• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১, ০১:৩৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৬, ২০২১, ০৩:৩১ এএম

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কার এখন সময়ের দাবি

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংস্কার এখন সময়ের দাবি

২২ আগস্ট, ২০২১ তারিখে ঢাকা রিপোরটার্স ইউনিটে হিন্দু ধর্মীয় আইন পরিবর্তনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তাতে যারা হিন্দু আইনে পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদ, হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক, দত্তকগ্রহণ, ভরণ-পোষণসহ কতিপয় দাবি করে আইন কমিশনের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন তাদের দোষারোপ করে বক্তব্য রেখেছেন হিন্দু নেতারা। কে, কাকে দোষারোপ বা অভিযুক্ত করলেন তা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে সম্মেলনে হিন্দু নেতৃবৃন্দের বক্তব্যকে মনে হয়েছে একপেশে, যুক্তিহীন, অমানবিক। একবিংশ শতাব্দীতে কিভাবে তারা এসব বলতে পারেন- তা ভাবতে অবাক লাগে। তাই তাদের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তা খণ্ডন করার চেষ্টা করছি- 

১.মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট লাকী বাছার বলেন, ‘হিন্দু মা-বোনেরা চায় না হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন হোক। যেখানে আমরাই চাই না, সেখানে তাদের এত মাথাব্যথা কেন?’

এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই হিন্দু সমাজে হাজার হাজার বছর ধরে সতীদাহ প্রথা চলে আসছিল তা বন্ধ করার জন্য কি কোনও হিন্দু দাবি করেছিল? যারা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য দাবি করেছিল এবং সতীদাহ প্রথা নিরোধ আইন করেছিল তারা কেউ হিন্দু ছিল না। হিন্দু না হওয়া সত্ত্বেও তারা এ কাজ করে কি মহা অন্যায় করে ফেলেছে? বলতে পারেন রাজা রামেমোহন রায়। তিনি সতীদাহ প্রথা নিরোধ আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি হিন্দু ছিলেন না। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম, ব্রাহ্ম ধর্মের প্রবর্তক। ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেঙ্কটিক সতীদাহ প্রথা নিরোধ আইন করেন। একজন জীবন্ত মানুষকে মৃত মানুষের সঙ্গে পুড়িয়ে ভস্ম করার চেয়ে জঘন্য, নির্মম, নিষ্ঠুর কাজ আর কী হতে পারে? তা-ও চলেছে দুই হাজার বছরের অধিককাল ধরে। স্বামী নিরুদ্দেশ হলেও স্ত্রীকে দাহ করা হতো। স্বামী মারা গেছে, স্ত্রীকেও দাহ করা হতো। তাদের ছোট ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের কী অবস্থা হতো? অনেক স্ত্রী ছিল ১০/১২ বছর বয়সী। তার স্বামী মারা গেলেও ঐ বাচ্চা স্ত্রীটাকেও দাহ করে হত্যা করা হতো। অনেক বালিকা স্ত্রী গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পরেও বাঁচার জন্যে দৌঁড়ে নদীতে ঝাঁপ দিত। সেখান থেকে তাকে ধরে এনে, পিটিয়ে চিতায় পাঠানো হতো। অনেক হিন্দু জমিদার, রাজা ছিলেন যাদের একাধিক স্ত্রী, উপপত্নী ছিল। সেই জমিদার, রাজা মারা গেলে তার সকল পত্নী, উপপত্নীকে দাহ করা হতো। যেমন ১৭২৪ সালে উত্তর ভারতের মারওয়ারের রাজা অজিত সিংহের চিতায় উঠেছিল ৬৪ জন সতী। বুন্দের রাজা বুধ সিংহের চিতায় উঠেছিল ৮৪ জন সতী। ১৬২০ সালে আরেক রাজপুত রাজা মারা গেলে তার চিতায় উঠেছিল ৭০০ জন সতী। (হুমায়ুন আজাদ, নারী, পৃ. ৭৬)। কোনও নারী কি এ নিষ্ঠুর অমানবিক সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলেছে বা এ প্রথা পরিবর্তনের দাবি করেছে? নারীর কি সে অধিকার ছিল? তাই বলে কি বলবেন, ‘কোন নারী সতীদাহ প্রথা পরিবর্তনের দাবি করেনি। সূতরাং সতীদাহ প্রথা অব্যাহত থাকবে!’

