• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২০, ১২:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১০, ২০২০, ১২:০২ পিএম

বাংলাদেশে শিক্ষকের বর্তমান অবস্থান কি উন্নত দেশ গঠনে যথার্থ?

বাংলাদেশে শিক্ষকের বর্তমান অবস্থান কি উন্নত দেশ গঠনে যথার্থ?

গত ৫ অক্টোবর ছিলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি মক্তব থেকে শুরু করে একাডেমিক (স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের) সকল শিক্ষক এবং উপানুষ্ঠানিক যত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি, সে সকল প্রশিক্ষণের শিক্ষক/প্রশিক্ষকদের। শ্রদ্ধা জানাই বিশ্বের সকল শিক্ষককে যারা জনগণকে ‘মানুষ বানানো’র মতো সবথেকে কঠিন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন পেশা বা তার গুরুত্ব অনুধাবনে বিশেষ দিনে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান বা কার্যক্রম থাকে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নির্দিষ্ট দিনে; এমনকি সপ্তাহব্যাপী বিশেষভাবে তাঁদের পেশার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে থাকেন । এসব পেশার প্রফেশনাল অফিস বা তাঁদের প্রফেশনাল সংগঠনের অনেক কর্মসূচি থাকে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ণিত পেশার দায়িত্ববোধ, দেশ গঠনে তাঁদের ভূমিকা, তাঁদের অধিকার ,ক্ষমতায়ন ইত্যাদি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে Education International (EI) এর এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল Teachers: Leading in Crisis, Reimagining in Future (শিক্ষকঃ সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যৎ ভাবনা)।

বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষকদের শতাধিক সংগঠন, শিক্ষা সংক্রান্ত দু’টি মন্ত্রণালয়, চারটি অধিদপ্তরসহ আনুষঙ্গিক কয়েক ডজন অফিস থাকলেও এই দিবসটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি কখনো চোখে পড়েনি। চোখে পড়েনি এমন কোনো কর্মসূচি যা থেকে নবাগত শিক্ষক বুঝতে পারবে কী তাঁর দায়িত্ব, কী তাঁর অধিকার। চোখে পড়েনি এমন কোনো কর্মসূচি যা থেকে দেশের একজন মানুষ বুঝতে পারবে ‘সমাজে শিক্ষকের ভূমিকা’। এমন কোনো কর্মসূচি নজরে আসেনি যা থেকে ছাত্র তথা সমাজ জানতে পারবে দেশ গঠনে শিক্ষকের বিকল্প আর কে আছেন!

ঘুরে দেখা: পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের কাছ থেকে স্বদেশ ও দেশের মানুষকে উদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হবার সাথে সাথেই একজন প্রফেসরকে শিক্ষা সচিব করলেন। শুরু হল ভঙ্গুর ও অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের কাজ। চারদিকে অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ৭৫ এ স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্নকে মলিন করে দিলেন এক শ্রেণির কুচক্রি। অনিশ্চয়তায় পড়লো দেশ, পিছনে ফিরে গেলো শিক্ষাব্যবস্থা। পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের কায়দায় আবার বেদখল হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজও সেই অবস্থায়ই আছে বরং দিন দিন শিক্ষকদের হাত থেকে কেঁড়ে নেওয়া হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কম্পোজিশন রুল ১৯৮০ এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে সকল কর্মকর্তার পদ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের হওয়ার কথা থাকলেও সেসব পদ শিক্ষা ক্যাডারের কাছ থেকে কেঁড়ে নেয়া হয়েছে । এ নিয়ে মামলাও করতে হয়েছে শিক্ষা ক্যাডারকে, যা এখনো চলমান আছে। এমনিভাবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অধিদপ্তরসমূহ (কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা), ব্যানবেইজ, শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজেক্ট এর অধিকাংশ পদই শিক্ষা ক্যাডারের দায়িত্বে নেই । এমনকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান নায়েম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের প্রতিষ্ঠান এনসিটিভির অনেক পদ শিক্ষা ক্যাডারের বেদখলে । বর্তমান সরকারের সময়ে গৃহীত শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য দূর করার নির্দেশনা দিয়েছেন –কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসবই অধরা রয়ে গেছে।

