• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ১২:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ১২:৩২ এএম

জামাত-শিবির তাণ্ডবের দালিলিক তথ্য প্রকাশ করিতে হইবে

জামাত-শিবির তাণ্ডবের দালিলিক তথ্য প্রকাশ করিতে হইবে
জাগরণ গ্রাফিক্স ডেস্ক

বিগত তিন দশকের রাজনীতির নানা ঘাত-প্রতিঘাতকে প্রত্যক্ষ করিয়াছি। আমার বাড়ন্ত বয়স হইতে অদ্যাবধিকালের সমস্ত ঘটনার সাক্ষ্য বহন করিবার সাধ্যি আমার নাই। চোখের সামনে কত কিছুই না দেখিলাম। মৌলবাদী জামাতের হত্যাযজ্ঞ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রগ কাটিয়া অমানবিক নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনাগুলি মনে হইলে এখনও অন্তর জুড়িয়া এক তীব্র ভীতি গ্রাস করিতে চাহে। কতলবাজ ছাত্র শিবির নামের ছাত্র সংগঠনটি এদেশে যত মানুষ ও ছাত্র নেতাদের হত্যা করিয়াছে তাহার একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল প্রস্তুত করা অত্যাবশ্যক। স্বাধীন বাংরাদেশের ভূখণ্ডে তাহাদের তাণ্ডবলীলার চিত্রটি সমন্বিতভাবে কেন প্রকাশ করা হয় নাই- ইহা একটি বড় কিন্তুযুক্ত প্রশ্ন আমার নিকট। আশির দশকের উজ্জ্বল ছাত্রনেতাদের অনেকেই এখন মন্ত্রী পরিষদে সগর্বে পদচারণ করিয়া রাজনীতির খাতায় উজ্জ্বল আভা ধরিয়া রাখিয়াছেন। তাহারা যদি সামান্য একটু উৎসাহ দেখাইতে পারেন, তাহা হইলেই এই কাজটি সম্পন্ন করা কঠিন কিছু হইবে না। বিগত চল্লিশ বৎসরের সকল খতিয়ানকে তখন লিপিবদ্ধ আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হইবে। জামাত-শিবিরের তান্দবে যত নিরীহ ছাত্রনেতা শহীদ হইয়াছেন তাহাদের তালিকাটি দেখিয়া আমাদের তরুণ প্রজন্মও সত্য ইতিহাসের সন্ধান পাইবে। এই অতীব জরুরি কাজটি করিতে কি খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়িবে? না-কি ধরিয়া লইবো এই কাজটি করিতে মান্যবর মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে আগ্রহের যথেষ্ট অভাব রহিয়াছে।

বাদ থাক এই সমস্ত বাৎচিৎ। যাহা বলিতে চাহি তাহা সরাসরি বলাই বাহুল্য। কোনও ভূমিকা না করিয়া বলি ১৯৭৮-২০২০ সনের মধ্যে জামাত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে শহীদ সকল মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও ছাত্রনেতাদের হত্যাকাণ্ডের প্রামাণ্য দলিল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। সরকারি সাহায্য ছাড়া এহেন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক কাজ সাধন করা সহজ হইবে না। তাই সরকারকেই আগাইয়া আসিতে হইবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র শিবির এককভাবে বহু গুপ্ত ও প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করিয়াছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রদল তাহাদের মিত্র থাকিলেও বৃহত্তরভাবে ছাত্রদল জামাত-শিবিরের তাণ্ডবে অংশগ্রহণ করে নাই। বরং বিএনপি ও ছাত্রদলের সহিত আওয়ামীপন্থীদের সংঘর্ষে জামাত শিবির গোপনে প্রবেশ করিয়া হত্যাযজ্ঞ চালাইয়াছে। ইহার অসংখ্য তথ্য আমাদের অনেকেরই অজানা। পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসন্ধান করিয়া এই তালিকাটি প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি।