শিল্পীর তুলিতে নৃশংস সতীদাহের চিত্র। ছবি- সংগৃহীত। 

হিন্দু শাসকেরা সতীদাহের বিরুদ্ধে কোনও আইন করেনি। মুসলমানরাও ৬০০বছর ভারত শাসন করেছে। তারাও করেনি। সম্রাট হুমায়ুন, আকবর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। সে আইন করল ব্রিটিশরা। এ আইন তারা আরও আগেই করতে চেয়েছিল। কিন্তু ধর্মান্ধ মানুষকে ক্ষেপাতে চাননি। তারা প্রত্যাশায় ছিল এ দেশের ভেতর থেকে কিছু মানুষ সতীদাহ বন্ধ করার দাবি করুক। যেটি তারা রাজা রামমোহন রায়কে দিয়ে করান। সতীদাহ প্রথা নিরোধ আইন পাসের পরেও গোঁড়া হিন্দুরা বসে থাকেনি। তারা কলকাতার বিশিষ্ট পণ্ডিতসহ ৮০০জন ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গভর্নর জেনারেলের কাছে আবেদন করেন এ আইন বাতিল করার জন্য। এ দলের নেতা ছিলেন রাজা রাধাকান্তদেব, হরিমোহন ঠাকুর, গোকুলনাথ মল্লিক প্রমুখ। অন্যদিকে এ আইন বহাল রাখার জন্য রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজের ৩০০ জন ও ৮০০ জন খ্রিস্টানের স্বাক্ষরযুক্ত অভিনন্দন পত্র দেন গভর্নর জেনারেলকে। গভর্নর জেনারেল গোঁড়াদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে তারা ১১০০ জনের স্বাক্ষর নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবেদন করে সতীদাহ নিরোধ আইন বাতিলের জন্য। কিন্তু পার্লামেন্ট তা খারিজ করে দেন। 

..............‘’.............

হিন্দু শাসকেরা সতীদাহের বিরুদ্ধে কোনও আইন করেনি। মুসলমানরাও ৬০০বছর ভারত শাসন করেছে। তারাও করেনি। সম্রাট হুমায়ুন, আকবর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি।

..............‘’.............

এরপরে এলো বিধবা বিাহের পালা। কেননা সতীদাহ নিরোধ হওয়ার ফলে নারীরা বিধবা হতে থাকে। তাদের বিয়ে দেয়া বা বিয়ে করা যাবে না। ব্রিটিশরা ভাবল এটাতো আরেক সমস্যা। বিধবা বিবাহের দাবি তুলল মানবতার দেবতা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর ৯৮৭ জনের স্বাক্ষর নিয়ে বিবধা বিবাহ আইন পাসের জন্য একটি আবেদন করেন। এর বিপক্ষে রাজা রাধাকান্ত দেব ৩৬৭৬৩ জনের স্বাক্ষর নিয়ে বিধবা বিবাহ আইন না করার জন্য আবেদন করেন। (গণতন্ত্র মেনে নিলে কি সতীদাহ প্রথা নিরোধ বা বিধবা বিবাহ আইন হতো?)। ব্রিটিশ সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের অমানবিক দাবি অগ্রাহ্য করে ১৮৫৬ সালে পাস করেন বিধবা বিবাহ আইন।

