৎসা বলতে বোঝায় চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত প্রতিটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যথাযথ সরবরাহ- যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা, সেবিকাদের যথাযথ কার্যকরী ভূমিকা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, অক্সিজেনসহ অন্যান্য কিছু ব্যবস্থার লেভেল অনুযায়ী জনবল ব্যবস্থা রাখা।’ আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা রেখেছেন কি?

প্রশ্নটা এই কারণে যে করোনা চিকিৎসা কেবল নয়, কেবল করোনা পরিস্থিতিতে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে চিকিৎসকরা নিদারুণ প্রশ্নের সম্মুখিন। কিন্তু যেখানে আমলাতন্ত্র কেবল করোনা মোকাবিলা নয়, সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে তাদের মত করে বাস্তবায়ন করে তখনই প্রশ্ন আসে। এখানে একজন চিকিৎসকও যখন ঐ জায়গায় বসেন তখন আমলা হয়ে যান। 

এর প্রমাণ চিকিৎসকদের পিপিই সরবরাহ ও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ নিয়ে। প্রতিদিন ব্রিফিং-এ বলা হচ্ছে লাখ লাখ পিপিই, কীট আছে। সরবরাহও করা হচ্ছে। কিন্তু ঐ পিপিই-র অভাবে যখন চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মারা যান, আক্রান্ত হন তার কি উত্তর। সামাজিক মাধ্যমে একজন চিকিৎসক মাস্ক না পাওয়ার কথা বললে স্বাস্থ্যসেবা সচিব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছেন। এ যেন ভাত দেবার ভাতার না, কিল মারার গোসাই। আর এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্রিফিং-এ একজন ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আইসিটি আইনে মামলা দেবার হুমকি দিয়েছিল পরপর দু’দিন। পরে যখন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কেলেংকারী সম্পর্কে জানতে চেয়েছে তখন সরবরাহকারীর ঘাড়ে দায় রেখে এখন একেবারে মিয়ে গেছেন।

এখন লেগেছে গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীর কীট অনুমোদন নিয়ে। এবার মঞ্চে মেজর জেনারেল। তার বক্তব্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা না মানায় গণস্বাস্থ্যের কীট গ্রহণ করিনি। এখানে যেটা তিনি উহ্য রেখেছেন গণস্বাস্থ্য ঔষধ প্রশাসনকে দেয়ার জন্য নয়, তৃতীয় পক্ষ দিয়ে পরীক্ষা করে দেবার জন্য তার কীট হস্তান্তর করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে দু’দফায় নাটক করলেন তারা। এখানেও ‘সিআরও’ নামে মধ্যস্বত্ব ভোগী রাখা হয়েছে (যারা আমাদের পরিচিত) যাদের বাজেট না দিলে ওটা নাকি বিএসএমএমইউ বা এ ধরনের কাউকে পরীক্ষার জন্য দেয়া যাবে না। এই কীটের দাম ২৫০-৩০০ টাকা। আর আরটি-পিসিআর- যা এখন তাড়াহুড়া করে আনা হচ্ছে তার পরীক্ষার খরচ অনেক বেশি। এখানেও বিবেচনায় জনস্বার্থ বা দুর্যোগ মোকাবেলার সহায়তা করা নয়। বিষয়টা হচ্ছে বাণিজ্য। 

আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কথা বলেন প্রতিদিন- টেস্ট করান। সেই টেস্টের কি অবস্থা? ডিএনসিসি একজন কর্মকর্তার টেস্টজনিত সমস্যা তার প্রমাণ। তার সহকর্মীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টার পরও তার মৃত্যুর আগে তার টেস্ট করাতে পারেনি, চিকিৎসা দূরে থাক। এটাত হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাইরের করোনা সাসপেকেটেড রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে বলছে। ঢাকায় এসে রোগী এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলছেন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভাল আছি। 

