• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৯, ০৭:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৪, ২০১৯, ০৭:৫২ পিএম

রাজনীতিকদের অভিমত

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএর নিরঙ্কুশ বিজয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ভারতের নির্বাচন ভালো হয়েছে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। এর ফলে উন্নয়ণ, অগ্রগতি আর আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ও ভারত আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করবে দেশ দুটি।

শুক্রবার (২৪ মে) দৈনিক জাগরণকে দেয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা এ মন্তব্য করেন। 

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির দৈনিক জাগরণকে বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই জয় একটা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। গত মোদী সরকারের সময় ৪/৫ বছরে আমরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। একটি হলো- ছিটমহল বিনিময়, আরেকটি হলো- সমুদ্র সীমা  চিহ্নিত করা। বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি যেন কমে আসে সেই চেষ্টা চলছে। এবার সেটা কমে আসতে পারে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যা কিছু করণীয় তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ভারতে মোদী সরকার গঠিত হলে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বাড়বে।  নরেন্দ্র মোদী যেহেতু গুজরাটের মানুষ, উনি বাণিজ্য-বিনিয়োগটা ভালো বোঝেন। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- দুই দেশের যেসব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা রয়েছে, তা নিরসন সহজ হতে পারে।  

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে আরও অনেক কাজ করবে- এমন আশা প্রকাশ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, সন্ত্রাসবাদ, যেটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সব সময় সোচ্চার এবং আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি, সেটা মোদী সাহেব সবসময় অভিনন্দন জানান। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন,  বিজেপির এই বিজয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। উন্নয়ন, অগ্রগতি আর আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ও ভারত আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করবে দেশ দুটি। তিনি আরো বলেন, পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করছে, এটা রাজনীতির ইতিহাসে অসাধারণ দৃষ্টান্ত  হয়ে থাকবে।

বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভারতের জনগণ টানা দ্বিতীয়বারের মতো তাদের দেশের শাসক হিসেবে নরেন্দ্র মোদির প্রতি আস্থা রেখেছে, সেই কারণেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। আমরা মোদির এ বিজয়কে সাধুবাদ জানাই। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিনন্দনও জানাই।

ড. রিপন বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ও দেশের জনগণের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা-ভারত যেন সব সময় আমাদের নিকট বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী হিসেবে থাকে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয় অমীমাংসিত আছে। নতুন সরকারের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে এসব বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তি করা। তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে পানি নিয়ে যে সমস্যা বিরাজমান তা ভারতের নতুন সরকারের মীমাংসা করা উচিত। বিশেষ করে তিস্তা পানি বণ্টন সমস্যা। এছাড়া, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেসব হত্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, তা শূন্যের কোঠায় আনা উচিত। এছাড়া, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অবাধে রপ্তানি করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক সামগ্রী সেদেশে প্রবেশে তারা বাধা তৈরি করে রেখেছে। আমরা প্রত্যাশা রাখি, তাদের মতো আমাদেরও অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভারতে কার্যকর গণতন্ত্র আছে। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়। যা বাংলাদেশে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, পানিবণ্টন বা সীমান্ত হত্যার মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও উভয় দেশের মধ্যে উপযুক্ত সমঝোতার মাধ্যমে সবসময় সমাধান সম্ভব। আমরা আশা করি ভারতের নতুন সরকার আমাদের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিক হবে। 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, নরেন্দ্র মোদী ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও সহযোগিতার সম্পর্কে অগ্রগতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তিনি নিরঙ্কুশ বিজয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহসহ বিজেপি ও বিজেপি জোটের শরিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের প্রতিও আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের দেশের কৃষক এখন ধানের দাম না পেয়ে মারা যাচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত। এটা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে চতুর্দিকে। ফলে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারিনি।  তিনি বলেন, ভারতবর্ষ এবং এ অঞ্চলের সকল মানুষের জন্য এখন দুর্দিন। এ অবস্থায় ভারত, বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের শোষিত, বঞ্চিত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আমাদের দেশেও গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ঝাণ্ডাকে শক্ত হাতে সমুন্নত রাখা একান্ত প্রয়োজন।

টিএস/এএইচএস /এফসি