বাচ্চা মেয়েদের ৬/৭ বছরে বিয়ে দেয়া হতো। এতে তারা বলাৎকারের শিকার হতো। ১৮৬০ সালে ১০ বছরের কম বয়সী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে ব্রিটিশ সরকার। কালা পানি (সমুদ্র যাত্রা) পাড়ি দিলে ধর্ম নাশ হয় ইত্যাদি কুপ্রথাকে কুঠারাঘাত করেছে ব্রিটিশ। এ প্রথা বহাল থাকলে নৌবাহিনী গড়ে উঠবে কিভাবে, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য চলবে কেমন করে? গঙ্গাজলে শিশু বিসর্জন বন্ধ, হেরেম প্রথা নিষিদ্ধ করেছে ব্রিটিশ। কোন ভালো কাজে, মহৎ ও মানবিক কাজে  ধার্মিক ভাইদের দেখা মিলে? তবে ভালো কাজের বিরোধিতায় তারা আছে।

২. হিন্দু মহাজোটের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রতিভা বাগচী বলেন, ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি এনজিও হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা সুসংহত পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে অশান্তির বীজ বপন করছে। ২০-২৫ হাজার বছরের পুরনো হিন্দু পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা।

পিতামাতার সম্পত্তিতে নারী উত্তরাধিকার হলে বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হবে কেন? ভারত কি এ আইন করেছে ভারতে হিন্দু শূন্য করার জন্য? বলতে পারেন সম্পত্তির লোভে মুসলমানরা জোর করে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করবে। তাই বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হবে। ধর্মান্তরিত হলে সে পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার হারায় তা বর্তমান আইনেই আছে। প্রয়োজনে আরও শক্ত আইন করা যেতে পারে কোনও হিন্দু ছেলে বা মেয়ে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তো বলেছেন। তারা বলেছেন, “উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দু নারী কিছুই পান না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আইন করে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এই আইন হওয়া উচিত, যাতে হিন্দু নারীরা আর বঞ্চিত না হন। তবে ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী-পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার হারাবেন—এই বিধান রেখেই দ্রুত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পাস করা হোক।” এ কথায় অন্যায় কী আছে?

ভারত ২০০৫ সালে হিন্দু আইন সংস্কার করে পিতামাতার সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের সমান উত্তরাধিকার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এ আইনের বিরুদ্ধে ধার্মিকেরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেন। আপনি ভারতে যাবেন, ইউরোপে যাবেন, আমেরিকায় যাবেন সেখানেও সম্পত্তিতে নারীপুরুষের সমান অধিকার। সেসব দেশে কি ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন জ্বলছে? একজন নারী হয়ে নারীর অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলে কিভাবে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সালে দাস নিষিদ্ধের আইন করলে শুধু দাস মালিকরাই বিরোধিতা করেনি, দাসরাও বিদ্রোহ করেছিল। দাসরা দাসত্বগিরি করতে করতে নিজেদের স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছিল। যেমন মুক্ত পাখিকে দীর্ঘদিন পিঞ্জরায় আবদ্ধ করে রাখলে সে তার মুক্ত জীবনের স্বাদ ভুলে যায়। তাই তাকে মুক্ত করে দিলেও সে পিঞ্জরার কাছে ঘোরাঘুরি করে। তাই কিছু মহিলাও আছে তারা তাদের মুক্ত জীবনের কথা শুনলে আতকে উঠে।

৩. লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই বলা হচ্ছে, “ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তারা সনাতন ধর্মে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা শাস্ত্রীয় বিধানগুলো পরিবর্তনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।”

নারী অধিকার চেয়ে আইন পরিবর্তনের দাবি করার সাথে ধর্মীয় উগ্রবাদের সম্পর্ক কোথায়? ধর্মীয় আইন, শাস্ত্রীয় বিধান পরিবর্তন যারা চায় না বা করতে দেয় না উগ্রবাদী তো তারাই। যারা শাস্ত্রীয় বিধানগুলোর পরিবর্তন চায় তারাই মানবতাবাদী। তারা মানুষের মঙ্গলের জন্য, সমতার জন্যই পরিবর্তন চায়।

..............‘’.............

