• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২১, ০৯:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৮, ২০২১, ১২:২২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সাফাই গাওয়া বন্ধ করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের সাফাই গাওয়া বন্ধ করতে হবে

“ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।” এটা আমাদের কাছে খুব পরিচিত একটা বাক্য। কারণ, ইসরায়েল যখন বিশাল সামরিক শক্তি নিয়ে গাজার ছোট্ট রকেট হামলার জবাব দেয় তখন ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান উভয় দলই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই শব্দগুলো ব্যবহার করে।

একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা জরুরি। ইসরায়েলের কিংবা কোনো সরকার বা জনগণের আত্মরক্ষার অধিকার নেই, এমন যুক্তি কিন্তু কেউ দিচ্ছে না। তাহলে এই শব্দগুলো কেন বছরের পর বছর, যুদ্ধের পরে যুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে?

এই প্রশ্নগুলো কেউ জিজ্ঞাসা করছে না কেন: “ফিলিস্তিনিদের কি কোনো অধিকার নেই?” শুধু ইসরায়েলে রকেট হামলার পরই কেন ফিলিস্তিনে সহিংসতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের এ মুহূর্তে অবশ্যই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো উচিত। আর আমাদের এটা বোঝা উচিত যে ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলা কোনো গ্রহণযোগ্য কাজ নয়। শুধু যে রকেট হামলার কারণেই ইসরায়েল বিরোধে জড়াচ্ছে, সেটাও কিন্তু না। এই বিরোধ আজ শুরু হয়নি।

জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় যে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো বহু বছর ধরে বসবাস করছে তাদের নতুন নতুন আইনের মাধ্যমে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা চলছে। উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে জীবনযাপন করছে তারা। এবং গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের উগ্রপন্থীরা তাদের উচ্ছেদের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই উচ্ছেদগুলো ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনেরই অংশ। গাজায় এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে, যাদের মধ্যে ৭০ ভাগই তরুণ। এই তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আশা আছে বলে আমি মনে করি না। বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখে আসছি কীভাবে ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ক্রমবর্ধমান দখল চালাচ্ছে এবং গাজাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। এর ফলে এই ফিলিস্তিনিদের জীবন ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
 
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার টু স্টেট বা পৃথক রাষ্ট্রের নীতি থেকে সরে এসে সমাধানের বদলে ইহুদি-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের তারা কোণঠাসা করে রেখেছে, সহিংস করে তুলেছে।


হামাসের হামলা বা ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনোটিই কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এসবের বাইরে মূল যে বিষয়টিতে নজর দিতে হবে সেটি হচ্ছে: ইসরায়েল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর নিজের কর্তৃত্ব বিস্তার করছে এবং একই ভূখণ্ডে অবস্থান করেও শান্তি ও ন্যায়বিচারের বদলে সেখানে বৈষম্য আর অগণতান্ত্রিক চর্চাকে উস্কে দিচ্ছে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলে ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকার স্বৈরাচারী, অসহিষ্ণু ও বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদকে গড়ে তুলেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং দুর্নীতির মামলা এড়াতে কট্টর ইটামার বেন জেভিয়ার ও তার উগ্রবাদী ইহুদি দল জিউইশ পাওয়ার পার্টিকে সে জোটে ভিড়িয়েছে। জেরুজালেমের রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলাকারী একটা বর্ণবাদী দল এখন ইসরায়েলের পার্লেমেন্ট নেসেটে প্রতিনিধিত্ব করছে, যা সত্যিই দুঃখজনক।

এই ব্যাপারগুলো শুধু ইসরায়েলে ঘটছে না কিন্তু না। ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান দেখেছি আমরা। এসব আন্দোলনকে দুর্নীতিবাজরা সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার এবং শান্তির পরিবর্তে নিজের শক্তি বাড়াতে ও জাতিগত বিদ্বেষ তৈরিতে কাজে লাগায়। চার বছর ধরে হোয়াইট হাউসও (ট্রাম্প প্রশাসন) এই আন্দোলনকে প্রশ্রয় দিয়েছে।

একই সঙ্গে আমরা একটি নতুন প্রজন্মেরও উত্থান দেখতে পাচ্ছি। এরা মানুষের অধিকার এবং সুস্থ রাজনীতির সমাজ গড়তে চায়। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর আমরা দেখেছি কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। ইসরায়েলেও এমন মানুষ আছে। ফিলিস্তিনেও আছে।


যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের (জো বাইডেন) জন্য এখন ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ আছে। দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা সহায়তা দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা বা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেখানে আমরা প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছি, সেখানে ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকার ও তার অগণতান্ত্রিক, বর্ণবাদী আচরণের জন্য আমাদের সাফাই গাওয়া একেবারেই মানায় না।

আমাদের অবশ্যই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক আইন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনে কেউ যেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন না পায়, সেটিও  নিশ্চিত করতে হবে।

ইসরায়েলের যেমন শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, তেমনি ফিলিস্তিনিদেরও আছে - এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ গড়তে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি বিশ্ব মঞ্চে মানবাধিকার নিয়ে বলিষ্ঠ অবস্থান নিতে চায়, তাহলে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবেই মানবাধিকার নিশ্চিতের ধারাবাহিকতা অর্জন করতে হবে। তাই ফিলিস্তিনের অধিকারকে আমাদের অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে। কারণ, প্যালেস্টিনিয়ান লাইভস ম্যাটার (প্রত্যেক ফিলিস্তিনি জীবন মূল্যবান)।

 

সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স:
ভারমন্টের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন