• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৯, ০৩:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

ঢাবি কেন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই, ব্যাখ্যা দিলেন মঈন খান

ঢাবি কেন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই, ব্যাখ্যা দিলেন মঈন খান
ড. আবদুল মঈন খান ; ফাইল ফটো


লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই তার ব্যাখ্যা দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ব্যাখ্যা দেন। 

মঈন খান বলেন, এ র‌্যাঙ্কিংয়ের জরিপ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান, এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিংগাপুর এবং হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজির নাম। সার্বিকভাবে চীনের ৭২টি, ভারতের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩২টি, পাকিস্তানের ৯টি, এবং হংকংয়ের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। এমনকি নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এই র‌্যাঙ্কিংয়ের তালিকায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই তালিকায়।

মঈন খান বলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একসময় আমরা গর্ব করতাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার নাম এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও নেই। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই। কেন? সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন। 

কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় নেই তার ব্যাখ্যা দিয়ে মঈন খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম বা সিলেবাসসমূহ অনেক ডিপার্টমেন্টেই উন্নত বিশ্বের নামি-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয় না। 
 
আমরা সবাই জানি যে, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ মানসম্মত পাঠদানের জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে।  

এছাড়া দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটসহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি হরেক রকম রেফারেন্স বই এবং জার্নালের সম্ভার থাকতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারগুলোতে। ইলেক্ট্রনিক লাইব্রেরিতে পরিণত হয়েছে উন্নত বিশ্বের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলো।  অথচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি আজ পুরনো বইয়ের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে যেন পরিণত হয়েছে যেখানে জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কদাচিৎ পা ফেলে থাকে। 

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি স্কুলের পাঠদান পদ্ধতি থেকে ভিন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজো কেবলমাত্র পাঠ্যবই থেকে স্কুলের বাচ্চাদের যেভাবে পড়ানো হয়ে থাকে সেরকমই একমুখী লেকচারভিত্তিক পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের নামি দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একমুখী লেকচার দেয়া ছাড়াও ক্লাসরুমে ইন্টারএকটিভ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, গ্রুপ বা ইনডিভিজুয়াল এসাইনমেন্ট দেয়া হয়, সারপ্রাইজ কুইজ বা টেস্ট নেয়া হয়, গ্রুপ বা ইনডিভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন নেয়া হয়, মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের সহায়তা নিয়ে অডিও বা ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো হয়, শিক্ষকের নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক সেক্টরগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভিজিটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং বিশেষ করে দেশ বিদেশের নামি দামী অধ্যাপক ও প্রাসঙ্গিক সেক্টরের সফল পেশাজীবীদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে আনা হয়। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এইরকম আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত হয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়নি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চেপে বসা দুর্বল ও অযোগ্য অদক্ষ নেতৃত্বের কারণে। 

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়া এবং খাতা দেখার মত কাজের জন্য বাড়তি সময় দেয়ার কারণেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌলিক গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না।
  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনষ্ট হয়ে গেছে। একসময় অনেক বিদেশি ছাত্র ছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানামতে এই মুহূর্তে একজনও বিদেশি শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নাই। আমার জানামতে ভাষা ইন্সটিটিউটে পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন মিলিয়ে হাতেগানা কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। অন্য কোথাও কোন বিভাগে বিদেশি শিক্ষক বা গবেষকের দেখা বলতে গেলে মেলেই না। 

আরআই