• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২০, ০৪:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০২০, ০৪:৫০ পিএম

সেকালের ‘সম্পাদকীয়’

সেকালের ‘সম্পাদকীয়’

সম্পাদক প্রসঙ্গে নয়, সেকালের ‘সম্পাদকীয়’ সম্বন্ধে কিছু কথা বলছি। সাংবাদিকের ভাষায় যাকে ‘এডিটোরিয়াল’ বা ‘লিডার’ বলা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালের ‘সম্পাদকীয়’ নয়, সংবাদপত্রের জন্মকালের সম্পাদকীয়। সম্পাদকগণ তো নিশ্চয়ই পড়বেন, সাহিত্যপত্রের ও সংবাদপত্রের পাঠকরাও পড়বেন। শিশু-সংবাদপত্রের প্রবীণ সম্পাদকের শিশুসুলভ ‘সম্পাদকীয়’ পড়লে আজকালকার সবচেয়ে গুরুগম্ভীর সম্পাদকও হেসে ফেলবেন। মহাভারতের কথার মতন ‘সম্পাদকীয়ের’ কথা অমৃত সম না হলেও উপভোগ্য। 

আমাদের এই উপমহাদেশে বিশেষ করে বঙ্গদেশে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করে ইংরেজরা এবং ইংরেজরাই তার সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতা সম্বন্ধে আজও শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে থাকেন ইংরেজরা এবং গর্ব তারা করতেই পারে। ইংরেজরাই আমাদের সাংবাদিকতার দীক্ষাগুরু। এ-হেন গুরুদেবের এ দেশে সাংবাদিকতার কিছু নিদর্শন দেখলে শিষ্যেরা আজ আর হয়তো উপকৃত হবেন না, কিন্তু অবাক হবেন। 

যারা সংবাদপত্রের প্রথম প্রবর্তক, সেকালের সেই ইংরেজ সম্পাদকদের সংযত বা শালীনতাবোধ বলে বিশেষ কিছু ছিল না। তখন এ দেশের ইংরেজ সমাজের যে চেহারা ছিল, তাদের প্রথম সংবাদপত্রে আয়নার মতন সেই চেহারাই প্রতিফলিত হয়েছে। অবশ্য সেটাই হওয়ার কথা, কারণ সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ ছাড়া আর কি! ‘সমাচার দর্পণ’ নয়, সংবাদপত্রকে ‘সমাজ-দর্পণ’ বলা যেতে পারে। মি. হিকি প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করেন ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে, নাম ‘বেঙ্গল গেজেট’। কিন্তু বেচারা তাল সামলাতে পারলেন না। ওয়ারেন হেস্টিংসের স্ত্রী সম্পর্কে যা-তা লিখে ফেললেন। তাতে সরকারি আদেশে বন্ধ হয়ে গেল ‘বেঙ্গল গেজেট’। একজনের স্ত্রী সম্বন্ধে সংবাদপত্রে লেখা, তাও আবার ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের স্ত্রী সম্বন্ধে-- সে যে কী ভয়ানক তাজ্জব ব্যাপার, তা আজ আর আমরা কল্পনাও করতে পারব না, এমনকি এখনকার এই গণতন্ত্রের খেউড়-লড়াইয়ের সময়ও না। লেডি হেস্টিংস তখনকার কলকাতার ফ্যাশন ও এটিকেটকর্ত্রী ছিলেন। সুন্দরী ফ্যাশনদুরস্ত লেডি হেস্টিংসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খানাপিনার আসরে অনেকেই ঘুরে বেড়াতেন। শোনা যায়--কলকাতায় বসেও লন্ডন প্যারিসের হালফ্যাশনের খবর রাখতেন মিসেস হেস্টিংস। তার বিশেষ সংবাদদাতারা নিয়মিত চিঠিপত্র লিখে তাকে হালফ্যাশনের খবর দিতেন। একবার তিনি খবর পেলেন যে, লন্ডনের সবচেয়ে স্মার্ট মেয়েরা এমন পোশাক পরতে শুরু করেছে যে, তাদের যত বয়সই হোক, দেখতে কচি খুকি বলে মনে হয়। সঙ্গে সঙ্গে হেস্টিংসপত্নী একদিন হঠাৎ করে কচি খুকি সেজে এক ভোজসভায় উপস্থিত হয়ে কলকাতার অন্যান্য ইংরেজ মহিলাদের হকচকিয়ে দেন। মিসেস ফে (ঋধু) হঠাৎ চটে গিয়ে বললেন, ওটা ‘শিশুদেরও অতিসাধারণ পোশাক’ নয় এবং এটি ‘বর্তমান সময়ের ব্যবহৃত পোশাক নয়’। আর একবার মিসেস হেস্টিংস কোনো এক মজলিশে মাথার চুল একবারে আলুথালু করে জড়িয়ে তাল পাকিয়ে উপস্থিত হলেন। চূড়াকার কবরী বেঁধে ড্রেসারের কাছ থেকে ড্রেসিং করে, অন্যান্য যেসব মহিলা এসেছিলেন, তাদের তো প্রধান লেডিসের এই কেশের অবস্থা দেখে চক্ষু স্থির হয়ে গেল। মিসেস ফে ব্যাপারটাকে ‘খেয়ালিপনা’ বলে ঠাট্টা করলেন। যাই হোক, এভাবে লেডি হেস্টিংস কলকাতার প্রধান মহিলা হয়ে তখনকার কলকাতার ইংরেজ সমাজকে নাচিয়ে