• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২১, ০১:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১, ২০২১, ০১:২৬ পিএম

স্লাভোয় জিজেক

আসল দুনিয়ায় এখন কোন চলচ্চিত্র চলছে?

আসল দুনিয়ায় এখন কোন চলচ্চিত্র চলছে?

স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভোয় জিজেকের নতুন ‘প্যানডেমিক! ২: ক্রোনিক্যালস অব আ টাইম লস্ট’ (অর বুকস: ২০২০) বইয়ের একটি অধ্যায় এটি, মূল শিরোনাম: হোয়াট মুভি ইজ নাউ প্লেয়িং আউট ইন রিয়েল লাইফ? ইংরেজি থেকে লেখাটি ভাষান্তর করেছেন বিধান রিবেরু


প্রায়ই শুনতে পাই, বাস্তব জীবনে আমরা এখন কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তা হলিউডের ‘দুঃস্বপ্নপুরী’ (ডিসটোপিয়া) ঘরানার ছবিতে দেখানো হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো: এখনকার বাস্তবতায় আমরা কোন সিনেমা প্রদর্শিত হতে দেখছি? মহামারির প্রথম দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের কাছ থেকে যখন শুনেছিলাম যে ওষুধের দোকানের চেয়েও দ্রুত গতিতে নিজেদের মজুত শেষ করে ফেলছে বন্দুকের দোকানগুলো, তখন আমি ক্রেতাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছি: তারা সম্ভবত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার কথা ভেবেছিলেন, তাদের শঙ্কা ছিল ক্ষুধার্ত, কোভিড আক্রান্ত জনতার হামলা হতে পারে, চলচ্চিত্রে জম্বিরা যেমন করে আক্রমণ করে সে রকম। (এই দশার চেয়ে কিছুটা কম বিশৃঙ্খল অবস্থার কথাও কল্পনা করতে পারেন কেউ কেউ। হয় তো কোনো ধনী ব্যক্তি, রোনাল্ড অ্যামেরিকের ‘২০১২’ ছবির মতো, বিচ্ছিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবেন।)

আরেক ধরনের দৃশ্য, একই রকম বিপর্যয়ের পথ ধরে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, যখন আমি এই খবরটি পড়ি: “মৃত্যুদণ্ড দেওয়া রাষ্ট্রসমূহ কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য মজুত করা ওষুধ মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। শীর্ষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে লেখা আছে, অতি দরকারি ওষুধগুলো সুচালো ইনজেকশনে ব্যবহার করলে শত শত জীবনকে বাঁচানো যাবে।”(১)

রোগীদের, হত্যা করার জন্য নয়, ব্যথা কমাতে ওষুধের দরকার, সেটা আমি বুঝি; তবে এ ঘটনা এক সেকেন্ডের জন্য আমাকে মনে করিয়ে দেয় দুঃস্বপ্নময় (ডিসটোপিয়ান) ‘সোয়লেন্ট গ্রিন’ (১৯৭৩) ছবির কথা। ছবিটির কাহিনি মহাপ্রলয়োত্তর জনবহুল এক পৃথিবী নিয়ে, যেখানে বৃদ্ধদের বলা হচ্ছে ‘ঈশ্বরের গৃহে ফিরে যাও’, অবনমিত জীবন নিয়ে তারা বিতৃষ্ণায় ভুগছে। সরকারি ক্লিনিকে গিয়ে তারা একটি আরামদায়ক চেয়ারে বসে, আদিম যুগের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে তারা কোনো যন্ত্রণা ছাড়াই চিরঘুমে ঢলে পড়ে। যখন মার্কিন রক্ষণশীলরা প্রস্তাব করেন যে সত্তরোর্ধ্ব জীবনকে অর্থনীতি ও ‘মার্কিন জীবনযাপনকে’ রক্ষার জন্য উৎসর্গ করতে হবে, তখন কি ‘সোয়লেন্ট গ্রিনে’ বেদনাবিহীন প্রক্রিয়াটিকে আরও বেশি ‘মানবিক’ বলে মনে হয় না? কিন্তু এখনো আমাদের সেই সময় আসেনি।