ধর্ম প্রকৃতি প্রদত্ত নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে কোন বৈষম্য নেই, নারী-পুরুষে ভেদাভেদ নেই। অধ্যক্ষ সাহেব, মানুষে মানুষে বৈষম্যকে প্রাকৃতিক নিয়ম বলে চালিয়ে দিলেন! একই রক্ত মাংসে নারী পুরুষ। একজনে পিতার সম্পত্তি পাবে, আরেকজনে পাবে না, একে চালিয়ে দিলেন প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে।

..............‘’.............

৪. প্রণব মঠ ঢাকার অধ্যক্ষ স্বামী সঙ্গীতানন্দ মহারাজ বলেন, ‘মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনাম গংরা আইন সংস্কারের নামে চক্রান্তে নেমেছেন। বাস্তবতা হলো সনাতন ধর্মে অন্য ধর্মের কারও হাত দেওয়ার অধিকার নেই। আমরাও অন্য ধর্মে হাত দিতে চাই না। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম।”

এর উত্তরে বলতে চাই, ধর্ম প্রকৃতি প্রদত্ত নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে কোন বৈষম্য নেই, নারী-পুরুষে ভেদাভেদ নেই। অধ্যক্ষ সাহেব, মানুষে মানুষে বৈষম্যকে প্রাকৃতিক নিয়ম বলে চালিয়ে দিলেন! একই রক্ত মাংসে নারী পুরুষ। একজনে পিতার সম্পত্তি পাবে, আরেকজনে পাবে না, একে চালিয়ে দিলেন প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে। কী আশ্চর্য! প্রাকৃতিক নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য ফরাসি বিপ্লব সাধিত হলো, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষিত হলো, মানুষ ধর্মের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এল। সুতরাং ধর্ম হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম বিরোধী।

 ৫. তারা আরও একটি কথা বলেছে যে, ভারতে হিন্দু নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদের আইন করায় বহু নারীর ঘর ভেঙেছে। এর উত্তরে বলতে চাই, তাই বলে কি বিবাহ বিচ্ছেদের কোনও অধিকার নারীকে দেওয়া যাবে না? দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার সময়ও এ রকম যুক্তি দেওয়া হতো। দাসদের মুক্তি দিলে তারা কথা শুনবে না, কাজের লোক পাওয়া যাবে না। বিবাহ বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়। বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা থাকলে কি কেউ কাকে ছেড়ে যায়? ছেড়ে যেতে চায় যখন বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা অভাব হয়। যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে  হয় নির্যাতন। একজন মানুষকে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার না দিয়ে তাকে কি নির্যাতনের মধ্যে রাখতে চান? প্রবাদে বলে, “দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।”

৬. সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু নেতারা পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, মানুষের নয়। ধর্মগুলো পুরুষতন্ত্রের তল্পিবাহক। তাই তো রোকেয়া সাখাওয়াত (১৮৮০-১৯৩২) আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষ রচিত বিধি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে। আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ঐ ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন।” (নবনূর, ভাদ্র সংখ্যা, ১৩১১ এবং আহমদ শরীফ রচনাবলী, ৭ম খণ্ড, পৃ, ৯৯)। তিনি আরও বলেন, “আমাদের যথাসম্ভব অধঃপতন হওয়ার পর দাসত্বের বিরুদ্ধে কখনও মাথা তুলিতে পারি নাই; যখনই কোনও ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে।” (হুমায়ুন আজাদ, নারী, পৃ. ২৮৬)।

৭. সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু জোটের নেতারা হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার জন্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, তাঁর স্ত্রী শাহীন আনাম, পরিচালক মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এঞ্জেলা গোমেজ, পরিচালক বাঁচতে শেখা, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম ধরে কতিপয় এনজিওকে অভিযুক্ত করেছেন, দোষারোপ করেছেন, ষড়যন্ত্রকারী বলেছেন। তাদের অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি একমত নই। তবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের জন্য তারা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সে প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

 

লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপকইতিহাস বিভাগসরকারি রাজেন্দ্র কলেজফরিদপুর।।

দ্রষ্টব্যঃপ্রকাশিত লেখাটি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত এবং এর দায়-দায়িত্বও লেখকের একান্ত নিজস্ব