শিক্ষার নয়-ছয়: কয়েক লক্ষ প্রতিযোগীর মধ্য হতে বাছাই করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয়, যদিও সেখানে বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে মেধাকে অবমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে এলাকার মাতব্বরদের তদারকিতে তৈরি হলো কমিউনিটি বিদ্যালয়; যা প্রি-প্রাইমারী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু কোন অদৃশ্য ইশারায় সেই কমিউনিটি বিদ্যালয়সমূহকে হঠাৎ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের সাথে একীভূত করে দেওয়া হলো। সেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও হয়ে গেলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক; যাদের অধিকাংশই সেই সকল মাতব্বরদের আত্মীয় স্বজন। তাহলে যারা কয়েক লক্ষ লোকের সাথে প্রতিযোগিতা করে চাকরিতে এলেন তাঁরা কী অপরাধ করলেন!

দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লক্ষ আট হাজারের অধিক। স্নাতক পর্যায়ে পাঠদানের সরকারি প্রতিষ্ঠানও প্রায় দেড় হাজার। তাহলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কত হওয়া প্রয়োজন ছিলো? প্রতি উপজেলায় যদি একটি সরকারি কলেজ থাকতে হয়, তবে কয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকার প্রয়োজন ছিলো ? কলেজ সরকারি নিয়ে যে কুটরাজনীতি রয়েছে; তা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই -সেজন্য এ খাতটি রাখা হয়েছে বেসরকারি তদারকিতে। হাতে গোনা কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি, আর দেশের ৯৩% শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় বেসরকারি বিদ্যালয়ে। এই সেক্টরের শিক্ষক নিয়োগ হতে শুরু করে পুরো সিস্টেমটাতেই একটা অন্ধকার জগত তৈরি হয়েছে। যদিও সম্প্রতি সরকারি সংস্থা NTRCA’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের চরম অনিয়মের লাগাম ধরার চেষ্টা চলছে। তবে যেভাবেই নিয়োগ হোক, এসব শিক্ষকের নেই উপযুক্ত কোনো প্রশিক্ষণ, নেই ভালো কাজে প্রণোদনা, নেই অনিয়মের কঠিন সাঁজা। ম্যানেজিং কমিটির ম্যানেজারিয়াল শাসন নিয়ে বলার ভাষা নেই, গ্রামের চা দোকানি হলেন -স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ! প্রধান শিক্ষকের নাভিশ্বাস ওঠে সভাপতির ফেলে যাওয়া পানের পিক পরিষ্কার করতে! এভাবেই কোমরভাঙা শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে দেশে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরের দেখভাল করার জন্য তৈরি হয়েছিল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। উচ্চ শিক্ষায় পাঠদানসহ শিক্ষার তদারকি ছিলো তাঁদের উপর । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল হাজারো বঞ্চনায় শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রতিটি দিন অতিবাহিত করতে হয় । চাকরিতে যোগদান করেই তাঁদের চোখে পড়ে অবহেলা। সকল ক্যাডার সদস্য যখন বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ করে কর্মস্থলে প্রবেশ করেন, সেখানে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যকে চাকরির চার বছর পরে, প্রমোশনের জন্য অপরিহার্য ‘বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ’ এর জন্য আন্দোলন করতে হয়; যে সময়ে অন্য অনেক ক্যাডার সদস্য প্রমোশন পেয়ে যান। আবার একই সাথে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং পরবর্তীতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও, পদোন্নতির সকল যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও পদোন্নতি পান না শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা।