কোভিড-১৯ যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন অধিকাংশ লোকই ভেবে নিয়েছিল এই দুঃস্বপ্ন অল্প সময়ের জন্য, বসন্তে গরম হাওয়া বইতে শুরু করলেই কোভিড চলে যাবে—অনেকটা যেন চলচ্চিত্রে আচমকা আক্রমণের (ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড়) মতো, সেসব দেখে আমরা বলতে বাধ্য হই, এই ছবির চেয়ে আমরা অনেক ভালো সমাজে বসবাস করছি। (এই বয়ান থেকে এটাই বলা যায়, বর্তমানে আমাদের অধিকাংশেরই গোপন আশা—এ সংক্রমণ ঠেকাতে নিরাময় (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করে শেষ মুহূর্তে মানবজাতিকে রক্ষা করবেন বিজ্ঞানীরা।)

এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে মহামারিটি (অন্তত) কিছু সময়ের জন্য হলেও আমাদের সঙ্গে থাকবে এবং আমাদের জীবনকে বদলে দেবে গভীরভাবে—আরেকটি সিনেমার দৃশ্যের উদয় হচ্ছে—দুঃস্বপ্নের (ডিসটোপিয়ার) মুখোশ পরে আছে সুখস্বপ্ন (ইউটোপিয়া)। কেভিন কস্টনারের ‘দ্য পোস্টম্যান’ (১৯৯৭) ছবির কথা মনে করুন, ২০১৩ সালের প্রেক্ষাপটে মহাপ্রলয়োত্তর সময় নিয়ে একটি বাজে সেট তৈরি করে ছবিটি করা হয়েছিল, এক অনির্দিষ্ট মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘটনার পনেরো বছর পর দেখা যায় মানবসভ্যতার বিপুল পরিবর্তন ঘটে গেছে এবং অনেক প্রযুক্তিই হারিয়ে গেছে সভ্যতা থেকে। কাহিনিতে দেখা যায় এক যাযাবর ধরনের লোক যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো ডাক বিভাগের পিয়নের পোশাক পরে বিচ্ছিন্ন গ্রামবাসীদের মধ্যে চিঠি বিলি শুরু করে, তার ভাবখানা এমন যে সে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরুদ্ধারে’র কাজ করছে। অন্যরা যখন তাকে অনুকরণ করতে শুরু করে, তখন ধীরে ধীরে এই খেলাটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগটি আবার গড়ে ওঠে।

প্রলয়ে সবকিছু পুরোপুরি ধ্বংসের পর শূন্য থেকে যে স্বপ্নের মতো দুনিয়া (ইউটোপিয়া) গড়ে উঠেছিল ছবিতে, তার সঙ্গে আজকের যুক্তরাষ্ট্রের মিল আছে, এই গড়ে ওঠার ভেতর শুধু উত্তরাধুনিক বাড়াবাড়িকে পরিশুদ্ধ হতে দেখি আমরা—একটি বিনয়ী সমাজ, যেখানে জীবনের মৌলিক মূল্যবোধগুলো পূর্ণরূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সত্যিকারের অদ্ভুত বিষয়টি হলো: এর অ-প্রলয়ঙ্করী বৈশিষ্ট্য, সেটা ধরতে ব্যর্থ এসব ছবির দৃশ্য। আসলে এই মহামারি গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়া সাধারণ অর্থের মহাপ্রলয় নয় ঠিকই, তবে এত দিন ধরে চেপে রাখা সত্য উদঘাটনের প্রলয়ের প্রকৃত ধারণার চেয়েও এটি কম কিছু নয়। হ্যাঁ, আমাদের দুনিয়া ভেঙে পড়ছে, কিন্তু এই টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার শেষ কোথায়, সেটা দেখা যাচ্ছে না। যখন শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ে, আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো অনুমান করতে লেগে যায় ‘চূড়া’ থেকে আর কত দূরে আছি আমরা—আমরা কি এরই মধ্যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছি? দু-এক সপ্তাহের ভেতর কি পৌঁছাব?