বেড়াতেন। অপরদিকে হিকি সাহেব হেস্টিংসের প্রতিদ্বন্দ্বী মহলেই বেশি মেলামেশা করতেন। কিন্তু তা হলেও হিকি সাহেবের হেস্টিংসপত্নী সম্বন্ধে মান হানিকর কিছু লেখা উচিত হয়নি। আজকাল কত মহিলাই তো কত রকমের চালচলন করে ঘুরে বেড়ান এবং তারা নিশ্চয়ই কারও স্ত্রী, কারও ভগিনী বা কারও কন্যা। কিন্তু তার জন্য কি কোনো সম্পাদক তাদের সম্বন্ধে যা-তা মন্তব্য করে কাগজটাকে বন্ধ করে দিতে চান? অথচ ইংরেজ গুরুদের অবস্থা সেকালে এ রকমই ছিল। যেমন ছিল তাদের ইঙ্গ-সমাজ, তেমনি ছিল তাদের সংবাদপত্র। তাদের দৈনন্দিন জীবনের অনাচার, ব্যভিচার, লোভ-হিংসা-বিদ্বেষ, অশিষ্টতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতিচ্ছবি ছিল তাদের প্রথম সংবাদপত্রগুলো। মুনাফা নিয়ে মারামারি করা, স্ত্রীলোক ও মদিরা নিয়ে টানাটানি করা, প্রেম করে নাকানিচুবানি খাওয়া এবং এ দেশের লোকদের ক্রীতদাসের মতো চাপকানো-- এই ছিল তখনকার কলকাতার ইঙ্গ-ভারতীয় সমাজের দৈনন্দিন কর্ম ও ধর্ম। এসব উপকরণই তখন সংবাদপত্রের খোরাক জোগাত। তখন রাজনীতি বিশেষ ছিল না, পার্টি পলিটিক্স তো ছিলই না। পার্লামেন্ট অধিবেশন ছিল না। সুতরাং সংবাপত্রের আর কাজ কি? কিছু কিছু বিজ্ঞাপন ও নতুন নতুন ব্যবসার জিনিসপত্রের খবর ছাপানো, টুকিটাকি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি ছাপানো, মাঝেমাঝে-দু-চারটে বিদেশের ও এ দেশের রাজদরবারের চমকপ্রদ খবর দেওয়া, আর লোকজনের পেছনে লাগা। বিশেষ করে ফেউয়ের মতন মহিলাদের পেছনে লাগাই ছিল সম্পাদকের অন্যতম কাজ। তাতেও তাদের কোনোরকম সংযম বা শালীনতাবোধ ছিল না। অসংযমের মাত্রা তারা এতদূর ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে, ১৭৯৯ সালে ওয়েলেসলি প্রথম প্রেস আইন জারি করে সংবাদপত্রের স্বাধীন মতামত প্রকাশে হস্তক্ষেপ করেন। সেক্রেটারিকে আগে না দেখিয়ে কোনো কিছু সংবাদপত্রে ছাপা বা প্রকাশ করা চলবে না। যদি কোনো সম্পাদক নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাহলে তাকে ইউরোপে নির্বাসনে পাঠানো হবে। ইউরোপে নির্বাসনে পাঠানোর কারণ হলো তখনকার ইংরেজি সংবাদপত্রের সম্পাদকরাও ছিলেন ইংরেজরা, বাংলা সংবাদপত্রও ছিল না, বাঙালি সম্পাদকও ছিলেন না কেউ। যে ইংরেজরা আমাদের দেশে ছাপাখানা ও সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করে নবযুগের প্রবর্তন করেছিল, সেই ইংরেজদের অপকর্মের ফলে সর্বপ্রথম আমরা তার স্বাধীনতা হরালাম।

সাম্প্রতিককালের ‘সম্পাদকীয়’ নয়, সংবাদপত্রের জন্মকালের সম্পাদকীয়। সম্পাদকগণ তো নিশ্চয়ই পড়বেন, সাহিত্যপত্রের ও সংবাদপত্রের পাঠকরাও পড়বেন। শিশু-সংবাদপত্রের প্রবীণ সম্পাদকের শিশুসুলভ ‘সম্পাদকীয়’ পড়লে আজকালকার সবচেয়ে গুরুগম্ভীর সম্পাদকও হেসে ফেলবেন। মহাভারতের কথার মতন ‘সম্পাদকীয়ের’ কথা অমৃত সম না হলেও উপভোগ্য।

মিসেস হেস্টিংস সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক খবর প্রকাশ করার দায়ে মি. হিকির কাগজ ‘বেঙ্গল গেজেট’ বন্ধ করে দেয়ার পর ‘ইন্ডিয়া গেজেট’, ‘ক্যালকাটা গেজেট’, ‘হরকরা’ প্রকাশিত হলো। ১৭৮৪ সালে ‘ক্যালকাটা গেজেট’ প্রকাশিত হয় এবং তাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খবরাখবর ও বিজ্ঞপ্তি প্রচারের অনুমতি প্রদান করে কাউন্সিল। কিন্তু তা হলেও সরকারি বিভাগের সঙ্গে সম্পাদকীয় বিভাগের একটা ব্যবধান ছিল এবং সম্পাদকও তার নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলতেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় মন্তব্যের বিষয়বস্তু তখন খুব বেশি ছিল না। সেই সময় ‘সম্পাদকীয়’ স্তম্ভে যা লেখা হতো তা আজ বোধ হয় কোনো সম্পাদকই প্রকাশ করতে সাহস করবেন না, বরং লজ্জাবোধ করবেন। কিন্তু আগেই বলেছি, তখনকার ইংরেজ সম্পাদকদের লজ্জা, মান, ভয় কোনোটারই তেমন বালাই ছিল না এবং কোনোটা নিয়েও তারা সাংবাদিকতা করতেন না। সম্পাদকীয় স্তম্ভে মাঝে মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা বা মন্তব্য একেবারেই যে করা হতো না তা নয়। ফরাসি বিপ্লবের খবর, ডক্টর জনসনের শবযাত্রার বর্ণনা, উইলিয়াম জোন্সের মৃত্যুর পর মন্তব্য, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ইত্যাদি বিষয় ‘ক্যালকাটা গেজেটে’ সম্পাদকীয় স্তম্ভে প্রকাশ করা হতো। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কদাচিৎ লেখার সুযোগ হতো। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, সাধারণ সম্পাদকীয় স্তম্ভে ছাপা হতো ‘কবিতা’ ও ‘চুটকি’ খবর। আজকাল কবিতা ও কবিতার প্রাচুর্য নিয়ে আমরা ঠাট্টা বিদ্রুপ করে থাকি, আর সংবাদপত্রে কবিতার বিশেষ আমলও দেওয়া হয় না, সম্পাদকীয়তে তো নয়ই। ‘ক্যালকাটা গেজেটে’ কিন্তু ফ্রান্সিস গ্লাডউইন সাহেব মনের আনন্দে কবিতা ছাপতেন এবং রীতিমতো কবিদের একটা ‘কর্নারই’ ছিল তার পত্রিকায়। সংস্কৃত কবিতা, ফরাসি কবিতা, ল্যাটিন কবিতা বেছে বেছে অনুবাদ করে ছাপানো হতো। শুধু অনুবাদ নয়, অরিজিনাল কবিতাও যথেষ্ট ছাপা হতো এবং সত্যিই তার মধ্যে অরিজিনালিটি আছে কি নেই তা নিয়ে সম্পাদক সাহেব খুব একটা মাথা ঘামাতেন না। ‘ফিলিংটাই’ তখন ছিল বিচার্য বিষয়। কেউ যদি সত্যি কোনো অকৃত্রিম ‘ফিলিং’ থেকে হৃদয়ের ভাবানুবাদ কবিতায় প্রকাশ করতেন এবং সেই কবিতা--
            
`To the Editor of the Gazette,
Sir, By inserting the accompanying in zour parer you will oblige.’
A Well-wiisher.