দীর্ঘ ২১ বছর পরেও শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের প্রথম পদোন্নতির ইতিহাস রয়েছে। যেখানে ক্যাডার সার্ভিসে সর্বোচ্চ পদ ১ নম্বর গ্রেড; যদিও ২০১৫ এর পে-স্কেলে ১ নম্বর গ্রেডের পূর্বে গ্রেডবিহীন আরো তিনটা গ্রেড করা হয়েছে- কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারকে চার নম্বর গ্রেডে আটকে রাখা হয়েছে। সকল যোগ্যতা অর্জন করলেও শিক্ষা ক্যাডারের কেউ চার নম্বর গ্রেড অতিক্রম করতে পারবেন না । শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ ‘অধ্যাপক’ । ২০১৫ সালের পূর্বে কিছু সংখ্যক অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির মাধ্যমে তিন নম্বর গ্রেড পেতেন । ২০১৫ এর পে-স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারকে তৃতীয় গ্রেড হতে নামিয়ে চতুর্থ গ্রেডে পৌছে দেওয়া হয়। পদ অবনমনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও তা সঠিকভাবে সাংবাদপত্রের দৃষ্টিতে আনতে বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে বোঝানো যায়নি । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডে পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতিতে সমতা সৃষ্টি সম্ভব হয়নি আজও।

অন্য ক্যাডার সদস্য চাকরিতে এসেই যে সুবিধা পান, শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা অবসরে যাওয়ার সময়েও সেই সুবিধা পান না। শিক্ষা ক্যাডারের কোনো সদস্যেরই নেই বাসা হতে কলেজে যাওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা। এমনকি অধ্যক্ষের জন্যও রাষ্ট্রের বরাদ্দ নেই কোনো গাড়ি। কলেজের নিজস্ব ফান্ড হতে গাড়ি ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তার অনুমতি মেলা ভার; মন্ত্রণালয়ে জুতা ক্ষয় আর নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কোনো কোনো কলেজ হয়ত একটা গাড়ি ক্রয়ের অনুমতি নিয়ে গাড়ি ক্রয় করেছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনয়ণ, উত্তরপত্র প্রেরণ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে গমনের জন্য ভ্যান, রিক্সা, অটোরিক্সা, পাবলিক বাস বা নিজস্ব ব্যবস্থার বিকল্প নেই শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের। নেই ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স এ কোন স্থান, রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে তাঁর ছাত্রের জন্য চেয়ার থাকলেও, তাঁর জন্য থাকেনা কোনো চেয়ার। তাই ব্যক্তিত্ববান অনেক ক্যাডার সদস্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে চলেন। অন্য সবাই সপ্তাহে দুইদিন ছুটি ভোগ করলেও, সপ্তাহে একদিন ছুটি ভোগ করেন শিক্ষকেরা, অথচ ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্টের দোহাই দিয়ে অর্জিত ছুটির সুবিধা হতে বঞ্চিত করা হয় শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের। শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা অধিদপ্তরকে করা হয়েছে একটি ‘পোষ্ট অফিস’, যাদের নাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা। এমনকি ক্যাডারের ইতিহাসে মাত্র তিনজনকে ডিজি হিসেবে পদায়ন দেওয়া হয়েছে। এমন হাজারো দুর্ভোগের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বড় অশান্তির নাম লেজুড়বৃত্তির ‘ছাত্র রাজনীতি’। ছাত্রনেতা নামধারী সমাজের কিছু অসভ্যর কাছে অপমানিত হন নাই এমন শিক্ষা ক্যাডার সদস্য পাওয়া ভার। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এ নিয়ে অন্য সময়ে লিখবো। আজকের এই দিনে সর্বস্তরের শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে আরো কিছু কথা বলতে চাই।

একবার চীনের উহানে অবস্থিত আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাফেটরিয়ায় বসে চা পান করছিলাম কয়েকজন। এরমধ্যে একজন আমাকে বলল “তুমি আমাকে ইংরেজি শিখিয়ে দিবে,আমি তোমাকে চাইনিজ শিখিয়ে দিবো”। আমি বললাম-ঠিক আছে। এরপর কথার মাঝে আমি তাকে বলেছি ‘তুমিতো আমার লাউশি (শিক্ষক)’। তারপর হতে সে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিলো। বিষয়টি বুঝতে না পেরে অন্যান্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা  আমাকে জানালো যে আমি তাকে অপমান করেছি ! কারণ আমি তাকে ‘শিক্ষক’ বলেছি । আমি বিষয়টি আরো বুঝতে আগ্রহী হলে তারা জানায় ‘শিক্ষক’ শব্দটাই অনেক বড় একটা ব্যাপার, যিনি সমাজের অনেক সম্মানিত একজন মানুষ, যিনি সমাজ নির্মাতা, যিনি সমাজকে তথা রাষ্ট্রকে পরামর্শ দেন ইত্যাদি। যেহেতু সে এই উপাধির যোগ্যতা অর্জন করেনি, তাই আমি তাকে সেই উপাধি দিয়ে অপমান করেছি।