এত গেল স্বাস্থ্যসেবা। আর সাধারণ ব্যবস্থাপনা এটাও আমলাতন্ত্রের নিষ্ঠুর বাঁধনে। যখন ২৬ মার্চ ছুটি ঘোষণা করা হল তখন সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব বেশ ভারিক্কিক চালেই বললেন, ‘লক ডাউন’ আন-সায়েন্টিফিক। ওটা হবে ‘সোশ্যাল ডিসটেনসিং’। এমন সামাজিক দূরত্ব তৈরি হল যে মানুষ ছুটি পেয়ে হুরমুর করে গ্রামে ছুটল। কেউবা বিনোদনের জন্য বউ বাচ্চা নিয়ে কক্সবাজারে। সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেল। সম্ভবতঃ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিন মন্ত্রী ছুটলেন, রেল, নৌযান আর গণপরিবহন বন্ধ করতে। ইতিমধ্যে যা হবার তা হয়ে গেছে। প্রথমে স্বীকার না করলেও যখন কিছু বেশি টেস্ট করায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করল রোগতত্ব বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিরস বদনে ঘোষণা দিলেন ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হয়ে গেছে। গাল খেল শালার জনগণ তাদের বেআক্কেলাপনার জন্য!
আর কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ? প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন সবার কাছে খাবার পৌঁছুতে। মাধ্যমও এখানে ডিসি মহোদয়। ঢাকা মহানগরে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ঐ ত্রাণ বিলি করা হবে। কাউন্সিলরদের হুকুম দেয়া হল পাঁচশ জনের তালিকা কর। কাউন্সিলরদের ঘুম হারাম। কার কোথায় কি প্রয়োজন জানা নাই। ঢাকার ষোল এমপি কেউ কিছু জানে না। তাদেরও ঘুম হারাম। ব্যক্তিগত উদ্যোগ-দলগত উদ্যোগে তারা মানুষের কাছে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন। তাদের দায় রয়েছে জনগণের প্রতি। কিন্তু কোথাও তাদের উপস্থিতি নাই। পত্রিকার জাদরেল কলাম লেখক লিখলেন- ‘এমপি সাহেবরা কি আন্ডার গ্রাউন্ডে।’ এরপর এই সমস্ত বিষয়কে সমন্বয় করার জন্য চৌষট্টি জেলায় চৌষট্টি জন সচিবকে সমন্বয়ক করা হল। ঢাকার যিনি দায়িত্বে তিনি অনুগ্রহ করে এমপিদের আহ্বান করলেন সমন্বয় সভার। জুমএ্যাপে অনুষ্ঠিত সভায় সব এমপিরা জানল ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তাদের ত্রাণ বিতরণ কমিটি উপদেষ্টা বলা হলেও এ ধরনের প্রজ্ঞাপন তারা পাননি। কোন বিষয়ই তারা জানেন না। তাদের বক্তব্য, আস্থায় না নেন, কিন্তু বদনামের ভাগী করবেন না। আর রেশন কার্ড? প্রধানমন্ত্রীর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যা ‘দিন আনা, দিন খাওয়া’ মানুষদের এই মুহূর্তে সহায়তা করবে। কিন্তু সেখানে বলা হল দু’দিনের মধ্যে তালিকা পাঠাও। আর তালিকা ভাগ হয়ে গেল পদ-পদবির ভিত্তিতে। দু’দিনের মধ্যে দিতে গিয়ে যাকে হাতের সামনে পাওয়া গেছে তার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হল তালিকায়। এ প্রসঙ্গে ড. আকবর আলী খানের বহু পঠিত আমলাদের ‘পাছায় লাথি’ ফর্মুলায় দুস্থ তালিকা নিবন্ধটি মনে করিয়ে দেয়। লম্বা হয়ে যাওয়ার কারণে সেটা এখানে দেয়া গেল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর রেশন কার্ড প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখবার দরকার নাই। 

অনুজপ্রতিম বোরহান কবির করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে ‘গণতন্ত্র, আমলাতন্ত্র, দর্জিতন্ত্রে’র কথা লিখেছেন। এখানে কেবল আমলাতন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হল। প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় তার সাহসী সব প্রয়াসে আমলাতন্ত্র- সে সামরিক-বেসামরিক হোক- এর উপর ভরসা রেখেছেন। রাজনৈতিক দল, এমপি এখানে কার্যতঃ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ কিনা বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তা উপলব্ধি করেছিলেন বলেই তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিতে আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিলেন। তার ঐ পদক্ষেপ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিরোধিতা-বিতর্ক আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন কিভাবে আমলাতন্ত্র তাকে চুয়াত্তুরের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। দেশ গড়ার তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই আমলাতন্ত্রের উপরই ভরসা রাখছেন। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন। 
আর গণতন্ত্র ও দর্জিতন্ত্র নিয়ে লেখা আরেক দিনের জন্য তোলা রইল। প্রধানমন্ত্রীর কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কিভাবে সম্মিলিত প্রয়াসকে বেগবান না করে পথভ্রষ্ট হচ্ছে এ লেখাই সেটাই কিছুটা বলতে চেয়েছি। 

লেখক ● সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাবেক মন্ত্রী 

(বি. দ্র : এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব)

আরও পড়ুন