শুধু এইটুকু লিখে পাঠিয়ে দিতেন, তাহলে সম্পাদক সাহেব তা বাতিল কাগজের বাস্কেটে ফেলে দিতেন না, সাগ্রহে ও সযত্নে ছাপাতেন, এমনকি তার নিজের সম্পাদকীয় স্তম্ভে। আজকাল এ রকম উদার সম্পাদক বাস্তবিকই দুর্লভ। কি জানি কেন, দু-চারদিনের রাজনৈতিক নেতা, চোর, ডাকাত, খুনি, ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণির লোকজন এবং তাদের কার্যকলাপ ছাড়া আধুনিক সম্পাদকরা আর কাউকে বিশেষ আমলে নিতে চান না, সম্পাদকীয় স্তম্ভে তো একেবারেই না। কবিদের কোনো স্থান নেই, প্রেমিকদের তো নয়ই। তাই বলে আধুনিক সম্পাদকরা যে প্রেমিক বা কবি হতে পারেন না তা নয়। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, সম্পাদকীয় স্তম্ভে প্রেম বা প্রেমিকের কথা আলোচনা করা যেন একেবারে নিষিদ্ধ। তখনকার ইংরেজ সম্পাদকরা এ রকম বেরসিক ছিলেন না। প্রেমিকের ব্যর্থ প্রেমের কবিতা, বিশুদ্ধ প্রেমের কবিতা, তারা সাগ্রহে প্রকাশ করতেন। প্রেমিকদের এভাবে সুযোগ দিয়ে উৎসাহিত করা হতো। অবশ্য প্রেমটাও তখন পর্বত লঙ্ঘনের মতন ব্যাপার ছিল, এখনকার মতন এতটা সহজ ছিল না।
কলকাতার ইংরেজ-সমাজের মেয়েরা তখন দুর্লভ বস্তু ছিল। নবাবের কাছ থেকে নতুন সনদ পাওয়া, জমিদারি পাওয়া বা খিলাত পাওয়া তার চেয়ে অনেক সহজ ছিল। কিন্তু প্রেম করার মতন বা বিয়ে করার মতো ক’জন মেয়েই বা বিলেত থেকে বাংলাদেশে আসত। কোম্পানির চাকরি নিয়ে বিলেত থেকে যে সাহেবরা এ দেশে আসতেন, তারা খুব বেশি বেতন পেতেন তা নয়। খুব অল্প টাকা তারা বেতন পেতেন। তার জন্য তাদের সকলকেই গোপনে বেনামীতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হতো এবং সাধারণত এ দেশীয় বাঙালি গোমস্তা ও দালালদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা উপরি অর্থ রোজগারের ব্যবস্থা করতেন। তাছাড়া একাই তারা আসতেন, অনেকটা দুঃসাহসিক যাত্রীর মতন, ‘কেরিয়ার’ তৈরির উদ্দেশ্যে। তারপর যখন অনেকে কেরিয়ার তৈরি করে সামান্য কেরানি থেকে গভর্নর জেনারেল পর্যন্ত হয়ে, প্রচুর ধনদৌলত সঞ্চয় করে দেশে ফিরতে লাগলেন এবং ‘ইংরেজ নবাব’ বলে পরিচিত হলেন, তখন বিলেতের অবিবাহিত মেয়েদের বাবা-মা’দের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো। কিছু কিছু কুমারী কন্যা তখন কলকাতায় আসতে শুরু করল। এরপর থেকেই বিলেতি কৌচগাড়ি, বিলেতি মদ, জুয়েলারি ইত্যাদির সঙ্গে বিলেতি তরুণীদের এ দেশে আমাদানি বাড়তে লাগল। বিলেতি বাবা-মায়েরা তাদের কন্যাদের পাঠাতেন সিভিলিয়ান, বড় অফিসার ইত্যাদি পাকড়াও করার জন্য। স্বল্পবেতনের যুবক ইংরেজ কেরানি কর্মচারীরা এসব বিলেতি কুমারীদের কাছে বিশেষ পাত্তাই পেতেন না। দূর থেকে তারা দেখতেন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। পাকা ঝুনো ইংরেজরা, যারা প্রচুর অর্থ জমিয়েছেন, তাদের নিয়েই প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা হতো এবং তাদের ‘সাপ্লাই কম ডিমান্ড বেশি’ বলে বিয়ের বাজারে দামও চড়ে যেত খুব। সুতরাং ইংরেজ তরুণীরাও সহজে স্বামী নির্বাচন করতে পারতেন না এবং ইংরেজ তরুণরাও দূর থেকে হা-হুতাশ করতেন। মধ্যে থেকে বিয়ের যোগ্য তরুণ-তরুণী উভয়েরই বয়স বাড়তে থাকত। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা হতো ইংরেজ তরুণীদের। স্বামী-শিকারে ব্যর্থ হয়ে দিন গুনতে গুনতে তারা পৌঢ়ত্বের কোঠায় পৌঁছুতেন এবং সেটা ঢাকা দেয়ার জন্য মুখে রঙ করে আজকালকার একশ্রেণির আধুনিকার মতন বিয়ের বাজারে ঘুরে বেড়াতেন।
এ নিয়ে জনৈক ইংরেজ কবি একটি সুন্দর কবিতা রচনা করেছিলেন--

Pale faded stuffs, by time grown faint
Will brighten up through art,
A Britain gives their faces paint,
For sale at India’s mart.

কলকাতার ইংরেজ-সমাজের তখনকার প্রেমের বাজার ও বিয়ের বাজারের এই অবস্থাটা মনে রাখলে, ‘ক্যালকাটা গেজেট’ পত্রিকার ‘পোয়েট্স কর্নার’ এবং সম্পাদকীয় স্তম্ভে প্রেমের কবিতা ছাপার কারণ অনেকটা বোঝা যায়।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

জাগরণ/এমইউ