• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০১৯, ১০:২১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৯:০৮ পিএম

বিশ্বে নারী সরকার প্রধান

মের্কেলের চেয়েও এগিয়ে শেখ হাসিনা

মের্কেলের চেয়েও এগিয়ে শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল

বর্তমানে বিশ্বে ১০ জন নারী নেতা রয়েছেন যারা নিজ নিজ দেশের সরকারপ্রধান। এর সঙ্গে যদি রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম যোগ করা হয়, এ সংখ্যা হবে ২৫। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তিনি ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করছেন। তার ঠিক পরেই আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন। তবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ হিসাব করলে দেশ পরিচালনায় তিনি মের্কেলকে পেছনে ফেলেছেন অনেক আগেই। 

অ্যাঙ্গেলা মের্কেল 

 অ্যাঙ্গেলা মের্কেল : 
২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। পাশাপাশি তিনি দেশটির কট্টর ডানপন্থি দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইইউনিয়ন (সিডিউই) এর দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ২০০০ সাল থেকে (২০১৮ এর নভেম্বর পর্যন্ত)। শুধু তাই নয়, ই্উরোপিয়ান ইউনিয়নের ছায়া-প্রধান (ডি ফ্যাক্টো লিডার) হিসেবেও সমাদৃত। আর এ কারণেই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবেও মের্কেলের নাম নেয়া হয়। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর সিডিইউ-এর বার্ষিক সম্মেলনে মের্কেল ঘোষণা দেন, তিনি আসন্ন নভেম্বরে দলীয় প্রধান নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং ২০২১ সালের জার্মানির জাতীয় নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 শেখ হাসিনা : 
শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন। সেবার ক্ষমতায় ছিলেন ১৫ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন নারীর এত লম্বা সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকা ইতিহাসের অন্যরকম এক মাইলফলক। ২০১৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় তার অবস্থান ২৬তম। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে দীর্ঘ রাজনৈতিক নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর আগে সেই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।  

এরনা সোলবার্গ 

এরনা সোলবার্গ : 
২০১৩ থেকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এরনা সোলবার্গ। সেই বছর ১৬ অক্টোবর তিনি দেশটির ২৮তম সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেন। এছাড়া ২০০৪ সালের মে মাস থেকে তিনি দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশটির ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

সারা কুগংগেলওয়া 

সারা কুগংগেলওয়া : 
এ তালিকায় সারার অবস্থানটি একটু অন্যরকম। বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী সারা নামিবিয়ার চতুর্থ এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সারাকে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হয় দেশটির প্রেসিডেন্ট হাগে গেইনগবের সঙ্গে। ২০১৫ সালের ২১ মার্চ তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

হিলদা হেইনে 

হিলদা হেইনে : 
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল আইল্যান্ডের ইতিহাসের অষ্টম এবং দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলদা হেইনে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। শুধু তার নিজের দেশেই নন, মাইক্রোনেশিয়ান অঞ্চলেরও প্রথম নারী সরকারপ্রধান। এছাড়া পুরো ওশেনিয়া অঞ্চলের চতুর্থ সরকারপ্রধান।

অং সান সু চি 

 অং সান সু চি : 
বিশ্বের নারী সরকারপ্রধানদের তালিকায় সু চির নাম নিয়ে অনেক আলোচনা থাকতে পারে। একজন সেনা সমর্থিত প্রেসিডেন্ট থাকা সত্ত্বেও দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা সু চি। যদিও ‘স্টেট কাউন্সিলর’ নামে একটি রাষ্ট্রীয় পদ তার রয়েছে। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই, তিনিই মিয়ারমারের চালিকাশক্তি। একটা সময়ে সামরিক জান্তা বিরোধী আন্দোলন করে বিশ্বজুড়ে যে খ্যাতি তিনি অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনে তা নিঃশেষ হয়ে গেছে। 

থেরেসা মে 

থেরেসা মে : 
ব্রেক্সিট ইস্যুর কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মাথায় চাপ নিয়েই যুক্তরাজ্যের অত্যন্ত সংকটাপন্ন সময়ে ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন থেরেসা মে। এই সময়টুকু বেশ শক্ত হাতে সামলে নিয়েছেন থেরেসা। বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে বৈঠক করার পর ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া পেছানোর তার প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাসও করিয়ে নিয়েছেন। হয়ত এ যাত্রা তিনি টিকেই যাবেন।