তাই দাবি করিয়াই নিবেদন করিতেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এমন একটি তথ্য বাতায়ন তৈরি করা জরুরি যাহার মধ্যে খুব সহজেই জামাত-শিবিরের তাণ্ডবে শহীদ ছাত্রনেতাদের নামের তালিকা, ঘটনার বিবরণ, বিচারিক তথ্য ও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত শিবির ক্যাডারদের নাম প্রকাশ পাইবে।

রাজনীতিতে জামাত-শিবির ইসলামকে যেভাবে ব্যবহার করিয়াছে, মুসলীম লীগও ততখানি চতুর ছিল না। কোমলমতি ছাত্রদের নিকট তাহারা নম্র-ভদ্র-সুশীল রূপ ধারণ করিয়া, শিষ্ঠাচার ও ধর্মীয় আলোকে জীবনাচার গড়িয়া তুলার দীক্ষা দিয়া নিজেদের আদর্শবাদী বলিয়া প্রমাণ করিয়াছিল। তাহাদের এই পরিশিলীত আচরণে কোমলমতি ছাত্রদের অনেকেই ইসলাম রক্ষা ও জীবনকে সৎভাবে যাপনের প্রেরণা পাইয়াছিল। তাহারা অনুভব করে নাই যে এই ভদ্র-নম্র-সুশীলদের ভিতর গুরুতর পাষণ্ড এক একটি পশু লুকাইয়া আছে। কোমলমতি তরুণ ছাত্রদের দলে লইতে তাহারা বহুবিদভাবে অর্থব্যয় করিত। নামাজ আদায়ে মসজিদে লইয়া যাইত। ইসলামী বই উপহার দিত। ইহা দেখিয়া বাড়ির অভিভাবকেরাও সুখী বোধ করিতেন। মনে করিতেন তাহার সন্তানটি সুনাগরিক হইতে চলিতেছে। কিন্তু মস্তক ধোলাই করিয়াই তাহাদের ‘জিহাদ’-এর জন্য প্রস্তুত করা হইত। বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলি এখনও প্রায় অভিন্ন কৌশল গ্রহণ করিয়াই ইসলাম কায়েম করিতেছে। তাহাদের কর্মকাণ্ড কিন্ত থামিয়া নাই। গোপনে গোপনে তাহারা সমস্ত চেষ্টাকে কাজে লাগাইয়া শক্তিধর হইতেছে। নানা স্থানে তাহাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে। হাইব্রিড নেতাদের সহিত কিছু কিছু জামাত-শিবির কর্মীও সরকারি দলে পোক্ত অবস্থান তৈরি করিতে সক্ষম হইয়াছে। তাহাদের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হইলে কি কি উপায়ে বা পন্থায় তাহারা নতুন রূপে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিবে সেই রূপরেখাও তাহারা বহুদিন পূর্বেই ঠিক করিয়া রাখিয়াছে।

সব দিক বিবেচনা করিয়া স্থির সিদ্ধান্তে আসিতে সময় লাগে। যখন সময় ঘনিয়া আসে তখন প্রতিকারের রাস্তাগুলি প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ হইয়া পড়ে। ফলে কিছুই করিবার সুযোগ থাকে না। তাই দাবি করিয়াই নিবেদন করিতেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এমন একটি তথ্য বাতায়ন তৈরি করা জরুরি যাহার মধ্যে খুব সহজেই জামাত-শিবিরের তাণ্ডবে শহীদ ছাত্রনেতাদের নামের তালিকা, ঘটনার বিবরণ, বিচারিক তথ্য ও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত শিবির ক্যাডারদের নাম প্রকাশ পাইবে।

 

লেখক  সাংবাদিক, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী।। 

দ্রষ্টব্যঃ- প্রকাশিত লেখাটি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত এবং এর দায়-দায়িত্বও লেখকের একান্ত নিজস্ব।  

জাগরণ/এসকেএইচ