• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০১৯, ১০:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১১, ২০১৯, ১০:১৭ পিএম

অবরুদ্ধ রিজভী আহমেদ

ছাত্রদলের অবরোধে রক্তারক্তির আশঙ্কা 

ছাত্রদলের অবরোধে রক্তারক্তির আশঙ্কা 
বিএনপির চার নেতা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেয় সাবেক ছাত্রনেতারা - ছবি : জাগরণ

ছাত্রদলের কমিটিতে বয়সসীমা কমাতে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়মিত কমিটি করতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রেখেছে সম্প্রতি বিলুপ্ত কমিটির নেতা ও তাদের অনুসারীরা। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল থেকে এ অবরোধকে কেন্দ্র করে আবারও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে চিকিৎসকদেরও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বয়সসীমা কমাতে আন্দোলনরত ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতা ও তাদের অনুসারী কর্মীরা।

অবরোধ চলা অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্থায়ী স্টাফ রফিকুল ইসলাম রফিক দৈনিক জাগরণের প্রশ্নের জবাবে জানান, এখনও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গেটে তালা লাগিয়ে অবস্থান নিয়ে আছে। তারা কাউকে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আমরা নিচে যেতে পারছি না।


 
অপর প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, স্যারের (রিজভী আজমেদ) শরীরে স্যালাইন চলছে। তিনি শয্যাশায়ী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা চিকিৎসকদেরও ভেতরে আসতে দিচ্ছে না। এমনকী তাকে হাসপাতালেও নেয়া যাচ্ছে না। অবরোধ এখনও অব্যাহত আছে।   

এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত ১০টার দিকেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রেখেছিল ছাত্রদলের বয়স্ক ও বিবাহিত নেতারা। ভেতরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তখনও অসুস্থ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন। 

ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না বলেন, রিজভী ভাই যদি কার্যালয় ছেড়ে না নামেন তাহলে আমরা তালা ভেঙে উপরে উঠবো। তিনি কার্যালয় ছেড়ে হাসপাতালে যান, সেখানে যদি তাকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয় সেই খরচ আমি দেব। আমি সামনে অ্যাম্বুলেন্স এনে রাখলাম। তবুও নোংরা রাজনীতি করতে দেব না।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানকারী রিজভী আহমেদের পেট ব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে বমিও হয় তার। পরে সোমবার থেকে তাকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। বিএনপিপন্থী কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক রিজভীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই রিজভীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক নেতারা আন্দোলন শুরু করলে হঠাৎ করেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন রিজভী আহমেদ। তাকে ভেতরে রেখেই আন্দোলনকারীরা বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। 

বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর একটি দাবিনামা দিয়েছিলাম। তা বাস্তবায়ন না করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ হঠাৎ কমিটি বাতিল করেছেন। তিনি ছাত্রদলের কমিটিতে থাকার জন্য ৩৫ বছর বয়স নির্ধারণ করেছেন, এটা বাতিল করতে হবে।

মামুন বিল্লাহ বলেন, এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিন শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছেন। আমাদের দাবিগুলো না মানলে এখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে।

একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১৫ জনকে পিটিয়ে বের করে দেন ছাত্রদলের বিদ্রোহীরা। যাদের বের করা হয়েছে বিএনপিতে তারা রিজভীপন্থী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দীর্ঘদিন (টানা প্রায় ২ বছর) ধরে অবস্থান করা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাদের অভিযোগ, রিজভী আহমেদ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে নিজের ঘর-বাড়িতে পরিণত করেছেন। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে টানা থেকে তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।  

কার্যালয়ের ভেতরের সূত্র দৈনিক জাগরণকে জানিয়েছে, রিজভী আহমেদের সঙ্গে অবরোধকারীদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। তিনি যদি সম্মানের সঙ্গে বের না হন, তাহলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামানোর হুমকিও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। 

দুপুরের দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং প্রশিক্ষণ বিষয় সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন। বিএনপির এই চার নেতা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরও বাধা দেয় সাবেক ছাত্রনেতারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের কমিটির বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়।

বিএনপির চার নেতাকে তারা বলেন, বয়সসীমা না করে ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি দিতে হবে। আর রুহুল কবির রিজভী একাই দুটি পদ নিয়ে অফিসকেই বাড়ি-ঘর বানিয়েছেন। তাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান।

এসময় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী কার্যালয়ে ভিতরে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাতে অসম্মতি জানান। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এ্যানীকে ধাক্কাও মারে বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা। 

কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে নেতারা বিএনপি অফিসের নিচে দলের বিক্রয় কেন্দ্রে বসতে চাইলে সেখানেও তাদের বসতে বাধা দেয়া হয়। একপর্যায়ে অবরোধকারীরা বিক্রয় কেন্দ্রের শাটার বন্ধ করে দেয়।

এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দল থেকে দেয়া হয়েছে। আমরা সবাই বসে এটা কার্যকর করব। দুঃখ ও অভিমান থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। সবার দুঃখ ও বেদনা আমরা শুনবো এবং তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানাব। 

সর্বশেষ জানা গেছে, একদিনের জন্য ছাত্রদলের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের দাবি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরোধের পরিস্থিতি নিয়ে রাতে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। 

বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ দৈনিক জাগরণকে জানান, আমাদের দাবি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তারা আমাদের দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। আশাকরি তা বাস্তবায়ন হবে।

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া রাসেল দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিনিয়ররা আমাদের বলেছেন, বিএনপি অফিসে তালা দিলে সারা দেশে দল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা যায়। কারণ অফিসে তালা দেয়া মানে পুরো বিএনপিকেই তালাবদ্ধ করা। তারা অনুরোধ করেছেন তালা খুলে দেয়ার। আমরা সাড়া দিয়ে অফিস ওপেন করে দিলাম। দাবি না মানা হলে আন্দোলন চলবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে।

ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। তাদের ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোনো বছরে এসএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

টিএস/ এফসি