• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৯, ০৯:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৫, ২০১৯, ০৮:২১ এএম

দ্বিমুখী রাজনীতিতে বিএনপি

দ্বিমুখী রাজনীতিতে বিএনপি

নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে দ্বিমুখি রাজনীতি করে আসছে বিএনপি। গেল কিছুদিনের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে বিএনপির দ্বিমুখী রাজনীতি স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। সর্বশেষ সংসদ সদস্য হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় শূন্য হয়ে পড়া বগুড়া-৬ আসনে নতুন নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়েও দলটির দ্বিমুখি রাজনীতি প্রকাশ্যে এসেছে।

এ বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান দৈনিক জাগরণকে বলেন, রাজনীতিতে দ্বিমুখিতা বলতে কিছু নেই। আপনাদের কাছে যা দ্বিমুখী আচরণ মনে হচ্ছে, তা রাজনীতিতে কৌশল হিসেবে সিদ্ধ। রাজনীতিতে সময় ও সুযোগ বুঝে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। সেই পদক্ষেপ অনেক সময় সফল হয়, অনেক সময় হয়তো ব্যর্থও হতে পারে। তাই দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ সত্য নয়।

জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ছেড়ে দেয়া বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দল থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, ওই নির্বাচনে অংশ নেবেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া জেলা বিএনপি ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে এ সিদ্ধান্ত দেন স্বয়ং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন বুধবার খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার নামে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক জি এম সিরাজ। খালেদা জিয়া ছাড়াও জি এম সিরাজ, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমানসহ অন্য ৩ জনের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করা হয়।

এরপর মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষরের জন্য বর্তমানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু খালেদা জিয়া মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন না।

অন্যদিকে, গত ১৫ মে চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক থাইল্যান্ডে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড যাওয়ার আগেই তিনি বগুড়া-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে জি এম সিরাজের মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করে যান। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপিদলীয় কোটায় প্রাপ্ত মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন দিয়ে যান।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এসব কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই। অথচ এখনও দলটি বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়ন দেয়ার নাটক মঞ্চস্থ করে যাচ্ছে।   

এদিকে নির্বাচনে গেলে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে, লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরতে পারবেন, নির্বাচন ন্যূনতম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ক্ষমতায়ও আসতে পারে বিএনপি- এমন স্বপ্ন নেতা-কর্মীদের দেখানো শুরু করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে। এই স্বপ্ন দেখিয়ে বিএনপিকে একটি অসম প্রতিযোগিতার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে সক্ষম হন দলের বড় একটি অংশ। অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে পুরনো মিত্র ২০ দলীয় জোট ছেড়ে হঠাৎ সখ্য গড়ে ওঠা বিপরীত আদর্শের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিগত নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বিএনপি মেতে থাকে ড. কামালের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্টে। যিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশে বসিয়ে সব সময় বঙ্গবন্ধুর গুণগান করতেই ব্যস্ত থাকেন বলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ।

সূত্র জানায়, দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর গভীর সঙ্কটে পড়া বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না, এমন ঘোষণা দিয়ে আসছিল; কিন্তু বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নেতারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বোঝাতে সক্ষম হন, নির্বাচনে অংশ নিলে তারা নিশ্চিত বিজয় অর্জন করবে। এমনকি খালেদা জিয়াকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানানো এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তারা। তাদের পরামর্শে প্রলুব্ধ হয়ে হঠাৎ করেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় বিএনপি হাইকমান্ড। একটি অংশ তখনও নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নে অটল থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। এমনকি তারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে এমন যুক্তিও তুলে ধরে। কিন্তু তাদের কোনও যুক্তি ও পরামর্শ শেষ পর্যন্ত টেকেনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেও বিএনপি নেতাদের বড় একটি অংশ বিরোধিতা করেছেন নির্বাচনে না যেতে। তাদের বক্তব্য ছিল- বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া মানে সরকারকে বৈধতা দেয়া। তখন এই অংশটি প্রশ্ন তুলেছিল- ঐক্যফ্রন্ট গঠন না করে ২০ দলীয় জোটকে শক্তিশালী করার জন্য। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য। যে দাবিটি গত কয়েক বছর ধরে করে আসছিল দলটি। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবসহ আরেকটি অংশ নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। দলের ঘরোয়া একটি কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঘোষণা দেন- সরকার হঠাতে প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গেও ঐক্য করার। কিন্তু ঐক্যর ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বিএনপি। নির্বাচনে গিয়ে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয় ঘটে বিএনপির। এ পরিস্থিতিতে ভোট ডাকাতির অভিযোগে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রস্তুতি নেয় বিএনপি। কিন্তু এ প্রক্রিয়াও এগিয়ে নিতে পারেনি দলটি। দলের অন্য একটি পক্ষ এসব বাদ দিয়ে বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে। দুপক্ষের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে দলে ভাঙনের দৃশ্য দিনদিন স্পষ্ট হচ্ছে। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, আমরা বারবার বলেছি, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনও নির্বাচনই হয় নি। এই নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। সুতরাং শপথ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। অথচ মহাসচিবসহ দলের নীতি-নির্ধারকদের এমন বক্তব্যের পরপরই বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

অপরদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়কারী এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন তারা জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছেন।

টিএস/এইউ/এসএমএম