অধীর আগ্রহ নিয়ে আমরা মহামারির চূড়ান্ত অবস্থায় যাওয়া পর্যবেক্ষণ করছি এবং অপেক্ষা করছি, যেন চূড়ান্ত বিষয়টি শেষ হলেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে—কিন্তু তা তো আর হচ্ছে না, সংকট শুধু বেড়েই চলেছে। যদি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ও, তা-ও আমাদের এটা মেনে নেওয়ার মতো সাহস সঞ্চয় করতে হবে যে, এমন এক ভাইরাসাক্রান্ত দুনিয়ায় এখন আমাদের বসবাস করতে হবে, যেখানে প্রতিনিয়ত মহামারি ও পরিবেশগত ঝামেলা হুমকি হয়ে হানা দেবে। গ্রীষ্মের গরমে মহামারি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, এ রকম স্বপ্ন থেকে আমরা এখন জেগে উঠেছি, এবং এই মহামারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে পরিত্রাণ পাওয়ারও পরিষ্কার কোনো উপায় জানা নেই—লকডাউনের মাত্রা কীভাবে ধীরে ধীরে কমানো যায়, সেই বিতর্কই কেবল ঘনিয়ে উঠছে। একটা সময় পর যখন মহামারির প্রকোপ কমে যেতে থাকবে, তখন আমরা সব্বাই আনন্দ লুটতে লুটতে কাহিল হয়ে যাব।

[মহামারির] “শেষ-দেখতে-না-পাওয়া”র এই বয়ান থেকে ভবিষ্যতে কোন সম্ভাব্য দৃশ্যে আমরা পৌঁছাব? এপ্রিলের শুরুতে একটি প্রধান ব্রিটিশ দৈনিকের শুরুর পাতায়, বিকল্প রূপরেখা হিসেবে, উঠে এসেছিল কিছু কথা: “আমূল পরিবর্তন—গত চার দশকের প্রচলিত নীতিমালা যেদিকে চলছিল তা উল্টে—টেবিলের ওপর রাখা দরকার। সরকারকে অর্থনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের অবশ্যই সরকারি পরিষেবাকে দায়বদ্ধতার পরিবর্তে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে এবং শ্রমবাজারের অনিশ্চয়তা কমানোর পথ খুঁজে বের করতে হবে। আলোচ্যসূচিতে আবার পুনঃবণ্টনকে নিয়ে আসতে হবে; আনতে হবে বয়স্ক ও ধনীদের সুবিধাদি ভোগকেও।”(২)

এটি কি তবে ব্রিটিশ শ্রম ইশতেহারের পুনঃস্থাপন? না, এটি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে ছাপানো সম্পাদকীয় থেকে নেওয়া একটি অনুচ্ছেদ। এর পাশেই, রোগবালাইকে ‘বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ’ থেকে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিল গেটস, শুধু তা-ই নয়, তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঘটতে দেওয়া হয়, তাহলে তা পরবর্তী ঢেউ তুলে ধনী দেশগুলোর ওপরেই আছড়ে পড়বে:

“পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে ধনী দেশগুলো এই রোগ কমিয়ে আনতে সফল হলেও, মহামারি যদি অন্য কোথাও ভয়াবহ আকারে থাকে, তাহলে এই কোভিড-১৯ আবার ফিরে আসতে পারে। বিশ্বের এক প্রান্তকে আরেক প্রান্ত সংক্রমিত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। (…) আমি পুঁজিবাদের বড় বিশ্বাসী—কিন্তু মহামারির সময় কিছু বাজার ঠিকঠাকভাবে কাজ করে না, জীবনরক্ষাকারী সরবরাহের বাজার একটি ভালো উদাহরণ।(৩)

