• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৯, ০২:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৪, ২০১৯, ০২:৪৯ পিএম

সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারেই হত্যা করতে চায় : ফখরুল 

সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারেই হত্যা করতে চায় : ফখরুল 

সরকার বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে কারাগারেই হত্যা করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (২৪ মে) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রাজনৈতিক কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিন না দিয়ে তাকে কারাবন্দি করে রেখেছে। চিকিৎসা না হলে যে পরিণতি হতে পারে বিএনপির চেয়ারপাসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার প্রতি সরকারের আচরণ অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
 
ফখরুল বলেন, সরকার এত দুর্বল কেন? রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে আইন আদালত ব্যবহার করা হচ্ছে। যেসব মামলায় জামিন পাওয়ার কথা তাও দিচ্ছে না। 
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন,  তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না।  আগে বাম হাত নাড়াতে পারতেন না,  এখন ডান হাতও নাড়াচাড়া করতে পারেন না। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের উচিত ছিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে বুলেটিন দেয়া।  কিন্তু আজ  পর্যন্ত তারা এমন কিছু করেনি। তারা কি খালেদা জিয়াকে জেলখানায় মেরে ফেলতে চাচ্ছে? আমি আবারও বলতে চাই তার যদি কোনো ক্ষতি হয় সেজন্য সরকার সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে।
 
বিএনপির এমপিদের শপথ নেয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় জড়িত কি না- এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কি একথা বলেছি? আমরা বলেছি, রাজনৈতিক ও বর্তমান পরিস্থিতি, গণতন্ত্র এবং আমাদের পার্টির স্বার্থে আমরা সংসদে গিয়েছি। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তির বিষয়ের সঙ্গে এটাকে কখনো জড়াইনি। সুতরাং সংসদে যাওয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই।
 
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন,  প্যারোলের  চিন্তার কি আছে? তার যে প্রাপ্য, সেই জামিনটা আমরা চাই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া তো মুক্তিযোদ্ধা বটেই। কারণ তার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা করার অপরাধে যদি তাকে জেলে থাকতে হয়, তাহলে কি তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন?
 
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই নিতে হবে।   
তিনি বলেন, আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমএমএমইউ) হাসপাতালে আনার আগে আমরা বলেছিলাম, খালেদা জিয়া আসতে চাচ্ছেন না। তিনি বাইরে থেকে চিকিৎসা করাতে চান। কিন্তু সেখানে তাকে চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি। কেনো দিচ্ছে না? যে মামলা তাকে সাজা দেয়া হয়েছে, সেই মামলায় তো তিনি জামিনযোগ্য। তিনি জামিন পেতে পারেন। সবাই পেয়েছে। কিন্তু আজকে খালেদা জিয়ার ব্যাপারে কেনো এই সিদ্ধান্ত !
 
খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে সরকার আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধী। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক, মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যেটাকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বলা হয়। আর ইনস্যুলিন নেয়ার পরও তার ডায়াবেটিস কমছে না। এই অবস্থায় একজন বয়স্ক নারীর কারাগারে কি পরিণতি হতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। আর আগে তিনি হাতের বাম কাঁধের ব্যথায় ভুগছিলেন। এখন সেটা ডান কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়েছে গেছে। যার ফলে তার হাতগুলো তিনি নাড়াতে পারছেন না। আর পা সোজা থাকলে তিনি বাঁকা করতে পারছেন না। তিনি কারো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। এছাড়া তার পেশীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে বা অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। 

ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন নিয়ে আমরা পরে বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া দেব।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, এম এ কাইয়ূম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টিএস/বিএস