উহানে ১৬০ দেশের সেনাবাহিনীর ‘ওপেন টুর্নামেন্ট’ হলো গতবছর। পুরো শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের, আর টুর্নামেন্ট এলাকার দায়িত্ব একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের, তাও আবার ক্যাম্পাসে বসে। কথাটা শুনে খটকা লাগলো। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে টুর্নামেন্টের নিরাপত্তা দিবে!! কৌতুহলী  হয়ে আমার বিভাগের এডমিন অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষকের সাথে দেখা করি। তিনি দেখালেন প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে প্রতি ইঞ্চি স্থানকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রেখেছিলেন । নিজের কল্পনার বাইরে এমন কর্মকান্ড দেখে নিজেকে প্রচন্ড অযোগ্য আর দেশকে হতভাগা মনে হয়েছে।
মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপের সবচেয়ে বড় স্কুলটির (স্কুল ও কলেজ)অধ্যক্ষ আমাকে তাঁর স্কুল ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন। এক পাশে একটা ভবন দেখিয়ে এমন একটা নাম বললেন- যা আমি বুঝতে পারলাম না। জানতে চাইলাম-ওটার কাজ কী? জবাবে তিনি বললেন, “এ শহরে যত উন্নয়ন দেখছেন, সব কিছুর পরিকল্পনা এই ভবন হতে হয়”। স্কুলে কেনো তাহলে- জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বললেন “শিক্ষকেরা-ই সেই পরিকল্পনা দেন সিটি কর্তৃপক্ষকে”। এমন অনেক উদাহরণ চোখের কোণে ভাসছে।

আমার দেশে শিক্ষকদের দেয়া হয়নি ন্যুনতম সম্মান, আবার তাঁদেরকে তৈরিও করা হয়নি তাঁদের যোগ্যতার স্থানে। একটি ছোট কাজেও থানা শিক্ষা অফিস হতে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এদেশের শিক্ষকসমাজ। বোর্ড অফিস হতে খাতার বস্তা মাথায় করে নেয়ার দৃশ্য দেখতে পান দেশবাসী। সাপোর্ট সার্ভিস না থাকায় ছাত্রভর্তি, নম্বরশিট তৈরি, হিসাব বিবরণীসহ দাপ্তরিক কাজও করেন শিক্ষকেরা। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের অফিস আদেশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ডের অনলাইন কর্ম সম্পাদনও শিক্ষককেই করতে হয়। অর্থ্যাৎ শিক্ষাকতার পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজও শিক্ষককেই করতে হয়। এর মাঝে মাস্তানি ম্যানেজ করা বা তা প্রতিহত করা হচ্ছে তাঁদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে অনেক শিক্ষকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দায়িত্বহীনতা। অনেকে নিজেও অপরাধের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন। তাছাড়া যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যত্রতত্র গজিয়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি, রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়মের ঊর্ধ্বে থাকাসহ নানা অনিয়মের মধ্যে চলছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পিছিয়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা আর অবহেলিত শিক্ষকসমাজকে সামনে আনা সম্ভব নয়। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর,’ এমন সব মুখোরাচক বক্তব্য আর হাততালির মধ্যেই আটকে আছে বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন। ভিশন, মিশন আর এসডিজি যা-ই বলুন, সব কাগুজে থাকবে যদি শিক্ষাকে সর্বাজ্ঞে আনা না যায়। আর তা কেবলমাত্র সম্ভব শিক্ষকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ও তাঁদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। দেশের সকল শিক্ষক তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা পেলেই দেশ তার কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছুতে পারবে। এ কথা বুঝতে জাতি যত দেরি করবে, দেশ তত পিছিয়ে থাকবে। দেশের তথা জাতির উন্নয়নে শিক্ষক তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে- বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই প্রত্যাশা রইলো।

মুহম্মদ মফিজুর রহমান
রিসার্চ ফেলো (পিএইচডি)
উহান, চীন