বাস্তবতাকে স্বাগত জানাই, ওপরের অনুমান ও প্রস্তাবগুলো খুবই বিনয়ী: সামনে এমন আরও অনেক আসবে। নির্দিষ্ট মৌলিক জায়গাগুলোতে, মুনাফা করার চিন্তাকে স্রেফ ঝেড়ে ফেলে, সমাজের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্য সামাজিক সম্পদকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা শুরু করতে হবে। আমাদের যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে—কাজটি হলো বাজারের চিন্তা বাদ দিয়ে সেগুলোকে সরাসরি কাজে লাগান। স্বাস্থ্যসেবা, বৈশ্বিক পরিবেশ, খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ, জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ—এগুলোরই বেশি অগ্রাধিকার, অন্য সব গৌণ। সম্পদ ব্যবহারে রাষ্ট্রকে দায়িত্বের সঙ্গে লোকজন নিয়োগ দিতে হবে।

ফ্রান্সে (আরও অনেক জায়গাতেই) একটি বড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে: এখন বসন্তের শাকসবজি ও ফল সংগ্রহের কাল। এ সময় সাধারণত স্পেন ও আশপাশের বহু এলাকা থেকে হাজার হাজার মৌসুমি শ্রমিক আসে কাজ করতে। ঘটনা হলো সীমান্ত তো এখন বন্ধ, তাহলে কাজটা করবে কে? ফ্রান্স এরই মধ্যে বিদেশি শ্রমিকদের পরিবর্তে স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছে, কিন্তু তাদের সংখ্যা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ না হয়, তখন কী হবে? সরাসরি যদি লোকজন এ কাজে নিয়োগ করতে হয়, তখনই বা পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে? অ্যালেঙ্কা জুপানচিচ ব্যাপারটা ঠিকই ধরেছেন, মহামারির বিরুদ্ধে আমরা যদি সকলে মিলে প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকি, তাহলে মহামারি আমাদের যে ক্ষতি করবে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সমাজ ও অর্থনীতি। এটাই কি ইঙ্গিত করছে না, কোথাও একটা ভয়াবহ ধরনের ভুল হচ্ছে?(৪)

সংহতি ও অর্থনীতির মধ্যে কেন একটিকে বেছে নিতে হবে? এই অবাস্তব বাছাবাছির বিপরীতে আমাদের জবাবও তেমনই হওয়া উচিত: “কফি অর টি? ইয়েস প্লিজ!” চরম আকাঙ্ক্ষিত নতুন বিন্যাসকে আমরা যে নামেই ডাকি না কেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়—কমিউনিজম বলি বা, পিটার স্লোটারডায়িকের কাছ থেকে ধার নিয়ে যদি বলি, “কো-ইমিউনিজম” (ভাইরাল আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ও সংগঠিত প্রতিরোধ)—বিষয় একই। এই বাস্তবতা উল্লিখিত কোনো কাল্পনিক চিত্রনাট্যকে অনুসরণ করবে না। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এখন নতুন চিত্রনাট্য দরকার, নতুন গল্প দরকার, যে গল্প আমাদের সামনে একধরনের জ্ঞানভিত্তিক বোঝাপড়া হাজির করবে, আমরা যেদিকে যাব তার বাস্তববাদী এবং সেই সঙ্গে বিপর্যয় ঠেকানোর ধারণা দেবে। আমাদের আশার দিগন্ত দরকার, আমাদের দরকার একটি মহামারি-উত্তর হলিউডের।

 

লেখক: দার্শনিক ও শিক্ষক

 

বোধিনী

১. https://www.theguardian.com/us-news/2020/apr/13/death penalty-states-coronavirus-stockpiled-drugs

২. https://www.ft.com/content/7eff769a-74dd-11ea-95fe fcd274e920ca

৩. https://www.msn.com/en-gb/news/coronavirus/coronavirus bill-gates-calls-for-global-agreements-on-masks-treatments and-vaccines/ar-BB12uCm4

৪. ব্যক্তিগত যোগাযোগ