• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ১০:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ০৯:৩৯ এএম

বিএনপির ইফতার রাজনীতিতে ভাটা

বিএনপির ইফতার রাজনীতিতে ভাটা

পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে প্রতি বছরই জমে ওঠে ইফতার রাজনীতি। ইফতার রোজার অন্যতম একটি অনুসঙ্গ হলেও বাংলাদেশে তা হয়ে ওঠে রাজনীতির ‘গুটি চালাচালি’র অন্যতম মাধ্যম। ইফতারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনীতির নতুন হিসাব-নিকাশ। ইফতার ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন ফায়দা হাসিলেরও প্রচেষ্টা লক্ষ্ করা যায়। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারের ‘ইফতার রাজনীতিতে’ তেমন একটা সরগরম দেখা যাচ্ছে না। 

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও প্রতিবছর ইফতার রাজনীতিতে বিএনপিকেই বেশি তৎপর দেখা যায়। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিএনপির ইফতার রাজনীতিও তেমন সরব নয়। মূলত দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় দলটির সবদিকেই চলছে অস্থিরতা। এর প্রভাব এবারের ইফতার রাজনীতিতেও দেখা গেছে।
 
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, রমজানের প্রথম দিনই রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এতিম, আলেম-ওলামা-মাশায়েখদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এটা দীর্ঘ প্রায় ৩৫/৩৭ বছর ধরে তিনি নিয়মিত আয়োজন করে আসছেন। কিন্তু এবার কারাবন্দি থাকায় তার পক্ষ থেকে এ ইফতারের রেওয়াজ চালু রাখা হলেও তা আগের মতো জৌলুসপূর্ণ হয়নি।
 
এছাড়া, খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ভেন্যুতে বিদেশি কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। এর বাইরে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো জাঁকজমকের সঙ্গে আয়োজন করে থাকে ইফতার মাহফিল। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের বাইরেও বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। 
খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিএনপির বেশিরভাগ ইফতার মাহফিলই হত রাজধানীর অতি অভিজাত এলাকার ব্যয়বহুল ভেন্যুতে। এর মধ্যে পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও, শেরাটন, ওয়েস্টিন, হোটেল পূর্বাণী ছাড়াও জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের এলডি-২ হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। 

শুধুমাত্র কূটনীতিকদের সম্মানে হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখান থেকে তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। বলতে গেলে এবারের মতো বিএনপির ইফতার রাজনীতিও আপাতত শেষের দিকেই। কার্যত ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল পরিচালনার কারণে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার বিএনপির ইফতার রাজনীতিও জমে ওঠেনি।

বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় অন্যান্য বছরের মতো ইফতার-রাজনীতি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই বললেই চলে। একইসঙ্গে জোট নেত্রী এবার কারাগারে থাকায় শরিকদের মধ্যেও ইফতার নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। যদিও দুএকটি দল ইতোমধ্যেই নিজেদের দলীয় ব্যানারে ইফতার পার্টি করেছে। আরও কয়েকটি দল সামনে করার ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসন কেন্দ্রিক। তারা দলীয় প্রধানকে অত্যন্ত ভালবাসেন। প্রতি বছর রমজানে চেয়ারপারসনের সঙ্গে নেতাকর্মীরা ইফতারে অংশ নেন। এবার তার অনুপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মন ভেঙে গেছে। মনে অনেক ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে রোজা পালন করছেন নেতাকর্মীরা। ম্যাডামের অনুপস্থিতিই এবার বিএনপির ইফতার পার্টির কমতির প্রধান কারণ।
 
ইফতার পার্টি কম হলেও তা চলছে জানিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, পবিত্র রোজার মাসকে আগেই সাংগঠনিক মাস ঘোষণা করা হয়েছে। দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ম্যাডাম থাকলে জমকালো যে ইফতার মাহফিল হতো সেটা হচ্ছে না। তবে ক্ষুদ্র পরিসরেও এ কার্যক্রম চলছে।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি এবারের ইফতার পার্টিতে প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। ম্যাডাম না থাকার কারণে দলের কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়বে- এটাতো স্বাভাবিক ব্যাপার। তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে, মানুষের হৃদয়ে প্রভাব পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। 

দলীয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর রমজানে খালেদা জিয়া থাকা অবস্থায় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল এবার সেটা নেই। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, খারাপ সময় যেকোনো সময় যেকোনো মানুষ বা দলের উপর আসতে পারে। যেভাবেই দেখি বিএনপিও একটা খারাপ সময় পার করছে। তবে এই খারাপ সময়টা খুব দ্রুতই কেটে যাবে। আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করব, ইনশাল্লাহ। 

টিএস/ বিএস