• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০২:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০২:২২ পিএম

বিএনপিকে চাপে ফেলতে একাউন্ট স্থগিতের আদেশ, অভিযোগ বিএনপির 

বিএনপিকে চাপে ফেলতে একাউন্ট স্থগিতের আদেশ, অভিযোগ বিএনপির 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির নিজভী আহমেদ

বিএনপিকে চাপে ফেলতে সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে একটি কাল্পনিক ও মিথ্যা আবেদনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের ব্যাংক একাউন্ট স্থগিতের আদেশ করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, এটি একটি আষাঢ়ে গল্প। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যেভাবে সুসংগঠিত হচ্ছে, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সরকার ভীত হয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগ সামনে এনেছে। কারণ এখন সরকার যা বলে নিম্ন আদালত তাই করে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর যদি সরকারের নির্দেশ না মেনে কোনো বিচারক ন্যায় বিচার করেন তাহলে তাদেরকে দেশ ছাড়তে হয়, যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বিচারক মোতাহার হোসেন ও প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। 

তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার বলতে চাই, তারেক রহমানের কোনো অবৈধ অর্থ নেই। সেখানে তার যা অর্থ আছে তা ইনল্যান্ড রেভিন্যুতে ট্যাক্সপেইড অর্থ। সেদেশে আইনের শাসন রয়েছে, সুতরাং সেখানে আনডিসক্লোজড মানি ট্রানজেকশন হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও তাদের আন্দোলনের ফসলরা বারো বছর ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের কোনো সন্ধান পায়নি। অথচ ঢালাওভাবে তার বিরুদ্ধে কত যে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে অপপ্রচার করেছে সেটির ইয়াত্তা নেই। এখন দুদককে দিয়ে আরেকটি কুৎসা রটনার নতুন অধ্যায় শুরু করলো।
 
রিজভী বলেন, যুক্তরাজ্যের বিদ্যমান আইনে আইনসিদ্ধ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আদালতে হস্তক্ষেপের কোনো এখতিয়ার নেই। সুতরাং বাংলাদেশে যে অপরাজনীতি চলছে, এটা তারই প্রতিফলন। জিয়া পরিবারের প্রতি সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন এটি। সরকারের মদদে দুদক আদালতকে ব্যবহার করে যে আদেশ জারি করিয়েছে সেটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিএনপি।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবমূর্তিক ক্ষুন্ন করার জন্য হেন কাজ নেই যা এই জনভিত্তিহীন সরকার করছে না। একদিকে তারা তাদের অনুগত কিছু মিডিয়া দিয়ে প্রতিদিন জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে হাইপার প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। অন্যদিকে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জননেতা তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও কুৎসাই সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। তারেক রহমান বারবার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ তারা গ্রহণ করেনি। এই অবৈধ সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ কিছু বানোয়াট মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত দেখিয়েছে বিচার ও আইনের সকল নিয়ম কানুন লংঘন করে। এইসব মামলার এফআইআর বা চার্জশিটে তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমনকি একজন আসামিকে ৪শ দিনের অধিক রিমান্ডে মারপিট ও অত্যাচার করে অচেতন অবস্থায় একটি জবানবন্দি জোগাড় করলেও পরে তিনি কোর্টে তা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু আজ্ঞাবহ আদালত তা প্রত্যাহার না করে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত দেখিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেছে। এমনকি অন্য একজনের ফিনান্সিয়াল মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত করতে চাইলে একটি আদালত তারেক রহমানকে নির্দোষ রায় দেন। কিন্তু সেই রায় শেখ হাসিনার নির্দেশিত রায়ের বিপক্ষে যাওয়ায় বিচারককে শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে হয়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ষোড়শ সংশোধনীর রায় মনোপুত না হওয়ায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে তাকে অপমান অপদস্থ করে অস্ত্রের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপর বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার নামে যে দলীয় প্রভাবের বলয় তৈরি করা হয়েছে তা স্পষ্ট। সরকারের হুকুমের বাইরে গিয়ে কোনো বিচারকের ন্যায়বিচার করার সাহস এবং সুযোগ নেই।

রিজভী বলেন, মিডনাইট ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সাধারণত রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে অনেক সময় সরকার ধীরে ধীরে মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যায় বা তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি, জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তিনি বলেন, দেশে একটা প্রবাদ আছে এক কান কাটলে হাঁটে জঙ্গল দিয়ে, দুই কান কাটলে হাঁটে সবার সামনে দিয়ে। কারণ তখন তার লজ্জা শরম থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যে গোরস্থানের লাশও খিলখিল করে হেসে উঠবে। মিডনাইট সরকারের লোকদেরও এখন লজ্জা শরম নেই। তাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে লজ্জাবোধ হয়না। একাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও বিতর্কিত নির্বাচন। যে নির্বাচনে ভোটারদের দরকার পড়েনি। দরকার পড়েছে চতুস্পদী প্রাণীর। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন মিলে আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখে, ভোটের দিন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ দুরে রাখা হয়েছিল সাধারণ ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়ার জন্য। সে নির্বাচনের দৃশ্য দেশি ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় কিভাকে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে তা নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীনদের জানা থাকলেও এখন সেটি চেপে গিয়ে মুখস্থ মিথ্যা কথা বলছেন।

 জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ তামাম গণতান্ত্রিক বিশ্ব সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সে মিডনাইট ভোটের নির্বাচনের প্রশংসা করা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আগের রাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসন মিলে ব্যালটবাক্স ভর্তি করলো কেন ? একতরফা উপজেলা নির্বাচনে এখন ভোটাররা ভোট দিতে যায় না কেন ? প্রধানমন্ত্রী এর জবাব জনগণকে দিবেন কি?

টিএস/বিএস