 আনা ব্রানাবিচ 

 আনা ব্রানাবিচ : 
২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন আনা ব্রানাবিচ। তিনি দেশটির ইতিহাসের প্রথম নারী এবং সমকামী প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিশ্বের সমকামী সরকারপ্রধানদের তালিকায় তার অবস্থান পঞ্চম। অবশ্য বর্তমানে বিশ্বে তিনিই একমাত্র লেসবিয়ান সরকারপ্রধান।

 জাসিন্ডা আরডের্ন

 জাসিন্ডা আরডের্ন : 
৩৭ বছর বয়সী জাসিন্ডা আরডের্ন নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী এবং ১৫০ বছরের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শাসক। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে মোটামুটি অপরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু গত ১৫ মার্চে ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এবং এর পরবর্তী সময়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তার সমর্থন ও মর্মস্পর্ষী বক্তব্য তাকে বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত করেছে।  

কাট্রিন জ্যাকপসটটির 

কাট্রিন জ্যাকপসটটির : 
৪৩ বছর বয়সী ভাষাবিদ কাট্রিন জ্যাকপসটটির আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল লেফ্ট গ্রিন মুভমেন্ট দলের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৩ সাল থেকে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। জোয়ানা সিয়োরোরটটিরের পর তিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।  

 ভায়োরিকা দানসিলা 

 ভায়োরিকা দানসিলা : 
রোমানিয়ার ৬৭তম প্রধানমন্ত্রী হলেও দেশটির প্রথম নারী সরকারপ্রধান ভায়োলিকা দানসিলা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি। এর পাশাপাশি ৫৫ বছর বয়সী ভায়োরিকা সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) দলের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি দেশটির একটি জ্বালানি তেলের প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন।

 মিয়া মটলি 

 মিয়া মটলি
বার্বাডোজের অষ্টম এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০১৮ সালের ২৫ মে। পাশাপাশি তিনি বার্বাডোজ লেবার পার্টির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে দ্বীপরাষ্ট্রটির অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।   

এছাড়া নেদারল্যান্ডসের রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দুটি দ্বীপরাষ্ট্র আরুবা ও সেন্ট মার্টিন এর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন ইভলিন ওয়েভার-ক্রোয়েজ ও লিওনা মারলিন-রোমেও। ইভলিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর এবং লিওনা দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি।  

বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা নারীদের মধ্যে আছেন লিথুনিয়ার দালিয়া গ্রাইসবাউসকাইতে (দায়িত্ব গ্রহণ : ১২ জুলাই ২০০৯), ক্রোয়েশিয়ার কলিন্দা গ্রেবার-কিটারোভিচ (দায়িত্ব গ্রহণ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫), নেপালের বিদ্য দেবী ভান্ডারি (দায়িত্ব গ্রহণ : ২৯ অক্টোবর ২০১৫), তাইওয়ানের শাই লিং-ওয়েন (দায়িত্ব গ্রহণ : ২০ মে ২০১৬), এস্তোনিয়ার কার্স্টি কালজুলেইদ (দায়িত্ব গ্রহণ : ১০ অক্টোবর ২০১৬), সিঙ্গাপুরের হালিমাহ ইয়াকুব (দায়িত্ব গ্রহণ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭), ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর পলা মে ইউকেস (দায়িত্ব গ্রহণ : ১৯ মার্চ ২০১৮), ইথিওপিয়ার সাহলি-ওয়ার্ক জেয়েদি (দায়িত্ব গ্রহণ : ২০ অক্টোবর ২০১৮) এবং জর্জিয়ার সালোমি জোরাবিচভিলি (দায়িত্ব গ্রহণ : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮)। 

৩১ মার্চ স্লোভাকিয়ায় নির্বাচনে জয়লাভ করে জুজানা কাপুতোভা দেশটির প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। শপথ নিলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদ শুরু হবে ১৫ জুন।

সুইজারল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী সুইস ফেডারেল কাউন্সিলের ৭ জন সদস্য দেশটির সবধরনের সাংবিধনিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। বর্তমানে এই কাউন্সিলে ৩ জন নারী সদস্য আছেন। এদের মধ্যে সিমোনেত্তা সোমারুগা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০১০ সালের ১ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব নিয়েছেন কারিন কেলার-সাটার ও ভায়োলা অ্যামহার্ড।   

এসজেড/ এফসি